হাওর বার্তা ডেস্কঃ খেজুর রস, বড়ই মধুর। আবহমান গ্রাম বাংলার অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে, খেজুর গাছের রস সংগ্রহ ঐতিহ্যের একটি অংশ হিসেবে এখনও টিকে রয়েছে। ব্যাপক পরিসরে না হলেও সীমিত আকারে প্রত্যেক বছরের শীত মৌসুমেই এই খেজুর রস পাওয়া যায়।
কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। হেমন্তের আগমনে পদধ্বনি পাওয়া যায় শীতের। আর শীতের সঙ্গে সম্পর্ক খেজুর রসের। হেমন্তকালেই শুরু হয় গাছিদের তোড়জোর। রস আহরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা। ইতিমধ্যে চারদিকে সেই আয়োজনই চোখে পড়ছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বগুড়ার শেরপুরেও শুরু হয়েছে খেজুর রস নামানোর কাজ। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে গাছ পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। আবার কোনো কোনো গ্রামে মাসখানেক আগেই গাছ পরিষ্কারের কাজ শেষ করেছেন তারা। ফলে কোনো গাছে পুরোদমে, আবার কিছু সংখ্যক গাছে অল্প অল্প করে রসও নামতে শুরু করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বরেন্দ্র এলাকা মির্জাপুর, শাহবন্দেগী, কুসুম্বী, বিশালপুর, ভবানীপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমান খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শীতের সুস্বাদু প্রাকৃতিক পানীয় খেজুর রস মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কাছে কোমল পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রথমে খেজুর গাছের ডালপালা কেটে পরিষ্কার করে নেন গাছিরা। এরপর গাছের একটি নির্দিষ্ট স্থান হালকা কেটে কয়েকদিন পরপর পরিষ্কার করেন। একাজে গাছিরা ধারালো অস্ত্র ছ্যান (স্থানীয় ভাষায়) ব্যবহার করেন। খেজুর গাছ প্রস্তুত করার পর রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়। খেজুর রস বড়ই মধুর। শীতের সকালে মানুষ খেজুর রসে দিয়ে মুড়ি খান।
সাধুবাড়ী গ্রামের গাছি মজিবর রহমান মজু সরদার জানান, শীত মৌসুমে গ্রামে গ্রামে খেজুর রসের ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যায়। খেজুর রসের পিঠা-পায়েস তৈরীর ধুম পড়ে যায়। জামাই-মেয়ে ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে এনে বাড়ি বাড়ি চলে শীতের বাহারি পিঠা উৎসব।
এ ছাড়া খেজুর রসের লালি, দানাদার, ও পাটালি গুড় বানানো হয়। এই গাছি আরো জানান, গাছের মাথা হালকাভাবে ছেটে দিয়ে প্রত্যহ বিকেলে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছ ভেদে ৬-৭ কেজি হারে রস পাওয়া যায়। সপ্তাহে ২-৩দিন পরপর রস সংগ্রহ করা হয়। এতে বেশি পরিমান রস পাওয়া যায়।
গাছিরা জানান, বাণিজ্যিকভাবে কেউ খেজুর গাছ লাগায় না। পতিত জমি, ভিঠা, জমির আইলসহ বিভিন্ন স্থানে একাই এসব খেজুর গাছ জন্ম নিয়েছে। একটি সময়ে এই উপজেলায় বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ ছিল। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষ সিংহভাগ খেজুর গাছ কেটে ফেলেছেন। এরপরও এ অঞ্চলে যেসব খেজুর গাছ রয়েছে তা থেকে সংগৃহীত খেজুর রস থেকে বিপুল পরিমান গুড় উৎপাদন সম্ভব হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণ জ্ঞানের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আন্তরিক হলে এখানকার খেজুর রস দেশীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তারা মনে করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান জানান, শীত মৌসুমে এই খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। সে মোতাবেক নভেম্বর থেকে শুরু করে মোটামোটি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। ইতিমধ্যেই এই উপজেলার গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ অভিযানে মাঠে নেমেছেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।