কৃষকরা অধিক জমিতে শীতে লাউ চাষ করেছেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ “হিম হিম শীত শীত, শীত বুড়ি এলোরে, কনকনে ঠান্ডায় দম বুঝি গেলোরে”। কবিতাটা ছোটবেলায় পড়েননি, এমন মানুষ খুব কমেই পাওয়া যাবে। কনকনে ঠান্ডায় লাউসহ নানাজাতের তরকারিই যেন শীতের বিশেষ উপহার।

খনার বচনে আছে লাউয়ের বন্দনা, ‘উঠান ভরা লাউ-শসা, ঘরে তার লক্ষীর দশা’। লাউ নিয়ে গান গাওয়ায় বাংলার বাউলদের ভালোবাসা প্রকাশ পায় সেকথা সবারই জানা।

বাঙালির খাদ্যতালিকায় লাউয়ের কদর অনেক। কত কিছু দিয়েই তো লাউ রান্না করা যায়। কচি লাউ- মাছের মাথা কিংবা চিংড়ি দিয়ে। এসব খাবারে অরুচি আছে এমন বাঙালি পাওয়া ভার।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল, নিগুয়ারী, টাঙ্গাব ও পাঁচবাগ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ শীত লাউয়ের চাষ হয়েছে। এখন মাঠে যেমন সবুজের সমারোহ, তেমনি উপজেলার হাট-বাজারগুলো ভরে যাচ্ছে শীতের  সবজি লাউয়ে। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজার দর ভাল হওয়ায় লাউ চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে।

চাষীরা জানান, বাজার পড়ে না গেলে অন্তত ৫শতাধিক লাউ চাষীদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে।
জানা যায়, গত ইরি ও আমন মৌসুমে উৎপাদিত ধানের দাম কম থাকায় স্থানীয় কৃষকরা এবার অধিক জমিতে শীতে লাউ চাষ করেছেন। লাউয়ের প্রত্যাশিত বাজার দর এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে উপজেলায় লাউ চাষ বেশি হয়েছে। উৎপাদন খরচ এবং আবহাওয়া দুটোই কৃষকের অনুকূলে থাকায় প্রয়োজনীয় পরিচর্যার কারণে শীত লাউয়ের বাম্পার ফলনে খুশি উপজেলার কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস তথ্যমতে, এ মৌসুমে উপজেলায় ১৮০ হেক্টর  জমিতে শীত লাউ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চাষ হয়েছে ২০০ হেক্টর জমিতে। শীত লাউ চাষে তেমন খরচ নেই বলে এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে অনেক কৃষক।

সরেজমিনে উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের টেকিরচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লাউ চাষে সফল কৃষক আলাল, রাসু, হাসেন, নাছির খা ও নিধিয়ার চর গ্রামের মফিজ উদ্দিন বেপারী আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন।

লাউ চাষী নাছির খা জানান, এবার তিনি এক একর জমিতে লাউ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ৪০ হাজার টাকা লাউ বিক্রি করেছেন। আশা করছেন অন্তত আরো ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন।

মফিউ উদ্দিন জানান, এবার লাউয়ের বাজার খুবই ভাল। ৪ থেকে সাড়ে ৪ কেজি ওজনের একেকটি লাউ ৫০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দাম অব্যাহত থাকলে অসংখ্য লাউ চাষীর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। বদলে যাবে জীবনযাত্রার মান।

উপজেলা কৃষি কর্মকতা এস এস ফারহানা হোসেন বলেন, লাউ উৎপাদনে সেচ, সার ও শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় এবং পোকা-মাকড় খুব ক্ষতি করতে না পারায় কৃষকেরা শীত লাউ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। পাশাপাশি এবার শীত লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় উৎপাদিত শীত লাউ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর