শীতে চাঙ্গা থাকতে খান কমলা লেবু

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত মানেই হিমেল হাওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে গা ভাসিয়ে চলার দিন। সেই সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা এবং অবশ্যই ভুরিভোজের পর কমলা লেবুর কোষ খেতে খেতে রোদ পোওয়ানো। এটা বাঙালি জীবনের একটি অতি পরিচিত রুপ ।

কিন্তু প্রশ্ন হল, শীত এলেই কমলা লেবুর প্রতি বাঙালি সমাজের ভালোবাসা এত বেড়ে যায় কেন বলতে পারেন ? কেন বাড়ে জানা নেই। তবে শীতের চাদরের মতো কমলার কদর ও বেশ তুঙ্গে থাকে। বেশ কিছু সমীক্ষার পর এমনটা ধরণা করা গেছে যে, বহুদিন ধরে এমন প্রথাই চলে আসছে, যা অনেকে অন্ধের মতো অনুসরণ করছে মাত্র। কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করেন কেন সবাই কমলা লেবু খাই, একই পরিস্থিতি নিশ্চয় আপনাদের অনেকেরই ? তাহলে আর অপেক্ষা কেন ? চলুন জেনে আসি কেন কমলা লেবুর সাথে এত সখ্যতা আমাদের।

একাধিক গবেণষায় দেখা গেছে, কমলা লেবুতে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান, যেমন- পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইটোকেমিকাল এবং ফ্লেবোনয়েড নানাভাবে শরীরে গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ঠান্ডার সময় একাধিক রোগের হাত থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয় এই কমলা লেবু। এই যেমন ধরুন…

১. ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে

শীতকাল মানেই ত্বকের আদ্রতা কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে সৌন্দর্য কমে যাওয়া যেন খুবই স্বাভাবিক অবস্থা। তাই তো এই সময় সৌন্দর্য ধরে রাখতে স্কিনের আলাদা করে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠতে পারে কমলা লেবু। কারণ, নিয়মিত এই সাইট্রাস ফলটি খেলে শরীরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে, তেমনি অন্যদিকে বলিরেখা কমতে শুরু করে, কালো ছোপ দাগ মিলিয়ে যায় এবং ত্বক তুলতুলে হয়ে ওঠে। এক কথায় শীতের মৌসুমে ত্বকের পরিচর্যায় কমলা লেবুর কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

শীত মানেই ভুরিভোজ। শীত মানেই পিকনিকের দারুণ সময়। ফলে এই সময় ওজন বেড়ে যাওয়াটা একেবারেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এমন পরিস্থিতিতে যদি প্রতিদিন একটা করে কমলা লেবু খেতে পারেন, তাহলে ওজন বাড়ার চিন্তা থেকে কিন্তু মুক্তি মিলতে পারে!তবে কীভাবে ? কমলা লেবুর শরীরে প্রচুর মাত্রায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানটি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতিতে এবং শরীরকে বিষমুক্ত করতে যেমন বিশেষ ভূমিকা নেয়, তেমনি শরীরে ক্যালরির প্রবেশ যাতে কম পরিমাণে হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখার মধ্যে দিয়ে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩. শরীরের অন্দরে প্রদাহ কমায়

শীতকালে খেয়াল করে দেখবেন জয়েন্ট পেইনের কারণে ভোগান্তি খুব বেড়ে যায়। কারণ এই সময় দেহের অন্দরে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন মাত্রা ছাড়ায়, যে কারণে এমন পরিস্থিতি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও কিন্তু কমলা লেবু আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এই ফলটির শরীরে এমন কিছু উপাকারি উপাদান রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়

কমলা লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড এবং বিটা-ক্যারোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনো রোগই ধারের কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

৫.ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কমলা লেবুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যা রক্তচাপ একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই একটা কারণেও নিয়মিত কমলা লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

৬. অনিদ্রা দূর করে

নানা কারণে রাত্রে ঠিক মতো ঘুম হয় না? সেই সঙ্গে ক্লান্তিও যেন বাঁধ ভেঙেছে ? রোজ ডায়েটের সাথে কমলা লেবু থাকা চাই। কারণ, এই ফলটির শরীরে থাকা ফ্লেবোনয়েড, বেশ কিছু নিউরোট্রান্সমিটারকে অ্যাকটিভ করে দেয়, যা একদিকে যেমন অনিদ্রার সমস্যা দূর করে, তেমনি স্মৃতিশক্তি এবং কগনিটিভ পাওয়ার বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৭. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

কমলা লেবুতে উপস্থিত ফাইবার এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান দেহের অন্দরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, কমলা লেবুতে থাকা পটাশিয়ামও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এবার থেকে কমলা লেবুর খাওয়ার আগে নিশ্চয় আর প্রশ্ন জাগবে না মনে যে, সবাই শীতে অন্ধের মতো উপাদেয় এ কমলা লেবু খেয়ে থাকে শীতকালে !

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর