খক লিখবে তাঁর চিন্তা ভাবনা। পাঠক তা পাঠ করে সিদ্ধান্ত নিবে তার নিজের জীবনে লেখাটির গ্রহণযোগ্যতা। সমাজ, দেশ এবং জাতির কল্যানে বুদ্ধিজীবিরা করবে প্রয়োজনীয় আলোচনা, সমালোচনা। জরুরী প্রয়োজনে কেবলমাত্র যুক্তিতর্কে লেখার বিশ্লেষন হতে পারে। খুব বেশী কুৎসিত এবং অশালীন ভাষা এবং ভাবের লেখা হলে হয়তো সেটা সবাই জোট বেধে বর্জন করা যেতে পারে। কোন লেখা কোন জাতির জন্য মিথ্যা ইতিহাস বহন করলে, সে জাতি সেই লেখার প্রচার এবং প্রকাশে বড় জোর নিষিদ্ধতা ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু কেউ লেখকের জীবন নিতে পারে না।
এর ঠিক উল্টো পীঠে, বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশের রাষ্ট্রীয় কিংবা ধর্মীয় যে কোন আইনেই কারো জীবন নেয়া শুধু অন্যায় নয়, এটি একটি গুরুতর অপরাধ! ক্ষমার অযোগ্য এই অপরাধের শাস্তি বেশ কঠোর এবং এমনি কি অপরাধীর ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে।
খুব আশ্চর্য্য হলেও সত্য যে বাংলাদেশে একটি দল প্রকাশ্য দিবালোকে একের পর এক লেখক হত্যা করছে এবং নিজেরাই তা স্বীকার করছে। লেখকদের অন্যায় তাঁরা সবাই বিঞ্জান এবং প্রযুক্তি নিয়ে লেখালেখি করছিলো, যাহা ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। দেশের বিচার বিভাগ, সন্ত্রাসীদের কাছে নিজেদের নীতি একপ্রকার বিক্রী করে পাতানো লুকোচুরি খেলায় সাধারণ জনগণদের বোকা বানিয়ে ধীরে ধীরে হত্যার মামলাগুলো মাটি চাপা দিয়ে দেয়ায় লিপ্ত রয়েছে। এ বিষয়গুলো ধর্ম গোত্র নির্বিশেষে প্রকৃত বাঙালী বিবেকবানদের মনে আঘাত করছে। আর একদল এই বিষয়টিকে নিজেদের স্বার্থে মানুষের ধর্মীয় দূর্বলতায় শক্ত হাতিয়ার বানিয়ে সুযোগ মতো ব্যবহার করছে। মূলত মৌলবাদীরাই এই স্বার্থপর দল। সপ্তাহের শুরুতে খবরের কাগজে পড়লাম ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম এম কালবুর্গিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তিনি একজন যুক্তিবাদী এবং হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, বিশেষত প্রতিমা পূজার কট্টর সমালোচক ছিলেন। এখানে একজন হিন্দু যুক্তিবিদকে প্রাণ দিতে হলো হিন্দু মৌলাবাদীদের হাতে।
মূলত মৌলবাদ কোন বিশেষ একটি ধর্মে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিটি ধর্মেই আছে কিছু মৌলবাদী, যারা নিজেদের মন্দ কাজকে উদাহরণ হিসেবে রেখে দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে নষ্ট করে তুলছে, অন্ধ গোড়ামীতে পেঁচিয়ে সাধারণ জীবন প্রণালীকে করছে ঝামেলা যুক্ত আর দিন দিন যুক্তি-তর্কের বাইরে চলে ধর্মকে করে তুলছে প্রশ্নের মুখোমুখি। এরা পান থেকে চুন খসলেই জীবন নিতে জানে। এরা মানুষ নয়, অমানুষ। এরা আসলে কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না। কেবল বিশ্বাস করে সন্ত্রাসবাদে। এরা সন্ত্রাসী, এরা মৌলবাদী!