হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামালপুরের মাঠে মাঠে পুরোদমে চলছে রোপা আমন কাটা ও মাড়াই। উৎসবের আমেজে কাটা মাড়াই শেষে সোনালী ধান ঘরে তুলছে কৃষান-কৃষাণীরা। মজুদদার ও ফড়িয়ারা নতুন ধান কিনতে কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরছে। বন্যাপরবর্তী বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও ভালো ফলন পেয়ে খুশি এলাকার কৃষকেরা।
সরেজমিনে জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর, পিঙ্গল হাটি, গোদাশিমলা, কম্পপুর ও মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ, বালু আটা, মহিরামকুল, ভাঙ্গুনী ডাঙ্গা ও রাঁন্ধুনী গাছা ঘুরে দেখা গেছে, ছোট বড় প্রত্যেক গৃহস্থ-চাষি পরিবারেই এখন নতুন ফসল ঘরে তোলার কর্মব্যস্ততা। ধান কেটে আটি বেঁধে মাথায় বয়ে কিংবা গরু মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। গ্রামগঞ্জের রাস্তা-ঘাট, বাড়ির উঠান, খোলা মাঠ-ময়দানে মাড়াই করা ধান ও খড় শুকানোর কাজে হাত লাগাচ্ছেন কৃষকের সঙ্গে কৃষাণীরাও।
এবার রোপা আমনের আশানুরূপ ফলন হয়েছে জামালপুরে। কৃষি বিভাগের মতে, বন্যা পরবর্তী বিরূপ আবহাওয়ায় রোপা আমনের আবাদ নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল তা হয়নি। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেত।
পার্শ্ববর্তী গ্রাম মহিরামকুলের কৃষক নুরুল ইসলাম ঘরে ধান তুলতে পেরে বেজায় খুশি। তিনি বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে আমন লাগিয়েছিলাম। ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কামলা খরচ বেশি থাকায় ধান চাষে কামলার সঙ্গে আমি নিজে ও পরিবারের লোকজন পরিশ্রম করায় অন্যের চাইতে খরচ কিছুটা কম হয়েছে। লাভের মুখ ভালোই দেখব’ বলে এক গাল হেসে চলে যান ধান কাটায় কাজে যোগ দিতে।
মেলান্দহের মালঞ্চ গ্রামে ফসলের মাঠে দেখা হয় মালঞ্চ ব্লকে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ ব্লকে প্রতি হেক্টরে রোপা আমন ব্রি-৪৯ পাঁচ মেট্রিকটন, হরি সাড়ে চার মেট্রিকটন, বিনা-৭ সোয়া চার মেট্রিকটন ও পায়জাম সাড়ে চার মেট্রিকটন কাটা হয়েছে। স্থানীয় জাত এখনো কাটা শুরু হয়নি।’
জামালপুর কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবার জেলায় এক লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল কৃষি বিভাগের। সেখানে এক লাখ ২৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া না থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেত। আমরা বন্যাকবলিত জামালপুরে আগামীতে বন্যা ও বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করে কৃষকরা কিভাবে বাম্পার ফলনের মুখ দেখতে পারে; মাঠ পর্যায়ে সেমিনার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা করব।’
এদিকে, অনেক প্রান্তিক চাষিদের অভিযোগ, বন্যার পর সরকারিভাবে দেওয়া আমনের চারা না পেয়ে নিজেরা সংগ্রহ করে জমিতে লাগান তারা। চাষাবাদের শুরুতে উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে খরচ মিটিয়েছেন। এখন সে ঋণের টাকা শোধে ধান কেটে মাড়াই ও শুকিয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। ফলে তাদের কষ্টে ফলানো ক্ষেতের ধান চলে যাচ্ছে অন্যের গোলায়।