১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় নিজের অবস্থান ব্যক্ত করে ওই সময়কার সেনাপ্রধান ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহ বলেছেন, ‘ওইদিন আমি নিজে বঙ্গবন্ধুকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছি। প্রতিবারই অ্যাংগেজ (ব্যস্ত) পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর টেলিফোনটি। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু ফোন ধরে বলেন, ‘তোমার সেনাবাহিনী আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। শেখ জামালকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।’ আমি শুধু বলেছিলাম ‘ডুয়িং সামথিং’। এ কথা বলার পরে টেলিফোনের রিসিভার রাখার শব্দ শুনতে পাই। ২০ সেকেন্ড পর গুলির শব্দ শুনি। হয়তো সেটাই শেষ ফোন ছিল।’ সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪০ তম শাহাদাত বার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু বলব, সেনাপ্রধান একজন ব্যক্তি, যিনি এককভাবে কোনও সৈন্য পরিচালনা করেন না। সৈন্য পরিচালনা করেন, তার আন্ডার কমান্ড অফিসারদের দিয়ে। সেই দিন (১৫ আগস্ট) সেই কর্মকর্তারা তাদের সেনা প্রধানের কথা শুনে নাই।’
শফিউল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের সবার মনে একটা প্রশ্ন আছে, আপনি তো তখন সেনাপ্রধান ছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারলেন না কেন? এই প্রশ্নটা অনেকের কাছেই আছে। আমেরিকার মতো বড় দেশে, এত সেনা সদস্য থাকার পরও সে দেশের প্রেসিডেন্টকে রাস্তায় গুলি খেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।’
অনুষ্ঠান চলাকালে শফিউল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়, ‘১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, কিন্তু আপনি করেন নাই কেন? জবাবে সফিউল্লাহ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারি নাই। এখনও সে ব্যর্থতা নিয়ে বেঁচে আছি। জামিল গিয়েছে তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি এককভাবে গিয়ে কী লাভ হতো। এখনও বেঁচে আছি সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে কিন্তু এখনও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি যে কারা বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত আছেন। তদন্ত করে বিশ্লেষণ করলে সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে। সবাই আমাকে দোষী মনে করে।
সাবেক এই সেনা প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। পরে জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করেন। সমস্ত রাজাকারদের ছেড়ে দেওয়া হয়। যাদের বিচার চলছিল দালাল আইনে তা বাতিল করেছেন জিয়া। তাই শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ দালাল আইন পুনরায় প্রবর্তন করেন। যাদের সাজা হয়েছিল তাদের বিচার করা হোক। আমি পরিষ্কার হতে চাই। এখনও ঘুমাতে গেলে ঘুমাতে পারি না, বঙ্গবন্ধুর চেহারাটা মনে পড়ে যায়। আমাকে হত্যা করতে চাইলে করেন, আমি বুক পেতে থাকব।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম এক অনুষ্ঠানে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনায় শফিউল্লাহর কড়া সমালোচনা করে মন্তব্য করেন।