আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য গরু ছাগলের কোনো সঙ্কট তৈরি হবে না বলে দাবি করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তার দাবি, বর্তমানে কোরবানি উপযোগী ৩০ লাখ গরু-মহিষ ও ৬৯ লাখ ছাগলের মজুদ রয়েছে। এটা চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি। কিন্তু মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালের তথ্য বলছে অন্য কথা। তাদের দাবি, এবার কোরবানির জন্য গরু ও মহিষ পর্যায়ের পশু প্রয়োজন হবে ৪০ লাখ কিন্তু দেশীয় উৎপাদন থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হবে ৩৫ লাখ। সে হিসাবে বাকি ৫ লাখ পশুর সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সারাদেশে গরু ও মহিষের সংখ্যা ২ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে প্রজননক্ষম গাভী বা বকনার সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বাকি রইল ১ কোটি ৩০ লাখ। এর মধ্যে বাছুরের সংখ্যা ৬৫ লাখ। অবশিষ্ট ৬৫ লাখের মধ্যে ৩০ লাখ হৃষ্টপুষ্ট। এসবই কোরবানি দেয়ার যোগ্য। এছাড়াও অনেকে গাভী কোরবানিও দিয়ে থাকেন, তাই সেখান থেকেও ৫ লাখের মতো কোরবানি যোগ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া দেশে মোট ছাগলের সংখ্যা ২ কোটি ৫৬ লাখ। আর ভেড়ার সংখ্যা ৩২ লাখ। অর্থাৎ বর্তমানে মোট ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ২ কোটি ৮৮ লাখ। এর মধ্যে বছরে জবাইযোগ্য ছাগল-ভেড়া ১ কোটি ৩৮ লাখ। যেখানে কোরবানির জন্য রাখা হয়েছে ৬৯ লাখ।
অবশ্য কোরবানি ঈদে বাংলাদেশের গরু-মহিষের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হতো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। কিন্তু হিন্দু মৌলবাদীদের দাবির মুখে ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশিদেরও গোমাংস ভক্ষণ থেকে বিরত রাখার প্রয়াসে গরু রপ্তানি বন্ধ করতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে বিজেপি সরকার। আর এ কারণেই এবারের কোরবানিতে গরু সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালের যুগ্ম-সচিব আলী নূর। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘চলতি বছর কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট হবে না। কারণ যে ৫ লাখ পশু সঙ্কটের কথা বলা হয়েছে তাও এ দেশের কৃষকের কাছে আছে। আসলে সঠিক পরিসংখ্যান সব সময় আসে না। অর্থাৎ ৩৫ লাখ গরুর বাইরেও কোরবানি দেয়ার মতো গরু-মহিষ দেশে আছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে গরু ও মহিষে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া কৃষকেরও স্বার্থ দেখতে হবে, তারা যেন ন্যায্য মূল্য পায়। তা না হলে কৃষক পশু পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।’
এদিকে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু নিয়ে ভারত হতাশ করলেও নিরাশ করেনি মিয়ানমার। ইতিমধ্যে দেশটি থেকে পাঁচ হাজারের বেশি পশু আমদানি করা হয়েছে। ঈদের পূর্বে আরো ১০ হাজারেরও বেশি পশু আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর হয়ে আসছে এসব গরু, মহিষ ও ছাগল।
টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বাংলামেইলকে জানান, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করিডোর হয়ে চার হাজার ১৯৪টি গরু, মহিষ ও ছাগল আনা হয়েছে। এসব পশু থেকে রাজস্ব পাওয়া গেছে ২০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এর পূর্বে গত বছর মিয়ানমার থেকে পশু আনা হয় ২৫ হাজারের মতো।
করিডোর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বাংলামেইলকে জানান, সেপ্টেম্বরের চার দিনে এক হাজারের মতো পশু আমদানি করা হয়েছে। ঈদের আগে আরো ১০ হাজার পশু আমদানির লক্ষ্য রয়েছে।
গরু ব্যবসায়ী আবু সৈয়দ বাংলামেইলকে জানান, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি ক্রমাগত বাড়ছে। এসব পশুর মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো হচ্ছে এসব পশু।
তবে মিয়নমার থেকে বর্তমানে গরু আনা হলেও কোরবানির চাহিদার তুলনায় তা খুবই সামান্য। মূলত ওইসব গরু প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতেই শেষ। তাই কোরবানির সঙ্কট মেটাতে শেষমেষ ভারতের দিকেই তাকাতে হবে বাংলাদেশকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘আসলে কোরবানির জন্য যে হিসাব মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে তার সঙ্গে আরো ৫ লাখ যোগ হবে। সেই সঙ্গে এবার হয়তো কিছুসংখ্যক পশুর সঙ্কট হবে, আবার নাও হতে পারে। কারণ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত থেকে কিছু সংখ্যক গরু আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকেও আসবে। কাজেই সঙ্কট হবে না।’
এদিকে ২০১৪ সালে সর্বমোট পশু কোরবানি দেয়া হয়েছিল ৭০ লাখ ১৪ হাজার ১১৫টি। এর মধ্যে ষাঁড় বা বলদের সংখ্যা ৩৬ লাখ ২১ হাজার ২৮২টি, গাভী ও বকনার সংখ্যা ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৬টি, ছাগল ও ভেড়া ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯৩টি এবং অন্যান্য ৬৩ হাজার ৫৩৪।
২০১৩ সালে গরু, মহিষ ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি মিলেয়ে সর্বমোট কোরবানি দেয়া হয়েছিল ৬৫ লাখ ৩৯ হাজার ২০৮টি। আর ২০১২ সালে মোট কোরবানি দেয়া হয়েছিল ৫৭ লাখ ৫২ হাজার ৪০টি পশু।
আর এবার কোরবানির জন্য গরু ও মহিষের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ। এছাড়া ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য রাখা হয়েছে ৬৯ লাখ।