ঢাকা ০৩:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জঙ্গল বাঁচিয়ে কফির চাষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩৯৩ বার

চা বাগানের মতো কফি চাষের ক্ষেত্রেও শেড ট্রি ছায়া দেয়৷ উত্তর পেরুর শামপুইয়াকু অঞ্চলে কফিঝোপের পাশে নানা ধরনের গাছ লাগানো হচ্ছে, শুধু ছায়া দেয়ার জন্য নয়, টুরিস্টদের মন কাড়ার জন্যও৷

পেরুর উত্তরে মূলত কফি চাষ করা হয়৷ বিশেষ করে বিশ্ববাজারে কফির দাম যখন বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে৷

শামপুইয়াকু পৌর এলাকায় এককালে চার হাজার হেক্টার জঙ্গল ছিল, জঙ্গল বলতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য৷ আজ সেই বনভূমির মাত্র ছয় শ’ হেক্টার উদ্বৃত্ত৷ শামপুইয়াকু অঞ্চল আজ আইইউসিএন অর্থাৎ ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার’ সংগঠনের একটি অরণ্য সংরক্ষণ প্রকল্পের অঙ্গ৷

সংরক্ষণ
কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালের আলোন্সো কাস্ত্রো বলেন, ‘‘আমরা বর্তমানে যা করছি – যেহেতু আমরা একদিকে অরণ্য সংরক্ষণে আগ্রহী, সেই কারণে আমরা কফি চাষিদের অন্যান্য নানা পদ্ধতি শেখাচ্ছি, যাতে তারা জঙ্গল না কেটে কিংবা পুড়িয়ে আরো বেশি পরিমাণে উচ্চ মানের কফি ফলাতে পারেন৷”

গ্রামের মহিলারা কফির আবাদের দিকে চলেছেন৷ তারাই প্রথম অরণ্য সংরক্ষণের কাজে শামিল হয়েছেন, রাসায়নিক সারের বদলে প্রকৃতিজাত সার ব্যবহার করা শুরু করেছেন৷ এভাবে ফসল বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন৷ পুরুষরাও স্বভাবত এই সাফল্যে উদ্বুদ্ধ৷

শামপুইয়াকুর অধিবাসী এলিতা তিঙ্গাল বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের আগে জঙ্গলের অবস্থা ভালো ছিল না৷ যা পাওয়া যায়, যেটুকু পাওয়া যায়, সব আমরা জঙ্গল থেকে নিতাম৷ আজ আমরা অন্যভাবে কাজ করি, জঙ্গলকে কিছু কিছু ফেরতও দিই৷”

গাঁয়ের মোড়ল টোমাস ওয়াহাহাই টুভিটস অতিথিদের তার ‘জঙ্গল কিন্ডারগার্টেন’ দেখাতে ভালোবাসেন৷ অন্য সব চাষির মতো তার বাড়ির পিছনেই কফিগাছ লাগিয়েছেন৷ কফিঝোপের পাশে কচি কচি গাছের চারা লাগানো হয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক৷ এগুলো কফিগাছের পাশাপাশি বেড়ে উঠবে৷

মোড়ল বলেন, ‘‘মানুষজনকে গাছ লাগাতে রাজি করাতে, তার সুবিধা বোঝাতে, খুব বেগ পেতে হয়েছে৷ আমরা সবার সাথে কথা বলেছি৷ আজ ক্রমেই আরো বেশি মানুষ তাই করছেন, কফি চাষের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগাচ্ছেন৷ পরে এই গাছগুলোই কফি বাগানে ছায়া দেবে৷”

মহিলা মহল
পৌরভবনে গাঁয়ের মহিলারা জঙ্গল থেকে কলা, আম, মুলো, নারকেল বিভিন্ন ফল নিয়ে আসেন৷ তারা কম বয়সী মেয়েদের বোঝান, এই সব ফল দিয়ে কী করা যায়, বনজঙ্গল ঠিক থাকলে তা থেকে কতো রকমের খাবার পাওয়া যায়, রোজগারের পথ খোলে৷ নানি-দাদির ঐতিহ্য এ ভাবে বেঁচে-বর্তে থাকছে৷ সেটাও প্রকল্পের অঙ্গ৷

কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালের আলোন্সো কাস্ত্রো বলেন, ‘‘আমরা এখানে প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছি, জমির ক্ষয় রোধ করা, জঙ্গলের সুযোগ-সুবিধাগুলোর সদ্ব্যবহার করা৷ ফলমূল, চিকিৎসার জন্য জড়িবুটি, ঔষধি৷ তা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাই লাভবান হন৷”

পৌরভবন থেকে বিশ মিনিট পায়ে হেঁটে নারানহিয়ো নদী৷ নদীতীরের ঘন জঙ্গল বহুদিন আগেই উধাও হয়েছে৷ নদীর স্রোতে পাড় ভাঙছে, কেননা গাছেদের শিকড়বাকড়ই মাটিকে ধরে রাখে৷

আলন্সো কাস্ত্রো এখানেও প্রচুর গাছ লাগিয়েছেন নদীতীরের খেতগুলোর ঠিক মাঝখানে৷ শুধু গাছই নয়, সেই সাথে প্রচুর ঝোপঝাড়৷ আলোন্সো বলেন, ‘‘এই ঝোপগুলো এখানে জমিটাকে ধরে রেখেছে, কেননা ওদের শিকড় বহু গভীর পর্যন্ত যায়৷ সেই সাথে আমরা এই ছোট গাছগুলোকে রেখেছি৷ ছোট গাছগুলো একা মাটির ক্ষয় রুখতে পারে না – সে কাজের জন্য ওরা এখনো বড়ই ছোট৷”

পর্যটন
টুরিস্ট গাইড হোসে ক্রুস ইয়াতাসের কফির চাষ আছে৷ হোসে এক পরিচিত লোকের কাছ থেকে কয়েক হেক্টার জমি ইজারা নিয়েছেন এবং সেখানে কফি ও কলাগাছ লাগিয়েছেন৷ এ সব গাছপালা তার নিজের লাগানো৷ গাছপালা লাগানো যাবৎ ফসল বেড়েছে, জানালেন হোসে৷ তিনি বলেন, ‘‘টুরিজম আজ সান মার্তিনের আশেপাশের এলাকার মানুষজনের পক্ষে একটা বিরাট লাভ, এখানকার সবার জন্যেই৷ টুরিস্টরা আজকাল বেশি করে আসছেন, এমনকি বিদেশ থেকেও৷ তারা পয়সা খরচ করেন, যা থেকে এখানকার মানুষজনের সত্যিই সাহায্য হয়৷”

কিন্তু হোসের টুরিস্টরা শুধু ততোদিনই আসবেন, যতোদিন বনজঙ্গল ভালো থাকবে৷

সূত্র : ডয়চে ভেল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জঙ্গল বাঁচিয়ে কফির চাষ

আপডেট টাইম : ০৯:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

চা বাগানের মতো কফি চাষের ক্ষেত্রেও শেড ট্রি ছায়া দেয়৷ উত্তর পেরুর শামপুইয়াকু অঞ্চলে কফিঝোপের পাশে নানা ধরনের গাছ লাগানো হচ্ছে, শুধু ছায়া দেয়ার জন্য নয়, টুরিস্টদের মন কাড়ার জন্যও৷

পেরুর উত্তরে মূলত কফি চাষ করা হয়৷ বিশেষ করে বিশ্ববাজারে কফির দাম যখন বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে৷

শামপুইয়াকু পৌর এলাকায় এককালে চার হাজার হেক্টার জঙ্গল ছিল, জঙ্গল বলতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য৷ আজ সেই বনভূমির মাত্র ছয় শ’ হেক্টার উদ্বৃত্ত৷ শামপুইয়াকু অঞ্চল আজ আইইউসিএন অর্থাৎ ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার’ সংগঠনের একটি অরণ্য সংরক্ষণ প্রকল্পের অঙ্গ৷

সংরক্ষণ
কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালের আলোন্সো কাস্ত্রো বলেন, ‘‘আমরা বর্তমানে যা করছি – যেহেতু আমরা একদিকে অরণ্য সংরক্ষণে আগ্রহী, সেই কারণে আমরা কফি চাষিদের অন্যান্য নানা পদ্ধতি শেখাচ্ছি, যাতে তারা জঙ্গল না কেটে কিংবা পুড়িয়ে আরো বেশি পরিমাণে উচ্চ মানের কফি ফলাতে পারেন৷”

গ্রামের মহিলারা কফির আবাদের দিকে চলেছেন৷ তারাই প্রথম অরণ্য সংরক্ষণের কাজে শামিল হয়েছেন, রাসায়নিক সারের বদলে প্রকৃতিজাত সার ব্যবহার করা শুরু করেছেন৷ এভাবে ফসল বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন৷ পুরুষরাও স্বভাবত এই সাফল্যে উদ্বুদ্ধ৷

শামপুইয়াকুর অধিবাসী এলিতা তিঙ্গাল বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের আগে জঙ্গলের অবস্থা ভালো ছিল না৷ যা পাওয়া যায়, যেটুকু পাওয়া যায়, সব আমরা জঙ্গল থেকে নিতাম৷ আজ আমরা অন্যভাবে কাজ করি, জঙ্গলকে কিছু কিছু ফেরতও দিই৷”

গাঁয়ের মোড়ল টোমাস ওয়াহাহাই টুভিটস অতিথিদের তার ‘জঙ্গল কিন্ডারগার্টেন’ দেখাতে ভালোবাসেন৷ অন্য সব চাষির মতো তার বাড়ির পিছনেই কফিগাছ লাগিয়েছেন৷ কফিঝোপের পাশে কচি কচি গাছের চারা লাগানো হয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক৷ এগুলো কফিগাছের পাশাপাশি বেড়ে উঠবে৷

মোড়ল বলেন, ‘‘মানুষজনকে গাছ লাগাতে রাজি করাতে, তার সুবিধা বোঝাতে, খুব বেগ পেতে হয়েছে৷ আমরা সবার সাথে কথা বলেছি৷ আজ ক্রমেই আরো বেশি মানুষ তাই করছেন, কফি চাষের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগাচ্ছেন৷ পরে এই গাছগুলোই কফি বাগানে ছায়া দেবে৷”

মহিলা মহল
পৌরভবনে গাঁয়ের মহিলারা জঙ্গল থেকে কলা, আম, মুলো, নারকেল বিভিন্ন ফল নিয়ে আসেন৷ তারা কম বয়সী মেয়েদের বোঝান, এই সব ফল দিয়ে কী করা যায়, বনজঙ্গল ঠিক থাকলে তা থেকে কতো রকমের খাবার পাওয়া যায়, রোজগারের পথ খোলে৷ নানি-দাদির ঐতিহ্য এ ভাবে বেঁচে-বর্তে থাকছে৷ সেটাও প্রকল্পের অঙ্গ৷

কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালের আলোন্সো কাস্ত্রো বলেন, ‘‘আমরা এখানে প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছি, জমির ক্ষয় রোধ করা, জঙ্গলের সুযোগ-সুবিধাগুলোর সদ্ব্যবহার করা৷ ফলমূল, চিকিৎসার জন্য জড়িবুটি, ঔষধি৷ তা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাই লাভবান হন৷”

পৌরভবন থেকে বিশ মিনিট পায়ে হেঁটে নারানহিয়ো নদী৷ নদীতীরের ঘন জঙ্গল বহুদিন আগেই উধাও হয়েছে৷ নদীর স্রোতে পাড় ভাঙছে, কেননা গাছেদের শিকড়বাকড়ই মাটিকে ধরে রাখে৷

আলন্সো কাস্ত্রো এখানেও প্রচুর গাছ লাগিয়েছেন নদীতীরের খেতগুলোর ঠিক মাঝখানে৷ শুধু গাছই নয়, সেই সাথে প্রচুর ঝোপঝাড়৷ আলোন্সো বলেন, ‘‘এই ঝোপগুলো এখানে জমিটাকে ধরে রেখেছে, কেননা ওদের শিকড় বহু গভীর পর্যন্ত যায়৷ সেই সাথে আমরা এই ছোট গাছগুলোকে রেখেছি৷ ছোট গাছগুলো একা মাটির ক্ষয় রুখতে পারে না – সে কাজের জন্য ওরা এখনো বড়ই ছোট৷”

পর্যটন
টুরিস্ট গাইড হোসে ক্রুস ইয়াতাসের কফির চাষ আছে৷ হোসে এক পরিচিত লোকের কাছ থেকে কয়েক হেক্টার জমি ইজারা নিয়েছেন এবং সেখানে কফি ও কলাগাছ লাগিয়েছেন৷ এ সব গাছপালা তার নিজের লাগানো৷ গাছপালা লাগানো যাবৎ ফসল বেড়েছে, জানালেন হোসে৷ তিনি বলেন, ‘‘টুরিজম আজ সান মার্তিনের আশেপাশের এলাকার মানুষজনের পক্ষে একটা বিরাট লাভ, এখানকার সবার জন্যেই৷ টুরিস্টরা আজকাল বেশি করে আসছেন, এমনকি বিদেশ থেকেও৷ তারা পয়সা খরচ করেন, যা থেকে এখানকার মানুষজনের সত্যিই সাহায্য হয়৷”

কিন্তু হোসের টুরিস্টরা শুধু ততোদিনই আসবেন, যতোদিন বনজঙ্গল ভালো থাকবে৷

সূত্র : ডয়চে ভেল