হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের ৪টি উপজেলার সীমান্ত এলাকায় আমন ধানের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত চারপাশ। কোনো হাওরে ধান কাট শুরু কোন হাওরে শুরু হওয়ার পথে। এ জেলার সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ের তলদেশের বিস্তীর্ন জমিতে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় সোনালী রঙের পাকা ধানের ছড়ায় ছুট ছুট ধানের টুকরোগুলো সূর্যের আলোতে জলমল করে হাওয়ায় দোল খাচ্ছে।
এবার ধানের ফলন ভাল হওয়ার ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। সেই খুশিতে কষ্টের ফলানো সোনালী রঙের ধানের টুকরোগুলো সযতেœ কেটে গোলায় তুলতে বৌ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে আপন মনে ব্যস্ত সময় পার করছে সীমান্ত এলাকার কৃষকরা।
জানা গেছে, হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার প্রবাদ আছে মৎস্য, পাথর ও ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ। কিন্তু এই প্রাণ (বেরো ধান) প্রতি বছর থাকে আতঙ্কের মধ্যে। প্রতি বছর হাওরের বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম আর পুকুর চুরির কারণে এবার হাওরবাসীর কষ্টের ফলানো বোরো ধান গোলায় তুলতে পারে নি জেলার ৮০ভাগ কৃষক।
এই জেলায় বোরো ধানেই একমাত্র সম্পদ আর বেশি ফলায় কৃষকরা। কারণ বছরের ৬মাস বিশাল হাওর পানিতে জলমগ্ন থাকে বাকি ৬ মাস এক ফসলি বোরো ধান চাষাবাদ করেই হাওরবাসী জীবন-জীবিকা পরিচালিত হয়। জেলার তাহিরপুর, দোয়ারা বাজার, বিশ্বাম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকার মাটিতে রোপা আউশ ও আমন চাষের উপযোগী। এই সব এলাকার জমির প্রকৃতি উচুঁ হওয়ায় এই এলাকার কৃষকরা সব ধরণের ধান চাষ করে থাকে।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বোরো মৌসুমের শেষে আমন চাষ করে থাকে সীমান্ত এলাকার কৃষকরা। এ সময় ঝড়বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, পোকামাকড়ের আক্রমণ, রোগবালাই ও প্রাকৃতিক দূযোর্গের আশঙ্কা থাকে না। ফলে রোপা আউশ ও আমনের ফলন ভাল হয় আর কৃষকরা চাষাবাদ করে বেশ লাভবান হন।
ব্রি ৩৩ ও বিণা-৭ এ দুটি জাত স্বল্প মেয়াদী। অন্যান্য জাতের ধান যেখানে পাকতে সময় লাগে ১৪০দিন থেকে ১৫০দিন সেখানে ব্রি ৩৩ ও বিণা পাকতে সময় লাগে ১০০দিন থেকে ১১০দিন। প্রতি ১কেয়ার (৩০শতাংশে) ১২-১৬মনের অধিক ধান পাওয়া যায়।
এ বছর জেলায় দোয়ারা বাজার উপজেলা, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বাম্ভরপুর সহ ১১টি উপজেলায় ৭৪৯৭০হেক্টর আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে তাহিরপুরে ৫হাজার ৫শ’ হেক্টরের অধিক জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় ২০ভাগ কাটা শুরু হয়েছে।
জেলার সীমান্ত এলাকার ঘুরে রহিম উদ্দিন, আব্দুল মোতালেব, সাদেক আলীসহ একাধিক কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এখন পাকা আমন ধান কেটে রোদে শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছি। এই ধান কাটার পর এই জমিতেই আবার তরমুজ, বাঙ্গি ও শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন চাষাবাদ শুরু করব। কৃষি অফিসের পরামর্শ পেয়েছি আরো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আরো ভাল ফলন করতে পারব।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান, এ বছর উপজেলায় ১২হাজার একর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। ফলন ও ভাল হয়েছে। কারণ বোরো ফসলের মত পানিতে বা অন্য কোন প্রকৃতিক দূযোগ্যে ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। অন্যান্য জায়গায় ধানের ৩-৪বার চাষ হয় কিন্তু বোরো প্রধান সুনামগঞ্জে ১বার তাও শুধু বোরোই চাষ করা হয়। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি সীমান্ত এলাকায় ভাল পরিমাণে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সীমান্তে বসবাসকারী কৃষকরা খুবেই পরিশ্রমি তারা সীমান্তের অনেক অযোগ্য জমিকে চাষ যোগ্য করেছে। কৃষি কর্মকর্তারা সীমান্ত এলাকায় কিভাবে চাষাবাদ করে আরো বেশি ধান উৎপন্ন করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিলে কৃষকরা আরো লাভবান হবে।