হাওর বার্তা ডেস্কঃ চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য অধিকাংশ সাক্ষীদের খুঁজে পাচ্ছেন না মামলা তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সাক্ষীরা নির্ধারিত ঠিকানায় না থেকে নতুন ঠিকানায় যাওয়ায় এ ধরনের সমস্যায় পড়ছেন তদন্ত সংস্থা।
সাক্ষীদের খুঁজে না পাওয়ায় মামলাটির প্রতিবেদনও দাখিল করতে পারছেন না তারা। এ জন্য মামলাটির তদন্তের জন্য আদালতের কাছে আরও সময়ের আবেদন করবে তদন্ত সংস্থা। অপরদিকে ১৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম নুর নবীর আদালতে সালমান শাহ অপমৃত্যুর মামলায় সাক্ষীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার মামা আলমগীর কুমকুম।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তার ভাগিনা সালমান শাহের মৃত্যুর আগের রাতে তার সঙ্গে পারিবারিক সমস্যার বিষয়ে ফোনে আলাপ হয়। তিনি ঢাকায় এসে সব সমস্যার সমাধান করবেন বলে সালমান শাহকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, চিত্রনায়ক সালমান শাহের অপমৃত্যুর মামলাটি অনেক পুরনো।
মামলায় যেসব সাক্ষী করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ নির্ধারিত ঠিকানায় না থেকে নতুন ঠিকানায় চলে গেছেন। র্নিধারিত ঠিকানায় সাক্ষীরা না থাকায় তাদের পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এরপরও তাদের খুঁজার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ মামলার ১০ জনের মতো সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এ আলোচিত মামলাটির আরও সাক্ষীর প্রয়োজন রয়েছে। ২০ নভেম্বর এ মামলার পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। এ দিন আমরা আদালতে মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করব। এবং মামলাটি সঠিক তদন্তের জন্য আরও সময় চেয়ে আবেদন করব।
এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলা পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এ দিন মামলা তদন্ত সংস্থা পিবিআই প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) পুনঃতদন্ত তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। ওই সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন।
নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে তদন্তভার প্রদান করেন।
মামলাটিতে র্যাবকে তদন্ত দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন।