ঘাস। কিন্তু তা প্রাকৃতিক নয়। বিশেষভাবে তৈরি। মাঠের পাশ দিয়ে দেখা যাচ্ছে কার্পেট। এমন মাঠে ফুটবল খেলা হবে শুরুতে সেই ভাবনা বিস্ময় জাগাতে পারে। তবে পুরো কাজ শেষ হলে অবস্থাটা পাল্টে যাবে। তখন লম্বা ঘাসের বেশিরভাগ অংশই চলে যাবে রাবার দ্বারা আটকানো অংশের নিচে। কৃত্রিম ঘাস হবে নিরাপদ। বাড়বে বলের গতিও। তার আগে পর্যন্ত কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের বর্তমান অবস্থা এখন এমনই। মাঠের যে অংশে খেলা হবে তার পুরোটাই ঢাকা পড়েছে কৃত্রিম ঘাসে।
মাঠ ঘাসে ঢাকা পড়লেও ইনফিলের (টার্ফ বসানোর পরবর্তী কাজ) কাজটা এখনো শুরু হয়নি। সব কাজ শেষ হলে কৃত্রিম ঘাসের বেশিরভাগ অংশই ঢাকা পড়ে যাবে। তখন উপর থেকে কার্পেটও দেখা যাবে না। মাঠ টার্ফে ঢাকা পড়লেও দক্ষিণ পাশে কিছু অংশে এখনো ফাঁকা। সেই অংশে ইনফিলের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা হয়েছে। যে অংশে টার্ফ বসানো হয়েছে ইনফিলের কাজ শেষ হলে বাকি জায়গাটুকু খালি হবে। তখন বাকি অংশে টার্ফ বসিয়ে চূড়ান্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে। ফিফার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গ্রেট স্পোর্টস ইনফ্রার (ফিল্ড টার্ফের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ‘যেটুকু কাজ বাকি আছে পুরো কাজ বিবেচনায় এই অংশের পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি নয়। সেই কাজটুকু শেষ হতে এখন অপেক্ষা।’
ফিল্ড টার্ফের তথ্য অনুযায়ী, ইনফিলের কাজ শুরু হলে ৮ দিনের মধ্যে মাঠ খেলার উপযোগী হবে। এর আগে মাঠের বিভিন্ন অংশ চিহ্নিতকরণ (ফিল্ড মার্কিং এ্যান্ড ডেকোরেটিভ মার্কিং) সংক্রান্ত কাজের জন্য সময় প্রয়োজন হবে ৮ দিন। সেই কাজ এখন চলছে। ইনফিলের শুরু হওয়ার পর পুরো কাজ শেষ হতে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। এরপর ফিফা প্রতিনিধি দল মাঠ পর্যবেক্ষণ করবে। ফিফার চূড়ান্ত অনুমতি পেলেই মাঠ বুঝে পাবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এমনটিই জানিয়েছেন গ্রেট ইনফ্রা স্পোর্টসের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নওফেল।
রবিবার তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘ইনফিলের কাজ শুরু করতে আমাদের সবকিছু প্রস্তুত। শ্রমিকও রয়েছে। তারা কাজ করছে। যন্ত্রাদি আসার পর সব মিলিয়ে ১০দিনের বেশি সময় লাগবে না। তবে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি থাকলেও কাজ করা সম্ভব হবে না। এ সব হিসাব করতে হবে। তবে আমার মনে হয় সবকিছু সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে।’
বাফুফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ইনফিলের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি এখন যশোরের বেনাপোল বন্দরে আছে। সেগুলো ছাড় করাতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নিয়ে শুল্ক বিভাগে জমা দিতে হবে। সোমবারের মধ্যেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পাবে বাফুফে। পরে সেই কাগজ গ্রেট স্পোর্ট ইনফ্রাকে দিলে তারা শুল্ক বিভাগে তা জমা দেবে। শুল্ক বিভাগ এরপর সেই যন্ত্রাদি ছেড়ে দেবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এ সব প্রক্রিয়া শেষ করে যন্ত্রাদি মাঠে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাফুফের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।
দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেছেন, ‘বন্দরে কোনো জটিলতা হচ্ছে না। সব কাজ অনেক সহজেই হচ্ছে। আগামীকাল (সোমবার) ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার কথা। এরপর শুল্ক বিভাগে জমা হয়ে তা ছাড় করাতে দুই দিনের বেশি লাগার কথা নয়। ছাড় হয়ে গেলে যশোর থেকে তা আসতে যেটুকু সময় লাগে।’
সব প্রক্রিয়া শেষ করে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই কমলাপুর মাঠটি বুঝে পাবেন বলে আশা করছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। তিনি বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই আমাদের কাছে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তর করা হবে বলে বার বার আশ্বস্ত করা হচ্ছে ফিফার পক্ষ থেকে। তারা আমাদের বলছে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই মাঠটি আমাদের বুঝিয়ে দেবেন। তবে আশা করছি সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব শেষ করে অক্টোবরের শুরু থেকেই আমরা কমলাপুর মাঠে ফুটবল খেলা শুরু করতে পারব।’
টার্ফ বসানোর কাজ ছাড়াও মাঠের বাইরের অংশে সংস্কার করতে হবে। গ্যালারির বিভিন্ন অংশ ভাঙা-চোরা আছে। রং করাতে হবে। মাঠের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। এ সব সংস্কার কাজ অবশ্য করা হবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে। সেসব কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে তা জানাতে পারেননি কমলাপুর স্টেডিয়ামের প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম। তবে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম রবিবার দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘মাঠের ভিতরে এখন যে পরিবেশ তার সঙ্গে বাইরের পরিবেশটা একটু বেমানানই লাগছে। তাই গ্যালারি, ড্রেসিংরুমসহ সবকিছু সংস্কার করতে হবে। আরও সুবিধা বাড়াতে হবে। এ সব নিয়ে কাজ চলছে। আশা করছি টার্ফ বসানোর কাজ শেষ হওয়ার পরপরই বাকি সংস্কার কাজগুলোও দেখা যাবে। একবার কাজ শুরু হয়ে গেলে তা শেষ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’
উল্লেখ্য, প্রায় এক বছর আগে কমলাপুর মাঠে শুরু হয়েছে টার্ফ বসানোর কাজ। এপ্রিলের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল তা। সদ্য সমাপ্ত পেশাদার লিগের ম্যাচও হওয়ার কথা ছিল ওখানে। লিগ শেষ হয়ে গেছে ২২ আগস্ট। কিন্তু টার্ফ চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্ক বিভাগে দীর্ঘ সময় আটকা থাকার পর গত ২৩ জুন মাঠে এসেছে। এরপরও পার হয়ে গেছে দুই মাসের বেশি সময়। এখনো বলা যাচ্ছে না কবে নাগাদ শেষ হবে এই কাজ। অক্টোবরে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের খেলা হওয়ার কথা রয়েছে ওখানেই। তবে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ না করা গেলে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ নির্ধারিত সময়ে আয়োজন করাও পড়বে অনিশ্চয়তার মধ্যে।