হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ই আছেন বিপিএলে। কিন্তু আসরটিতে সর্বোচ্চসংখ্যক ছক্কা হাঁকানো ‘ওঁরা ১১ জন’-এর তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন কিনা জাতীয় দলের বাইরের এক খেলোয়াড় ! সহজ কথায়, ঘরোয়া ক্রিকেটের এক দুর্নিবার অলরাউন্ডার।
এবার বিপিএলের ঢাকা পর্ব পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৪টি ছক্কা মেরেছেন ক্যারিবীয় ওপেনার এভিন লুইস। তাঁকে অনুসরণ করছেন যথাক্রমে কার্লোস ব্রাফেট (১২), লুক রনকি (১১) কাইরন পোলার্ড (১১) আর ক্রিস গেইল (৯)। অর্থাৎ ছক্কাবাজদের তালিকায় শীর্ষ পাঁচের চারজনই ক্যারিবিয়ান। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো পরবর্তী ছয় শীর্ষ ছক্কাবাজের মধ্যে বাংলাদেশি মাত্র একজন !
গেইলের সমান ৯টি ছক্কা মেরে তালিকার ছয়ে আরিফুল হক (গেইল বাউন্ডারি বেশি মারায় তাঁর এক ধাপ ওপরে)। পরের শীর্ষ পাঁচজনের মধ্যে আন্দ্রে ফ্লেচার শুধু ৮টি ছক্কা মেরেছেন। এ ছাড়া বাকি চারজনের—মারলন স্যামুয়েলস, শহীদ আফ্রিদি, দানুশকা গুণাথিলাকা, সুনীল নারাইন—ছক্কাসংখ্যা সমান ৭টি করে। অর্থাৎ শীর্ষ এগারোতে একমাত্র বাংলাদেশি খুলনা টাইটানসের আরিফুল হক।
আরিফুলের পর বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭টি করে ছক্কা ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক ও সাব্বির রহমানের। এ তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধু সাব্বিরেরই টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পাকা। ইমরুল তো সব দলেই অস্থায়ী হয়ে পড়ছেন আর মুমিনুলের গায়ে ‘টেস্ট ক্রিকেটার’ ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। সত্যিই বিপিএলের লীলা বোঝা দায় !
সর্বোচ্চ ইনিংসেও বিদেশিদের আধিপত্য। শীর্ষ দশে বাংলাদেশি মাত্র দুজন! সাব্বির ও মুমিনুল। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৭০ রানের ইনিংসটি দিয়ে তিনে এসে গেছেন সাব্বির। রাইডার্সের বিপক্ষেই ৬৩ রানের ইনিংস দিয়ে নয়ে মুমিনুল। শীর্ষস্থানীয় লুক রনকিও ৭৮ রানের ইনিংসটি খেলেছেন রাইডার্সদের বিপক্ষে।
ব্যাটিং গড়ে শীর্ষ পাঁচে ঠাঁই পাননি কোনো দেশি ক্রিকেটার। ২ ম্যাচে ৯৩.০০ গড় নিয়ে শীর্ষে লেন্ডল সিমন্স। দ্বিতীয় আরেক ক্যারিবীয় স্যামুয়েলস (৫ ম্যাচে ৭৬.৫০ গড়)। পরবর্তী তিনজন যথাক্রমে—রবি বোপারা (৬ ম্যাচে ৭৩.০০ গড়), শোয়েব মালিক (২ ম্যাচে ৬৩.০০ গড়) এবং ডোয়াইন স্মিথ (১ ম্যাচে ৬২.০০ গড়)। ব্যাটিং গড়ে দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষে ইমরুল কায়েস। ৬ ম্যাচে ৫০.২৫ গড় নিয়ে আছেন ছয়ে।
স্ট্রাইক রেটের হিসেবেও জাতীয় দলের তারকা ব্যাটসম্যানদের খামতির প্রশ্ন উঠতে পারে। শীর্ষ কুড়িতে মধ্যে আছেন মাত্র তিনজন ! এর মধ্যে দুজনের তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকই হয়নি। ৩ ম্যাচে ১৭০.৫৮ স্ট্রাইক রেট নিয়ে দেশি ক্রিকেটারদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজশাহী কিংসের জাকির হোসেন (১০ম)। ১৩তম স্থানে আরিফুল হকের স্ট্রাইকরেট ৬ ম্যাচে ১৬১.৫৩। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে শীর্ষ কুড়িতে ঠাঁই করে নেওয়া একমাত্র ক্রিকেটারের পরিচয় আবার বোলিং অলরাউন্ডার। কুমিল্লার হয়ে ৬ ম্যাচে ব্যাট করে ১৫০.০০ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
বিপিএলে এখনো কেউ সেঞ্চুরি পাননি। সর্বোচ্চ তিনটি ফিফটি টি-টোয়েন্টির ‘অখ্যাত’ খেলোয়াড় উপুল থারাঙ্গার। দুটি ফিফটিতে তাঁর পেছনে আছেন তিন ক্যারিবীয়—গেইল, পোলার্ড ও লুইস। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের নেই একের অধিক পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস। সর্বোচ্চ রানে শীর্ষ তিনেও নেই কোনো বাংলাদেশি। ৬ ম্যাচে ২০১ রান নিয়ে দেশি ক্রিকেটারদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমরুল (৩য়)।
বোলিংয়ে সর্বোচ্চ উইকেটসংখ্যায় অবশ্য দেশি ক্রিকেটারদের ভালোই আধিপত্য। খুলনার পেসার আবু জায়েদ রাহী ৬ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে আছেন এখানকার নেতৃত্বে। আবু জায়েদসহ শীর্ষ চারের তিনজনই দেশি—আবু হায়দার (৭ ম্যাচে ১১ উইকেট) ও সাকিব আল হাসান (৭ ম্যাচে ১০ উইকেট)। ৪ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে এখানে ‘কাবাব মে হাড্ডি’ হয়েছেন শহীদ আফ্রিদি। শীর্ষ দশ বোলারের মধ্যে ছয়জনই দেশি।
সেরা বোলিং ফিগার সাকিবের (৩.৫-০-১৬-৫)। তবে শীর্ষ দশে দেশি বোলারদের মধ্যে ঠাঁই করে নিতে পেরেছেন শুধু আবু জায়েদ। শীর্ষ দশে একাই তিনবার জায়গা পেয়েছেন খুলনার এই পেসার। কিপটেমিতে শীর্ষ পাঁচে কোনো দেশি বোলারের জায়গা হয়নি। ৫ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৫.৮৪ গড়ে রান দিয়ে দেশি বোলারদের নেতৃত্বে সোহাগ গাজী (ষষ্ঠ)। বোলিং স্ট্রাইক রেটের শীর্ষ চারেও একমাত্র দেশি সেই আবু জায়েদ।
অর্থাৎ ব্যাটিং কিংবা বোলিং—কোনো জায়গাতেই জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা এখনো নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। চট্টগ্রামে কী ঘটে, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।