ঢাকা ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কম্বাইন হারভেস্টারে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০১:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৯৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলায় কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। বিগত দিনে চাষাবাদ করে তেমন কোনো উন্নতি করতে পারেননি। মৌসুমের সময় শ্রমিক সঙ্কটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে কৃষি কাজ থেকে সরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

এ অবস্থায় গত বছর জানতে পারেন কম্বাইন হারভেস্টার সম্পর্কে। মেশিনটি কেনার পরই শ্রমিক ও মাড়াই সমস্যাসহ একে একে অন্যান্য সমস্যাও দূর হতে থাকে তার। গত মৌসুমে তিনি নিজের জমি ছাড়াও অন্যান্য কৃষকের প্রায় ২০০ বিঘা জমির ধান কাটেন কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে। এ জন্য প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ২০০ টাকা; আর আয় হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে। এতে খরচ বাদ দিয়ে গত মৌসুমেই তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ করেছেন।

নেত্রকোনার উদ্যোমী কৃষক মোমেন। স্বল্প পরিসরে লেখাপড়া করে চাকরি না পেয়ে বাবার কৃষি কাজের হাল ধরেন। বেকারত্ব দূর করতে বেছে নেন কৃষি কাজ। কিন্তু ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সঙ্কটে পড়েন। সময়মত কাটতে না পারায় ধান নষ্ট হয়ে যায়।

পরে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কম্বাইন হারভেস্টার সম্পর্কে জানতে পারেন। সে বছরেই ঋণ নিয়ে কেনেন যন্ত্রটি। গত মৌসুমে তিনি নিজের জমি ছাড়াও অপরের ১০০ বিঘা জমির ধান কেটে প্রায় দেড় লাখ টাকা বাড়তি আয় করেছেন। এলাকায় কৃষি কাজে শ্রমিকের সঙ্কট মেটানোর পাশাপাশি এখন তিনি বাড়তি আয় করছেন।

সিরাজগঞ্জ ও নেত্রকোনার এ দুই কৃষকের মতোই সারা দেশে কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার। যন্ত্রটি জনপ্রিয় করতে কোম্পানিগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তেমনি সরকারের উদ্যোগও কাজে লাগছে। এ যন্ত্র কিনতে ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তূকি সহায়তা দিচ্ছে সরকার।

চলতি বছর ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে মাত্র ১২৫টি মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টারের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও চাহিদা রয়েছে এক হাজারের বেশি।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক শেখ মো. নাজিমউদ্দিন বলেন, দেশের কৃষিখাতে শ্রমিক সঙ্কট মিটিয়ে নিজেদের সচ্ছলতার মাধ্যম হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির কম্বাইন হার্ভেস্টারের দিকে ঝুঁকছেন মাঝারি ও বড় পর্যায়ের কৃষকরা। যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানো গেলে ফসলের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি শ্রমিক সঙ্কট কাঠিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ প্রয়োজনীয়তার দিকটি মাথায় রেখে কৃষকদের মাঝে যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভর্তূকি সহায়তাও বাড়ানো হচ্ছে।

কৃষক ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারের মাধ্যমে ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমানো যায়। যন্ত্রটি ব্যবহার করলে সময় বাঁচায় ৭০-৮২ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক একর জমির ধান বা গম কাটতে খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। সেখানে মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারে লাগে মাত্র ৪০০ টাকা। এটি অল্প কাদার মধ্যেও ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে এ যন্ত্র দিয়ে ফসল কাটার পর খড় আস্ত থাকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, বর্তমানে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকের অভাব প্রায় ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে তাদের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় কৃষিকে লাভজনক করার একমাত্র পথ কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। এ অবস্থায় শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কৃষকের কাছে কম্বাইন হার্ভেস্টারকে জনপ্রিয় করতে হবে ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কম্বাইন হারভেস্টারে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষক

আপডেট টাইম : ০১:০১:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলায় কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। বিগত দিনে চাষাবাদ করে তেমন কোনো উন্নতি করতে পারেননি। মৌসুমের সময় শ্রমিক সঙ্কটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে কৃষি কাজ থেকে সরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

এ অবস্থায় গত বছর জানতে পারেন কম্বাইন হারভেস্টার সম্পর্কে। মেশিনটি কেনার পরই শ্রমিক ও মাড়াই সমস্যাসহ একে একে অন্যান্য সমস্যাও দূর হতে থাকে তার। গত মৌসুমে তিনি নিজের জমি ছাড়াও অন্যান্য কৃষকের প্রায় ২০০ বিঘা জমির ধান কাটেন কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে। এ জন্য প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ২০০ টাকা; আর আয় হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে। এতে খরচ বাদ দিয়ে গত মৌসুমেই তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ করেছেন।

নেত্রকোনার উদ্যোমী কৃষক মোমেন। স্বল্প পরিসরে লেখাপড়া করে চাকরি না পেয়ে বাবার কৃষি কাজের হাল ধরেন। বেকারত্ব দূর করতে বেছে নেন কৃষি কাজ। কিন্তু ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সঙ্কটে পড়েন। সময়মত কাটতে না পারায় ধান নষ্ট হয়ে যায়।

পরে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কম্বাইন হারভেস্টার সম্পর্কে জানতে পারেন। সে বছরেই ঋণ নিয়ে কেনেন যন্ত্রটি। গত মৌসুমে তিনি নিজের জমি ছাড়াও অপরের ১০০ বিঘা জমির ধান কেটে প্রায় দেড় লাখ টাকা বাড়তি আয় করেছেন। এলাকায় কৃষি কাজে শ্রমিকের সঙ্কট মেটানোর পাশাপাশি এখন তিনি বাড়তি আয় করছেন।

সিরাজগঞ্জ ও নেত্রকোনার এ দুই কৃষকের মতোই সারা দেশে কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার। যন্ত্রটি জনপ্রিয় করতে কোম্পানিগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তেমনি সরকারের উদ্যোগও কাজে লাগছে। এ যন্ত্র কিনতে ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তূকি সহায়তা দিচ্ছে সরকার।

চলতি বছর ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে মাত্র ১২৫টি মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টারের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও চাহিদা রয়েছে এক হাজারের বেশি।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক শেখ মো. নাজিমউদ্দিন বলেন, দেশের কৃষিখাতে শ্রমিক সঙ্কট মিটিয়ে নিজেদের সচ্ছলতার মাধ্যম হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির কম্বাইন হার্ভেস্টারের দিকে ঝুঁকছেন মাঝারি ও বড় পর্যায়ের কৃষকরা। যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানো গেলে ফসলের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি শ্রমিক সঙ্কট কাঠিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ প্রয়োজনীয়তার দিকটি মাথায় রেখে কৃষকদের মাঝে যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভর্তূকি সহায়তাও বাড়ানো হচ্ছে।

কৃষক ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারের মাধ্যমে ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমানো যায়। যন্ত্রটি ব্যবহার করলে সময় বাঁচায় ৭০-৮২ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক একর জমির ধান বা গম কাটতে খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। সেখানে মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারে লাগে মাত্র ৪০০ টাকা। এটি অল্প কাদার মধ্যেও ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে এ যন্ত্র দিয়ে ফসল কাটার পর খড় আস্ত থাকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, বর্তমানে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকের অভাব প্রায় ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে তাদের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় কৃষিকে লাভজনক করার একমাত্র পথ কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। এ অবস্থায় শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কৃষকের কাছে কম্বাইন হার্ভেস্টারকে জনপ্রিয় করতে হবে ।