ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষক নতুন ধান নিয়ে ঘরে ফিরছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর আমন ধান কাটা। ফলনও খুব ভালো। অনেক জমিতেই চিটা ধান স্বত্বেও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়ে বেশ ভালো ফলন নিয়েই ঘরে যেতে পারছে বলে বেশ খুশি কৃষকরা। তবে চট্টগ্রাম জেলার অনেক এলাকায় ধানের সাথে চিটার পরিমাণ বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ধানের শীষে ধানের চেয়ে চিটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে কিছুটা দুশ্চিন্তাও আছে।

এরমধ্যে সাগরে নিম্নচাপের ফলে আবহাওয়া ফের বৈরি হয়ে উঠেছে। নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম অঞ্চল অতিক্রম করলে ঝড়ো হাওয়ায় পাকা ধানের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া যেসব এলাকায় ধানে এখনও ফুল রয়েছে সেখানে ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

এবার রের্কড বৃষ্টিপাত, পাহাড়ী ঢল ও বন্যা হয়েছে। শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টানা পানিবদ্ধতা হয়। তাতে কয়েক দফায় রোপা আমন বিনষ্ট হয়েছে। বিনষ্ট হয়েছে বীজতলাও। তবুও দমে যায়নি কৃষক। নতুন বীজতলা তৈরী হয়েছে। অনেক এলাকায় দ্বিতীয়বারের মতো আবাদ হয়েছে। সেই কষ্টের সুফল পেতে শুরু করেছেন প্রান্তিক চাষীরা। সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাঠজুড়ে এখন সোনালী ধানের হাসি। কষ্টার্জিত সেই ফসলের হাসিতে হাসছেন কৃষাণ-কৃষাণী।

মীরসরাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় ১০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে আমন ধান কাটা। ফলনও খুব ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষকরা খুশি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমনের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায়ও বেশি। এবার হাইব্রীড ধানের ফলন মিলছে প্রতি হেক্টরে ৪.১ মেট্রিক টন (চাল)। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৫৫ মেট্রিক টন। উফশীতে প্রতি হেক্টরে ফলন মিলছে ২.৮৪ মেট্রিক টন, আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২.৪ মেট্রিক টন। স্থানীয় জাতের আমনের ফলন মিলছে ১.৫৫ মেট্রিক টন, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১.৬৮ মেট্রিক টন।

মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন এবার আমনের ফলন খুব ভাল হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিলো না। এতে করে ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আশা করছি আমন আবাদের মতো ফলনেও এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, আমন আবাদের সময় কয়েক দফা ভারী বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় রোপা আমন ও বীজতলা নষ্ট হয়। তবে এতে কৃষকরা হতাশ না হয়ে নতুন করে বীজতলা তৈরী করেন। অনেক এলাকায় একাধিকবার আমনের আবাদ করতে হয়েছে। এতে করে আবাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রবও ছিলো না। ফলে ফলন অনেক ভাল হয়েছে। কৃষি বিভাগের নিবিড় তদারকি আর কৃষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমনে সুফল মিলছে বলেও মন্থব্য করেন তিনি।

এদিকে চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় ধানের সাথে বেশি পরিমাণ চিটা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। মীরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের চাষী সবুজ কুমার দাস বলেন, পাল গ্রাম সহ পূর্ব দুর্গাপুরের অনেক এলাকায় আমনে চিটা দেখা যাচ্ছে। ধানের সাথে চিটা থাকবে এটা স্বাভাবিক তবে এবার চিটার পরিমাণ বেশি। এতে করে ফলন কম হচ্ছে, কৃষকেরাও হতাশ বলে জানান তিনি। তবে গতবারের তুলনায় এবার ধানের দাম এখনও কিছুটা বেশি বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর এর সুপারভাইজার নুরুল আলম বলেন, কিছু কিছু এলাকায় ধানের সাথে চিটা পাওয়া যাচ্ছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে খুব বেশি না। আর এই কারণে ফলন কমে যাওয়ারও কোন আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে নিম্নচাপের কারণে এই অঞ্চলের কিছু এলাকায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সে সময় যেসব এলাকায় ধানের ফুল ছিলো সেসব এলাকায় কিছু চিটা দেখা যাচ্ছে। তার পরিমাণ তেমন বেশি না। এতে ফলনে কোন প্রভাব পড়বে না।

তিনি দাবি করেন এবার উপজেলার সর্বত্র আমনের আশাতিত ফলন হয়েছে। এবার ২০ হাজার ৬শত হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে । প্রাকৃতিক বৈরীতার কারনে ১৫ শতাংশ ক্ষতির আশংকা ছিল। কিন্তু এখন ৫ শতাংশ ক্ষতি বলা যাবে। পূর্বের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রায় আগের চেয়ে এগিয়ে আছে। সব মিলিয়ে উপজেলার কৃষকদের ঘরে ঘরে এখন নবান্নের আনন্দের প্রহরই অপেক্ষা করছে। সবাই পিঠাপুলির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে ১৫ দিনের মধ্যেই সবাই পিঠা পায়েশের ধূমে মত্ত হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কৃষক নতুন ধান নিয়ে ঘরে ফিরছে

আপডেট টাইম : ১১:০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর আমন ধান কাটা। ফলনও খুব ভালো। অনেক জমিতেই চিটা ধান স্বত্বেও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়ে বেশ ভালো ফলন নিয়েই ঘরে যেতে পারছে বলে বেশ খুশি কৃষকরা। তবে চট্টগ্রাম জেলার অনেক এলাকায় ধানের সাথে চিটার পরিমাণ বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ধানের শীষে ধানের চেয়ে চিটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে কিছুটা দুশ্চিন্তাও আছে।

এরমধ্যে সাগরে নিম্নচাপের ফলে আবহাওয়া ফের বৈরি হয়ে উঠেছে। নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম অঞ্চল অতিক্রম করলে ঝড়ো হাওয়ায় পাকা ধানের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া যেসব এলাকায় ধানে এখনও ফুল রয়েছে সেখানে ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

এবার রের্কড বৃষ্টিপাত, পাহাড়ী ঢল ও বন্যা হয়েছে। শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টানা পানিবদ্ধতা হয়। তাতে কয়েক দফায় রোপা আমন বিনষ্ট হয়েছে। বিনষ্ট হয়েছে বীজতলাও। তবুও দমে যায়নি কৃষক। নতুন বীজতলা তৈরী হয়েছে। অনেক এলাকায় দ্বিতীয়বারের মতো আবাদ হয়েছে। সেই কষ্টের সুফল পেতে শুরু করেছেন প্রান্তিক চাষীরা। সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাঠজুড়ে এখন সোনালী ধানের হাসি। কষ্টার্জিত সেই ফসলের হাসিতে হাসছেন কৃষাণ-কৃষাণী।

মীরসরাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় ১০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে আমন ধান কাটা। ফলনও খুব ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষকরা খুশি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমনের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায়ও বেশি। এবার হাইব্রীড ধানের ফলন মিলছে প্রতি হেক্টরে ৪.১ মেট্রিক টন (চাল)। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৫৫ মেট্রিক টন। উফশীতে প্রতি হেক্টরে ফলন মিলছে ২.৮৪ মেট্রিক টন, আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২.৪ মেট্রিক টন। স্থানীয় জাতের আমনের ফলন মিলছে ১.৫৫ মেট্রিক টন, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১.৬৮ মেট্রিক টন।

মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন এবার আমনের ফলন খুব ভাল হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিলো না। এতে করে ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আশা করছি আমন আবাদের মতো ফলনেও এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, আমন আবাদের সময় কয়েক দফা ভারী বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় রোপা আমন ও বীজতলা নষ্ট হয়। তবে এতে কৃষকরা হতাশ না হয়ে নতুন করে বীজতলা তৈরী করেন। অনেক এলাকায় একাধিকবার আমনের আবাদ করতে হয়েছে। এতে করে আবাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রবও ছিলো না। ফলে ফলন অনেক ভাল হয়েছে। কৃষি বিভাগের নিবিড় তদারকি আর কৃষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমনে সুফল মিলছে বলেও মন্থব্য করেন তিনি।

এদিকে চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় ধানের সাথে বেশি পরিমাণ চিটা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। মীরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের চাষী সবুজ কুমার দাস বলেন, পাল গ্রাম সহ পূর্ব দুর্গাপুরের অনেক এলাকায় আমনে চিটা দেখা যাচ্ছে। ধানের সাথে চিটা থাকবে এটা স্বাভাবিক তবে এবার চিটার পরিমাণ বেশি। এতে করে ফলন কম হচ্ছে, কৃষকেরাও হতাশ বলে জানান তিনি। তবে গতবারের তুলনায় এবার ধানের দাম এখনও কিছুটা বেশি বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর এর সুপারভাইজার নুরুল আলম বলেন, কিছু কিছু এলাকায় ধানের সাথে চিটা পাওয়া যাচ্ছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে খুব বেশি না। আর এই কারণে ফলন কমে যাওয়ারও কোন আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে নিম্নচাপের কারণে এই অঞ্চলের কিছু এলাকায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সে সময় যেসব এলাকায় ধানের ফুল ছিলো সেসব এলাকায় কিছু চিটা দেখা যাচ্ছে। তার পরিমাণ তেমন বেশি না। এতে ফলনে কোন প্রভাব পড়বে না।

তিনি দাবি করেন এবার উপজেলার সর্বত্র আমনের আশাতিত ফলন হয়েছে। এবার ২০ হাজার ৬শত হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে । প্রাকৃতিক বৈরীতার কারনে ১৫ শতাংশ ক্ষতির আশংকা ছিল। কিন্তু এখন ৫ শতাংশ ক্ষতি বলা যাবে। পূর্বের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রায় আগের চেয়ে এগিয়ে আছে। সব মিলিয়ে উপজেলার কৃষকদের ঘরে ঘরে এখন নবান্নের আনন্দের প্রহরই অপেক্ষা করছে। সবাই পিঠাপুলির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে ১৫ দিনের মধ্যেই সবাই পিঠা পায়েশের ধূমে মত্ত হবে।