ঢাকা ০৭:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্লাস্ট প্রতিরোধে পাঁচ জেলায় গম চাষ বন্ধ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০১৭
  • ৩০৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গমে ‘ব্লাস্ট’ ছত্রাকের আক্রমণ প্রতিরোধে দেশের ৫ জেলায় গম চাষ বন্ধ রাখতে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। জেলাগুলো হচ্ছে- কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও যশোর। বিএডিসি এসব জেলায় গম বীজ বিক্রি বন্ধ রেখেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ২০১৫ সালে এই জেলাগুলোতে গম ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়। এটা ছিল দেশে গম ক্ষেতে ব্লাস্টের প্রথম আক্রমণ। তখন জেলাগুলোতে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছিল।

এমনকি বিএডিসির গম বীজ উৎপাদনকারী ফার্ম ঝিনাইদহ জেলার দত্তনগর, চুয়াডাঙ্গার নুর নগর ও মেহেরপুরের বারাদীতে গম ক্ষেত ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছিল। বিএডিসির খামারগুলোর সব গম ক্ষেত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু চাষিরা সেসময় আক্রান্ত গম ক্ষেতের সঙ্গে ভালো ক্ষেতের গম কেটে বাড়ি নিয়ে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরপর ৩ বছর এ সব জেলায় চাষিদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করে। বিএডিসিও গম বীজ বিক্রি বন্ধ রাখে। এরপরও চাষিরা নিজেদের ঘরে রাখা বীজ দিয়ে গম চাষ করে। গত বছর ১৮ হাজার ৪০৪ হেক্টরে গম চাষ করে চাষিরা। এরমধ্যে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় ২০ হেক্টরে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক চন্ডি দাস কুন্ডু বলেন, এ সব ক্ষেতের গম ধ্বংস করা হয়েছিল। এ বছরও গম চাষ করতে নিষেধ করা হচ্ছে। গমের বদলে অন্য ফসলের চাষ করতে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বিএডিসির যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ রোকনুজ্জামান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মতে ৫ জেলায় গম বীজ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। ডিলারদের গম বীজ দেওয়া হয়নি। যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সঙ্গে পাবনা জেলাতেও গম বীজ বিক্রি করা হচ্ছে না বলে তিনি আরো জানান।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আব্দুল আজিজ বলেন, গমে ‘ব্লাস্ট’ ছত্রাকের আক্রমণ প্রতিরোধে কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যে জমিগুলোর গমে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছিল সেগুলোতে গম চাষ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশের গমে ‘ব্লাস্ট’ ছত্রাকের আক্রমণ হলো কিভাবে- এ প্রসঙ্গে গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা বলেন, কিভাবে এলো তা আমরা জানি না। তবে ‘হুইট ব্লাস্টের’ ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করে আমরা দেখেছি এরসঙ্গে ল্যাটিন আমেরিকার একটা ছত্রাকের সঙ্গে মিল আছে। তিনি বলেন, ব্রাজিল থেকে একবার কিছু গম আনা হয়েছিল। কিন্তু তা নিম্নমানের বলে আমদানিকৃত গমের কিছুটা ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তবে এটা বীজ নয় খাবার গম ছিল। তবে এ বিষয়টি নিয়েও আমরা গবেষণা করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। গম গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। ‘বারি গম-৩৩’ নামে জাতটি সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের পর গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গম গবেষণা কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথভাবে এ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে বলে তিনি জানান।

ড. নরেশ চন্দ্র বলেন, জাতটির জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৭টি। দানার রং সাদা, চকচকে ও আকারে মাঝারি। গমের ব্লাস্ট রোগ ছাড়াও জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী। একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধী অন্যদিকে জিংক সমৃদ্ধ। এর দানায় জিংকের মাত্রা ৫০-৫৫ পিপিএম। জাতটি তাপসহিষ্ণু এবং এর কাণ্ড শক্ত হওয়ায় গাছ সহজে হেলে পড়ে না। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ফলন হবে ৪ থেকে ৫ হাজার কেজি, যা অন্যান্য জাতের দ্বিগুণ।

তিনি বলেন, জাতটি জিংক সমৃদ্ধ এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সিমিটের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএসডিএ-এআরএস’ ল্যাবরেটরিতে গমের ব্লাস্ট রোগের জীবাণুর কৃত্রিম সংক্রমণের মাধ্যমে পরীক্ষা করে জাতটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া জাতটি যশোরের মাঠ পরীক্ষায়ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ‘বারি গম-৩৩’ জাতটি যত দ্রুত কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে কৃষকেরা ততই লাভবান হবে বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ব্লাস্ট প্রতিরোধে পাঁচ জেলায় গম চাষ বন্ধ

আপডেট টাইম : ১২:৫১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গমে ‘ব্লাস্ট’ ছত্রাকের আক্রমণ প্রতিরোধে দেশের ৫ জেলায় গম চাষ বন্ধ রাখতে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। জেলাগুলো হচ্ছে- কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও যশোর। বিএডিসি এসব জেলায় গম বীজ বিক্রি বন্ধ রেখেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ২০১৫ সালে এই জেলাগুলোতে গম ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়। এটা ছিল দেশে গম ক্ষেতে ব্লাস্টের প্রথম আক্রমণ। তখন জেলাগুলোতে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছিল।

এমনকি বিএডিসির গম বীজ উৎপাদনকারী ফার্ম ঝিনাইদহ জেলার দত্তনগর, চুয়াডাঙ্গার নুর নগর ও মেহেরপুরের বারাদীতে গম ক্ষেত ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছিল। বিএডিসির খামারগুলোর সব গম ক্ষেত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু চাষিরা সেসময় আক্রান্ত গম ক্ষেতের সঙ্গে ভালো ক্ষেতের গম কেটে বাড়ি নিয়ে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরপর ৩ বছর এ সব জেলায় চাষিদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করে। বিএডিসিও গম বীজ বিক্রি বন্ধ রাখে। এরপরও চাষিরা নিজেদের ঘরে রাখা বীজ দিয়ে গম চাষ করে। গত বছর ১৮ হাজার ৪০৪ হেক্টরে গম চাষ করে চাষিরা। এরমধ্যে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় ২০ হেক্টরে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক চন্ডি দাস কুন্ডু বলেন, এ সব ক্ষেতের গম ধ্বংস করা হয়েছিল। এ বছরও গম চাষ করতে নিষেধ করা হচ্ছে। গমের বদলে অন্য ফসলের চাষ করতে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বিএডিসির যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ রোকনুজ্জামান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মতে ৫ জেলায় গম বীজ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। ডিলারদের গম বীজ দেওয়া হয়নি। যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সঙ্গে পাবনা জেলাতেও গম বীজ বিক্রি করা হচ্ছে না বলে তিনি আরো জানান।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আব্দুল আজিজ বলেন, গমে ‘ব্লাস্ট’ ছত্রাকের আক্রমণ প্রতিরোধে কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যে জমিগুলোর গমে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছিল সেগুলোতে গম চাষ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশের গমে ‘ব্লাস্ট’ ছত্রাকের আক্রমণ হলো কিভাবে- এ প্রসঙ্গে গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা বলেন, কিভাবে এলো তা আমরা জানি না। তবে ‘হুইট ব্লাস্টের’ ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করে আমরা দেখেছি এরসঙ্গে ল্যাটিন আমেরিকার একটা ছত্রাকের সঙ্গে মিল আছে। তিনি বলেন, ব্রাজিল থেকে একবার কিছু গম আনা হয়েছিল। কিন্তু তা নিম্নমানের বলে আমদানিকৃত গমের কিছুটা ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তবে এটা বীজ নয় খাবার গম ছিল। তবে এ বিষয়টি নিয়েও আমরা গবেষণা করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। গম গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। ‘বারি গম-৩৩’ নামে জাতটি সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের পর গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গম গবেষণা কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথভাবে এ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে বলে তিনি জানান।

ড. নরেশ চন্দ্র বলেন, জাতটির জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৭টি। দানার রং সাদা, চকচকে ও আকারে মাঝারি। গমের ব্লাস্ট রোগ ছাড়াও জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী। একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধী অন্যদিকে জিংক সমৃদ্ধ। এর দানায় জিংকের মাত্রা ৫০-৫৫ পিপিএম। জাতটি তাপসহিষ্ণু এবং এর কাণ্ড শক্ত হওয়ায় গাছ সহজে হেলে পড়ে না। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ফলন হবে ৪ থেকে ৫ হাজার কেজি, যা অন্যান্য জাতের দ্বিগুণ।

তিনি বলেন, জাতটি জিংক সমৃদ্ধ এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সিমিটের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএসডিএ-এআরএস’ ল্যাবরেটরিতে গমের ব্লাস্ট রোগের জীবাণুর কৃত্রিম সংক্রমণের মাধ্যমে পরীক্ষা করে জাতটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া জাতটি যশোরের মাঠ পরীক্ষায়ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ‘বারি গম-৩৩’ জাতটি যত দ্রুত কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে কৃষকেরা ততই লাভবান হবে বলে তিনি জানান।