ঢাকা ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসন ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত বিএনপি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৪:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭
  • ৩২২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-এনায়েতপুর-চৌহালী) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ডজনখানেক নবীন-প্রবীণ প্রার্থী রয়েছেন মনোনয়ন দৌড় প্রতিযোগিতায়। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। পূর্বে এই আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। সুতরাং আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মরিয়া তাদের বর্তমান আসনটি ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে আর বিএনপি মরিয়া হয়ে পড়েছে তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে দলীয় বর্ধিত সভা, পথসভা-সমাবেশ, ধর্মীয়-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান, দলীয় নেতাকর্মীদের বিয়ে-সাদি আর নেতা-নেত্রীদের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন সাঁটিয়ে এবং ভূরিভোজ আয়োজন করে জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় বসে নেই জামায়াত। তারা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নিতে সব রকম প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। তবে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে সব দলই যেন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, দায়িত্বশীলতা, সততা, ত্যাগ, শিক্ষিত ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণা করে এমন প্রত্যাশা দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনটি তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ বেলকুচি ও যমুনা বিধ্বস্ত চৌহালী উপজেলার মোট ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। বেলকুচির মোট ভোটার দুই লাখ ৭৬ হাজার ৮৭২ ও চৌহালীর মোট ভোটার এক লাখ দুই হাজার ৪৫৬। স্বাধীনতাপরবর্তী সময় থেকে এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন তারাই দেশ পরিচালনা করেছেন। তাই এ আসনটির দিকে সব দলেরই বিশেষ একটি নজর থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ এ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান এমপি, মণ্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ মণ্ডল। তিনি একজন সজ্জন ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও রাজনীতির মাঠে তিনি নতুন। দলীয় বিভিন্ন কৌশলে তিনি খুব বেশি সফল না হতে পারায় অনেক নেতাকর্মীই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছেন। এদিকে একাদশ নির্বাচনে তার ছেলে মণ্ডল গ্রুপের পরিচালক আবদুল মমিন মণ্ডল মনোনয়ন চাইবেন। তাকে নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জনসভা ও উন্নয়নমূলক কাজের অনুষ্ঠানে এ রকম ইঙ্গিত দিয়েছেন বর্তমান এমপি ও তার সমর্থকরা।

সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে হয়েছিলেন মন্ত্রী। এলাকায় করেছেন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। তবে তার নিকটতমদের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা নির্বাচিত করায় অনেকের কাছেই আবার বিরাগভাজন হয়েছেন সাবেক এ মন্ত্রী। লতিফ বিশ্বাস প্রভাব খাটিয়ে তার ছোট স্ত্রী আশানূর বিশ্বাসকে দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। ভোটের দিন তার বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটও বয়কট করেছিলেন।

আবদুল লতিফ বিশ্বাসের দুই স্ত্রী ও ৮ সন্তান। দু’দফা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১৯৮৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। মহাজোট সরকার গঠন করার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে। তবে ৫ বছরের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এসব কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন হারান আবদুল লতিফ বিশ্বাস।

এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও দূরন্ত রাজশাহীর চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান মোহন। তিনি সার্বক্ষণিক দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর রাখছেন ও নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে সমর্থক, কর্মী ও ভোটার বৃদ্ধিতে গণসংযোগের পাশাপাশি বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যানার ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগিয়ে এলাকায় আলোচনায় এসেছেন। এলাকার উন্নয়নে নানামুখী প্রতিশ্রুতি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক থাকায় হাইকমান্ডের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন জোর লবিং। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তবে মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে নেই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত মীর মোশারফ হোসেন। তিনি ঢাকার বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেলকুচির বেশ কয়েকটি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্রয়াত ও অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত দলীয় নেতাকর্মীদের আর্থিক ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। এ ছাড়া চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের শহীদ পরিবারের সদস্য গাজী মো. শফিকুল ইসলাম তালুকদার এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও জনসাধারণের নিয়ে উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভা করেছেন। মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সাবেক এমপি মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের নীরবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। তিনি এ আসন থেকে ২০০৮ সালে মাত্র চার দিন আগে মনোনয়নপত্র নিয়ে এসে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ বিশ্বাসের কাছে ২৫২ ভোটে হেরে যান। এরপর থেকে দলীয় কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন এলাকায় নেতাকর্মীর সঙ্গে তার কোনো দেখা সাক্ষাৎ নেই, রাখেন না কোনো খোঁজ-খবর। তবে অনেকের কাছে তিনি শক্তিশালী প্রার্থী।

বেলকুচি ডিগ্রি কলেজসহ একাধিক বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম কোরাইশ খানের ছেলে ও সাবেক এমপি শহিদুল্লাহ খানের ভাতিজা বেলকুচি উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা গোলাম মওলা খান বাবলু নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং মনোনয়ন পেতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২০০৮ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনীত হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদেরকে ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। কর্মীবান্ধব গোলাম মওলা খান বাবলুর রয়েছে তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি-চৌহালী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে জেলজুলুমে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীসহ এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করে ইতোমধ্যে বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে তার পাশে পেয়েছেন। এসব কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রী তাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি আশাবাদী। দল তাকে মনোনয়ন দিলে বেলকুচি-চৌহালী আসনটি বিএনপির ঘরে তুলে আনতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ধানের শীষপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছেন ঘরোয়া বৈঠক ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রচারণা। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নতুন কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। জেলজুলুমে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে না দাঁড়ানোর অভিযোগ এনে নির্বাচনী এলাকায় তার সমর্থিত ছাত্রদল ও যুবদলের একটি বৃহৎ অংশ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্য থাকায় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ ছাড়া ওরিয়েন্টাল গ্রুপের পরিচালক রকিবুল করিম খান পাপ্পু বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি অল্প দিনের ব্যবধানে তার কর্মীবান্ধব নেতৃত্বের কারণে জেলা বিএনপির সদস্য থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে বসে নেই জামায়াত। তারা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনায় দলের প্রার্থী হিসেবে বেলকুচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আলী আলমকে নিয়ে অনেকটা কৌশলে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেলকুচি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম সোহেল।

এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আনসর আলী সিদ্দিকীর ছেলে চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান।

মানবকণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আসন ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত বিএনপি

আপডেট টাইম : ১১:৩৪:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-এনায়েতপুর-চৌহালী) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ডজনখানেক নবীন-প্রবীণ প্রার্থী রয়েছেন মনোনয়ন দৌড় প্রতিযোগিতায়। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। পূর্বে এই আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। সুতরাং আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মরিয়া তাদের বর্তমান আসনটি ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে আর বিএনপি মরিয়া হয়ে পড়েছে তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে দলীয় বর্ধিত সভা, পথসভা-সমাবেশ, ধর্মীয়-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান, দলীয় নেতাকর্মীদের বিয়ে-সাদি আর নেতা-নেত্রীদের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন সাঁটিয়ে এবং ভূরিভোজ আয়োজন করে জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় বসে নেই জামায়াত। তারা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নিতে সব রকম প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। তবে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে সব দলই যেন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, দায়িত্বশীলতা, সততা, ত্যাগ, শিক্ষিত ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণা করে এমন প্রত্যাশা দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনটি তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ বেলকুচি ও যমুনা বিধ্বস্ত চৌহালী উপজেলার মোট ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। বেলকুচির মোট ভোটার দুই লাখ ৭৬ হাজার ৮৭২ ও চৌহালীর মোট ভোটার এক লাখ দুই হাজার ৪৫৬। স্বাধীনতাপরবর্তী সময় থেকে এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন তারাই দেশ পরিচালনা করেছেন। তাই এ আসনটির দিকে সব দলেরই বিশেষ একটি নজর থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ এ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান এমপি, মণ্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ মণ্ডল। তিনি একজন সজ্জন ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও রাজনীতির মাঠে তিনি নতুন। দলীয় বিভিন্ন কৌশলে তিনি খুব বেশি সফল না হতে পারায় অনেক নেতাকর্মীই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছেন। এদিকে একাদশ নির্বাচনে তার ছেলে মণ্ডল গ্রুপের পরিচালক আবদুল মমিন মণ্ডল মনোনয়ন চাইবেন। তাকে নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জনসভা ও উন্নয়নমূলক কাজের অনুষ্ঠানে এ রকম ইঙ্গিত দিয়েছেন বর্তমান এমপি ও তার সমর্থকরা।

সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে হয়েছিলেন মন্ত্রী। এলাকায় করেছেন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। তবে তার নিকটতমদের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা নির্বাচিত করায় অনেকের কাছেই আবার বিরাগভাজন হয়েছেন সাবেক এ মন্ত্রী। লতিফ বিশ্বাস প্রভাব খাটিয়ে তার ছোট স্ত্রী আশানূর বিশ্বাসকে দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। ভোটের দিন তার বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটও বয়কট করেছিলেন।

আবদুল লতিফ বিশ্বাসের দুই স্ত্রী ও ৮ সন্তান। দু’দফা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১৯৮৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। মহাজোট সরকার গঠন করার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে। তবে ৫ বছরের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এসব কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন হারান আবদুল লতিফ বিশ্বাস।

এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও দূরন্ত রাজশাহীর চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান মোহন। তিনি সার্বক্ষণিক দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর রাখছেন ও নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে সমর্থক, কর্মী ও ভোটার বৃদ্ধিতে গণসংযোগের পাশাপাশি বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যানার ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগিয়ে এলাকায় আলোচনায় এসেছেন। এলাকার উন্নয়নে নানামুখী প্রতিশ্রুতি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক থাকায় হাইকমান্ডের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন জোর লবিং। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তবে মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে নেই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত মীর মোশারফ হোসেন। তিনি ঢাকার বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেলকুচির বেশ কয়েকটি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্রয়াত ও অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত দলীয় নেতাকর্মীদের আর্থিক ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। এ ছাড়া চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের শহীদ পরিবারের সদস্য গাজী মো. শফিকুল ইসলাম তালুকদার এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও জনসাধারণের নিয়ে উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভা করেছেন। মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সাবেক এমপি মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের নীরবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। তিনি এ আসন থেকে ২০০৮ সালে মাত্র চার দিন আগে মনোনয়নপত্র নিয়ে এসে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ বিশ্বাসের কাছে ২৫২ ভোটে হেরে যান। এরপর থেকে দলীয় কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন এলাকায় নেতাকর্মীর সঙ্গে তার কোনো দেখা সাক্ষাৎ নেই, রাখেন না কোনো খোঁজ-খবর। তবে অনেকের কাছে তিনি শক্তিশালী প্রার্থী।

বেলকুচি ডিগ্রি কলেজসহ একাধিক বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম কোরাইশ খানের ছেলে ও সাবেক এমপি শহিদুল্লাহ খানের ভাতিজা বেলকুচি উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা গোলাম মওলা খান বাবলু নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং মনোনয়ন পেতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২০০৮ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনীত হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদেরকে ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। কর্মীবান্ধব গোলাম মওলা খান বাবলুর রয়েছে তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি-চৌহালী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে জেলজুলুমে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীসহ এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করে ইতোমধ্যে বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে তার পাশে পেয়েছেন। এসব কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রী তাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি আশাবাদী। দল তাকে মনোনয়ন দিলে বেলকুচি-চৌহালী আসনটি বিএনপির ঘরে তুলে আনতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ধানের শীষপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছেন ঘরোয়া বৈঠক ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রচারণা। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নতুন কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। জেলজুলুমে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে না দাঁড়ানোর অভিযোগ এনে নির্বাচনী এলাকায় তার সমর্থিত ছাত্রদল ও যুবদলের একটি বৃহৎ অংশ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্য থাকায় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ ছাড়া ওরিয়েন্টাল গ্রুপের পরিচালক রকিবুল করিম খান পাপ্পু বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি অল্প দিনের ব্যবধানে তার কর্মীবান্ধব নেতৃত্বের কারণে জেলা বিএনপির সদস্য থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে বসে নেই জামায়াত। তারা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনায় দলের প্রার্থী হিসেবে বেলকুচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আলী আলমকে নিয়ে অনেকটা কৌশলে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেলকুচি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম সোহেল।

এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আনসর আলী সিদ্দিকীর ছেলে চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান।

মানবকণ্ঠ