হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে পুরুষ ফুটবল যেখানে ক্রমেই নামছে, সেখানে উঠে দাঁড়াচ্ছে মেয়েদের ফুটবল। ২০১৭ সালের শেষের দিকে এসে বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবল ইঙ্গিত দিল, ফুটবলের পতাকা উঁচু করে তুলে ধরার দায়িত্ব তারাই নিয়েছে।
বছরের শেষ দিকে এসে বয়সভিত্তিক ফুটবলে মেয়েদের বিরাট সাফল্য। গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার মাঠে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এরই মধ্যে এই মেয়েদের নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। কাল বাফুফে ভবনে মেয়েদের ডেকে নিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছেন। এই দলটাকে তৈরি করতে চান অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলানোর জন্য। এ জন্য চার বছরের একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে চান। আগামী বছর নতুন করে শুরু করতে চান মেয়েদের পেশাদার ফুটবল লিগ।
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দল প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ২০০৫ সালের এপ্রিলে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ মহিলা ফুটবলে গুয়াম, হংকং ও জাপানের সঙ্গে সেবার ‘বি’ গ্রুপে খেলেছিল
বাংলাদেশ সর্বশেষ ঘোষিত র্যাংকিংয়ে পুরুষ ফুটবলের অবস্থান ১৯৭তম। এই কদিন আগে খবরটা পেয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। অথচ নারী ফুটবলে চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। র্যাংকিংয়ে ওপরের দিকে উঠছে, আর মাঠেও দারুণ কিছু সাফল্য পেয়েছে তারা। বিশেষ করে বছরের শেষটা রাঙিয়ে দিয়েছে মেয়েরা, সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলের শিরোপা জিতে।
বিশেষ করে বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দিয়েছে। এই কদিন আগে ঘরের মাঠে এই সাফল্য পেয়েছে তহুরা-মাহমুদরা। ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে আসরের শিরোপা জিতেছে নারী ফুটবল দল। ফুটবলে শত হতাশার মাঝেও এ যেন অন্যরকম এক খুশির বার্তা।
শুধু এই আসরেই নয়, এর আগে বছরের শুরুতেও নারী জতীয় দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিল। গত জানুয়ারিতে শিলিগুড়িতে ভারতের কাছে যদিও শিরোপা হাতছাড়া করেছিল তারা। জাতীয় দল ভারতকে হারাতে না পারলেও বাংলাদেশের কিশোরীরা ঠিকই দেশকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
অবশ্য কিছুটা ব্যর্থতা ছিল গত সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে। সে আসরের মূল পর্বে বাংলাদেশ তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই হেরেছিল। উত্তর কোরিয়ার কাছে ৯-০, জাপানের সঙ্গে ৩-০ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-২ গেলে হেরে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে শক্তিশালী এই দলগুলোর সঙ্গে মূল পর্বে খেলাটাও কম ছিল না বাংলাদেশের জন্য।
অবশ্য এই ব্যর্থতার বাইরে সাফল্যও ছিল নারী দলের, তার প্রমাণ ফিফা র্যাংকিংয়ে উন্নতি। যেখানে পুরুষ দলের র্যাংকিং ২০০ ছুঁই ছুঁই, সেখানে মেয়েদের র্যাংকিং সেরা ১০০তে।
মেয়েদের তুলনায় বাংলাদেশের পুরুষদের ফুটবল তলানিতে। গত বছর অক্টোবরে শক্তিশালী একটা ভূমিকম্প নীরবে আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশের ফুটবলে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ফিরতি প্লে-অফে ভুটানের সঙ্গে ৩-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে পুরুষ বলারদের খোঁজ মিলছেনা বললেই চলে।
আগামী ২০১৯ এশিয়ান কাপের মূল বাছাইপর্ব খেলা হবে না বাংলাদেশের। আগামী তিন বছর ফিফা-এএফসির ম্যাচ মিলবে না। যা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য হতাশারই বটে। ১৯৭৩ সাল থেকে ফিফার সদস্য হওয়ার পর থেকে এতটা বাজে অবস্থা কখনোই ছিল না বাংলাদেশের।
অথচ আশির দশকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি দল হিসেবেও খ্যাতি ছিল। সেই বাংলাদেশের র্যাংকিং এখন ১৯৭। ভাবতে অবাকই লাগে, বাংলাদেশের ওপরে আছে ভুটান!
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে র্যাংকিংয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ভারত। ৩২০ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে ১০৫তম স্থানে। এরপর আফগানিস্তান (১৪৮), মালদ্বীপ (১৫৫), নেপাল (১৭১) ও ভুটান (১৮৭)।