ঢাকা ০১:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উচুঁ জমিতে হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১৪:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৭
  • ৫২১ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেহেরপুরে গ্রামের পর গ্রাম বাণিজ্যিকভাবে হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। পলি দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ প্রকৃতির উর্বর মাটি হওয়ায় গ্রামের সমতল উচুঁ জমিতে মসলা জাতীয় ফসল হলুদ ভাল হচ্ছে। গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, আবাদী জমির বেশিরভাগ জমিতেই হলুদের চাষ। রাস্তার দু’পাশে ঢাল ঢাল পাতায় ঢাকা হলুদের ক্ষেত। হলুদ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চাষীরা।
হোগলবাড়ীয়া, মটমুড়া, আকুবপুর, মহাম্মদপুর এলাকাসহ কয়েকটি গ্রামে হলুদ চাষের উপযোগী জমি হিসাবে এসব জমিতে হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। ১০ কাঠা থেকে ৩/৪ বিঘা জমি পর্যন্ত আবাদ করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ বছর ধরে এ্ইসব গ্রামের চাষীরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি হলুদ চাষ করে আসছেন। প্রতিবছরই চাষীরা কমবেশি লাভবান হচ্ছেন। বিঘাপ্রতি ২০/২৫ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ করে বাজার দর ভাল হলে ৭০/৮০ হাজার টাকায় বাজারজাত করা যায়। ফলে খরচ বাদ দিয়ে কমবেশি ৪০/৫০ হাজার টাকা লাভ হয়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা, আমদহ, বুড়িপোতা, আমঝুপি, মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর, বাগোয়ান, আনন্দবাস ও গাংনীর হোগলবাড়ীয়া মাঠপাড়ার চাষীরা জানান, হলুদ চাষ খুব লাভজনক। বর্গা চাষীদের খরচ কিছুটা বেশি হলেও নিজের জমি হলে লাভ বেশি হয়। হলুদের মুখী বা আইঠি জমিতে মোটামুটি ৮/৯ ইঞ্চি দূরে দূরে সারিবদ্ধভাবে হলুদ লাগানো হয়। হলুদ এক বছরের মসলা জাতীয় ফসল। বছরের বৈশাখ মাসের দিকে হলুদ জমিতে রোপণ করা হয়। বছর শেষে অর্থ্যাৎ মাঘ-ফাল্গুন মাসে জমি থেকে হলুদ তোলা হয়।
চাষীরা আরও জানায়, আমাদের এলাকায় পাবনায় ও দখিনা জাতের হলুদ লাগানো হয়। বিঘাপ্রতি ৫ থেকে সাড়ে ৫ মণ বীজ রোপণ করলে বছর শেষে ফলন ভাল হলে বিঘাপ্রতি গড়ে ৭০/৮০ মণ কাঁচা হলুদ উত্তোলন করা হয়। কাঁচা অবস্থায় ৭শ’ থেকে এক হাজার টাকা মণ বিক্রি করা হয়ে থাকে। শুকনা হলুদ কোন বছর ৫/৬ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমণ বিক্রি হয়ে থাকে। হলুদ চাষে রাসায়নিক সার বেশি লাগে। পটাশ এবং ফসফেট সার প্রয়োগ পাশাপাশি সেচ বেশি দিলে ফলন ভাল হয়ে থাকে। হলুদ চাষে মাঝে মাঝে পটকা রোগ অর্থ্যাৎ পাতা শুকানো রোগ দেখা যায়। এই রোগ প্রতিরোধে চাষীরা বোরণ ব্যবহার করে থাকেন। জমিতে নোনা দেখা দিলে জিপসাম সার প্রয়োগ করা হয়।
চাষীরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি অফিসের কোন পরামর্শ এই এলাকার হলুদ চাষীরা পায়না। তারা জানায়, জমি থেকে হলুদ তোলা শেষ হলে এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও পাবনা, খুলনা, ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে আগত হলুদ ব্যবসায়ীরা চাষীদের নিকট থেকে হলুদ ক্রয় করে থাকে। হলুদ চাষে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান বা সরকারীভাবে সহযোগিতা করা হলে হলুদ চাষ আরও বৃদ্ধি হতো।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুজ্জামান জানান, এবছর এই জেলায় আশানুরূপ হলুদ চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে হলুদ চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ দিবস করা হয়েছে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উচুঁ জমিতে হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা

আপডেট টাইম : ০৫:১৪:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৭
হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেহেরপুরে গ্রামের পর গ্রাম বাণিজ্যিকভাবে হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। পলি দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ প্রকৃতির উর্বর মাটি হওয়ায় গ্রামের সমতল উচুঁ জমিতে মসলা জাতীয় ফসল হলুদ ভাল হচ্ছে। গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, আবাদী জমির বেশিরভাগ জমিতেই হলুদের চাষ। রাস্তার দু’পাশে ঢাল ঢাল পাতায় ঢাকা হলুদের ক্ষেত। হলুদ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চাষীরা।
হোগলবাড়ীয়া, মটমুড়া, আকুবপুর, মহাম্মদপুর এলাকাসহ কয়েকটি গ্রামে হলুদ চাষের উপযোগী জমি হিসাবে এসব জমিতে হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। ১০ কাঠা থেকে ৩/৪ বিঘা জমি পর্যন্ত আবাদ করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ বছর ধরে এ্ইসব গ্রামের চাষীরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি হলুদ চাষ করে আসছেন। প্রতিবছরই চাষীরা কমবেশি লাভবান হচ্ছেন। বিঘাপ্রতি ২০/২৫ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ করে বাজার দর ভাল হলে ৭০/৮০ হাজার টাকায় বাজারজাত করা যায়। ফলে খরচ বাদ দিয়ে কমবেশি ৪০/৫০ হাজার টাকা লাভ হয়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা, আমদহ, বুড়িপোতা, আমঝুপি, মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর, বাগোয়ান, আনন্দবাস ও গাংনীর হোগলবাড়ীয়া মাঠপাড়ার চাষীরা জানান, হলুদ চাষ খুব লাভজনক। বর্গা চাষীদের খরচ কিছুটা বেশি হলেও নিজের জমি হলে লাভ বেশি হয়। হলুদের মুখী বা আইঠি জমিতে মোটামুটি ৮/৯ ইঞ্চি দূরে দূরে সারিবদ্ধভাবে হলুদ লাগানো হয়। হলুদ এক বছরের মসলা জাতীয় ফসল। বছরের বৈশাখ মাসের দিকে হলুদ জমিতে রোপণ করা হয়। বছর শেষে অর্থ্যাৎ মাঘ-ফাল্গুন মাসে জমি থেকে হলুদ তোলা হয়।
চাষীরা আরও জানায়, আমাদের এলাকায় পাবনায় ও দখিনা জাতের হলুদ লাগানো হয়। বিঘাপ্রতি ৫ থেকে সাড়ে ৫ মণ বীজ রোপণ করলে বছর শেষে ফলন ভাল হলে বিঘাপ্রতি গড়ে ৭০/৮০ মণ কাঁচা হলুদ উত্তোলন করা হয়। কাঁচা অবস্থায় ৭শ’ থেকে এক হাজার টাকা মণ বিক্রি করা হয়ে থাকে। শুকনা হলুদ কোন বছর ৫/৬ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমণ বিক্রি হয়ে থাকে। হলুদ চাষে রাসায়নিক সার বেশি লাগে। পটাশ এবং ফসফেট সার প্রয়োগ পাশাপাশি সেচ বেশি দিলে ফলন ভাল হয়ে থাকে। হলুদ চাষে মাঝে মাঝে পটকা রোগ অর্থ্যাৎ পাতা শুকানো রোগ দেখা যায়। এই রোগ প্রতিরোধে চাষীরা বোরণ ব্যবহার করে থাকেন। জমিতে নোনা দেখা দিলে জিপসাম সার প্রয়োগ করা হয়।
চাষীরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি অফিসের কোন পরামর্শ এই এলাকার হলুদ চাষীরা পায়না। তারা জানায়, জমি থেকে হলুদ তোলা শেষ হলে এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও পাবনা, খুলনা, ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে আগত হলুদ ব্যবসায়ীরা চাষীদের নিকট থেকে হলুদ ক্রয় করে থাকে। হলুদ চাষে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান বা সরকারীভাবে সহযোগিতা করা হলে হলুদ চাষ আরও বৃদ্ধি হতো।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুজ্জামান জানান, এবছর এই জেলায় আশানুরূপ হলুদ চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে হলুদ চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ দিবস করা হয়েছে।