ঢাকা ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমনের বাম্পার ফলনেও লাভের মুখ দেখছেন না কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩১:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০১৭
  • ৪৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দামও বেশ ভালো। প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৮’শ থেকে সাড়ে ৮’শ টাকা। তারপরও লাভের মুখ দেখছেন না চাষীরা।

চাষীদের অভিযোগ, সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভালো দামেও লোকসান ঠেকাতে পারছেন তারা।

উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও জেলা। চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৩ হেক্টর জমিতে। কিন্তু শেষদিকে বন্যার সঙ্গে বৃষ্টির অভাব দূর হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চাইতে জমিতে চারা রোপণ করা হয়। অর্থাৎ এ বছর ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন চাল।

এ বছর আমন চারা রোপণের শুরুতে ঠাকুরগাঁও জেলার বেশকিছু এলাকায় খরা পরিস্থিতি বিরাজ করে। চাষীরা তাড়াহুড়ো করে নিচু জমিগুলোতে আমন ধানের চারা রোপণ করেন। এরপর দেখা দেয় বন্যা। বন্যায় আমনের ক্ষেত ডুবে থাকায় এবং সময়মতো পানি নেমে যাওয়ায় এবার পোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম দেখা দেয়।

বন্যায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির চারা পানিতে পচে নষ্ট হওয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চারা সরবরাহ করা হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কৃষকরা আমন ক্ষেতে পরিচর্যা নেয় ভালোভাবে। জমিতে পরবর্তীতে আর রসের অভাব হয়নি।

বর্তমানে দিগন্তজুড়ে সোনালী ধানক্ষেত। বেশিরভাগ চাষী বসে না থেকে ধান কাটা ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ঘনিমহেশপুর গ্রামের কৃষক জহির উদ্দীন জানান, আমন ধানের দাম যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরি। আগে যে মজুরকে দিতে হতো ২০০ টাকা এখন দিতে হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪’শ টাকা। তাছাড়া ওই পরিমাণ মজুরি না পেলে শ্রমিকরা কাজে যান না।

চাষী নজিব উদ্দীন জানান, একবিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। রোপা লাগাতে ২ হাজার, মাহেন্দ্র  ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে ৩ চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে ১ হাজার, রোপা পরিচর্যা ও সার বিষ প্রযোগ করতে আরো ২ হাজারসহ প্রতি বিঘায় ব্যয় হয় প্রায় ৮ -১০ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান পাওয়া যায় ১৮ মণ।

প্রতিমণ ৮’শ টাকা হিসেবে ১৮ মণ ধানের দাম দাঁড়ায় ১৪,৪০০ টাকা। তারপরও আছে ক্ষেত থেকে নিজ বাড়িতে ধান পরিবহন।

এ হিসেবে একজন চাষী ৩ মাস যে জমিতে পড়ে থাকে তার মূল্য পাচ্ছেন না চাষীরা।

কৃষক মোখলেসুর রহমান জানান, সরকার এ বছর ধানের দাম যা দিয়েছে কম দেয়নি। কিন্তু একজন মজুরকে সাড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা হিসেবে মজুরি দিতে গিয়ে নিজের পাতে পড়ে শূন্য। কিছু কৃষকের বিঘা প্রতি ২/৪ হাজার টাকা লাভবান হলেও অন্যান্যদের ততটা পোষায় না।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কে.এম মাউদুদুল ইসলাম জানান, এবার আমন ধানের উৎপাদনও ভালো হয়েছে এবং বাজারে ধানের দামও বেশি। তারপরও শ্রমিকদের দাম ধানের দামের সঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রান্তিক চাষীরা উৎপাদিত পণ্যেও নায্য দাম পাচ্ছেন না। তাই খাদ্য উৎপাদনকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে শ্রমিকদের এটা নায্য মজুরি নির্ধারণ করা উচিত। তবেই চাষীরা ফসল উৎপাদন করে লাভের মুখ দেখতে পারবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমনের বাম্পার ফলনেও লাভের মুখ দেখছেন না কৃষক

আপডেট টাইম : ০৬:৩১:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দামও বেশ ভালো। প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৮’শ থেকে সাড়ে ৮’শ টাকা। তারপরও লাভের মুখ দেখছেন না চাষীরা।

চাষীদের অভিযোগ, সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভালো দামেও লোকসান ঠেকাতে পারছেন তারা।

উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও জেলা। চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৩ হেক্টর জমিতে। কিন্তু শেষদিকে বন্যার সঙ্গে বৃষ্টির অভাব দূর হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চাইতে জমিতে চারা রোপণ করা হয়। অর্থাৎ এ বছর ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন চাল।

এ বছর আমন চারা রোপণের শুরুতে ঠাকুরগাঁও জেলার বেশকিছু এলাকায় খরা পরিস্থিতি বিরাজ করে। চাষীরা তাড়াহুড়ো করে নিচু জমিগুলোতে আমন ধানের চারা রোপণ করেন। এরপর দেখা দেয় বন্যা। বন্যায় আমনের ক্ষেত ডুবে থাকায় এবং সময়মতো পানি নেমে যাওয়ায় এবার পোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম দেখা দেয়।

বন্যায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির চারা পানিতে পচে নষ্ট হওয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চারা সরবরাহ করা হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কৃষকরা আমন ক্ষেতে পরিচর্যা নেয় ভালোভাবে। জমিতে পরবর্তীতে আর রসের অভাব হয়নি।

বর্তমানে দিগন্তজুড়ে সোনালী ধানক্ষেত। বেশিরভাগ চাষী বসে না থেকে ধান কাটা ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ঘনিমহেশপুর গ্রামের কৃষক জহির উদ্দীন জানান, আমন ধানের দাম যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরি। আগে যে মজুরকে দিতে হতো ২০০ টাকা এখন দিতে হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪’শ টাকা। তাছাড়া ওই পরিমাণ মজুরি না পেলে শ্রমিকরা কাজে যান না।

চাষী নজিব উদ্দীন জানান, একবিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। রোপা লাগাতে ২ হাজার, মাহেন্দ্র  ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে ৩ চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে ১ হাজার, রোপা পরিচর্যা ও সার বিষ প্রযোগ করতে আরো ২ হাজারসহ প্রতি বিঘায় ব্যয় হয় প্রায় ৮ -১০ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান পাওয়া যায় ১৮ মণ।

প্রতিমণ ৮’শ টাকা হিসেবে ১৮ মণ ধানের দাম দাঁড়ায় ১৪,৪০০ টাকা। তারপরও আছে ক্ষেত থেকে নিজ বাড়িতে ধান পরিবহন।

এ হিসেবে একজন চাষী ৩ মাস যে জমিতে পড়ে থাকে তার মূল্য পাচ্ছেন না চাষীরা।

কৃষক মোখলেসুর রহমান জানান, সরকার এ বছর ধানের দাম যা দিয়েছে কম দেয়নি। কিন্তু একজন মজুরকে সাড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা হিসেবে মজুরি দিতে গিয়ে নিজের পাতে পড়ে শূন্য। কিছু কৃষকের বিঘা প্রতি ২/৪ হাজার টাকা লাভবান হলেও অন্যান্যদের ততটা পোষায় না।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কে.এম মাউদুদুল ইসলাম জানান, এবার আমন ধানের উৎপাদনও ভালো হয়েছে এবং বাজারে ধানের দামও বেশি। তারপরও শ্রমিকদের দাম ধানের দামের সঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রান্তিক চাষীরা উৎপাদিত পণ্যেও নায্য দাম পাচ্ছেন না। তাই খাদ্য উৎপাদনকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে শ্রমিকদের এটা নায্য মজুরি নির্ধারণ করা উচিত। তবেই চাষীরা ফসল উৎপাদন করে লাভের মুখ দেখতে পারবে।