ঢাকা ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি কর্মকর্তার সংগ্রাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১১:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৭৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোনো ধরনের কৃত্রিম সার, রাসায়নিক, কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসলকেই অর্গানিক বলা হয়। জৈব সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় বিষমুক্ত চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তার পরামর্শে ইতিমধ্যে উপজেলার কয়েক’শ কৃষক চাষাবাদ করছেন জৈব পদ্ধতিতে। এমনই একজন কৃষক সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী। আগে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করলেও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি এখন জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এতে সফলও হয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে গ্রীণচাষী খেতাব অর্জন করেছেন তিনি।

তার উৎপাদিত সবজি বা ফসলাদির চাহিদা রয়েছে ওই এলাকায়। আর একজন কৃষক সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের দুদুমিয়া। ইতিমধ্যে তার কয়েক বিঘা জমিতে শুরু করেছেন জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ। সেক্সফেরোমন ট্রাপ ব্যবহার, কোচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছেন তার জমিতে।

কৃষক দুদমিয়া জানান, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর পরামর্শে তিনি রাসায়নিক সার ব্যবহার বাদ দিয়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এতে মাটির স্বাস্থ সুরক্ষায় যেমন জৈব সারের প্রয়োজন তেমনি উৎপাদিত সবজি মানব দেহের জন্যেও নিরাপদ ও সুস্বাস্থ রক্ষা হতে পারে।

তাই রাসায়নিক সার ব্যতিরেকে জৈব সারের ব্যবহার করছেন বলে তিনি জানান।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বাজার থেকে আমরা যেসব খাবার-দাবার ও সবজি কিনে খাই, তার প্রায় সবগুলোর মধ্যেই বিভিন্ন কৃত্রিম সার, রাসায়নিক মিশ্রিত থাকে। এর ক্ষতিকারক প্রভাব আমাদের সবার উপর পড়ছে। কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য, ফরমালিন ইত্যাদির যথেষ্ট ব্যবহারে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, লিভারের ক্ষতি সাধনসহ নানাবিধ রোগব্যাধির প্রকোপ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই অর্গানিক খাবার ও শাক-সবজি আমাদের নিজেদের জন্য তো দরকারই, শিশুদের জন্য এর প্রয়োজন আরও বেশি। এ কারণেই সদর উপজেলাকে বিষ মুক্ত চাষাবাদের মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।

এছাড়াও সদর উপজেলায় ২৮০ টি সিআইজি গ্রুপ ও ৩২০ টি এসএফজি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এই কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদের জৈব চাষে উঠান বৈঠক ও মাঠ দিবসের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদাণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জৈবসার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল এবং সবজির উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। জৈবসার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন খরচ রাসায়নিক সারের চেয়ে শতকরা ৫০-৬০ শতাংশ কম হয়। অর্গানিক খাবার ও শাক-সবজি হয়ত সামান্য ব্যয়বহুল। তবুও ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে আমাদের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বর্জন করতে হবে। আর এতে সবথেকে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। তবেই আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বিষমুক্ত দেশ গড়তে পারবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি কর্মকর্তার সংগ্রাম

আপডেট টাইম : ১১:১১:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোনো ধরনের কৃত্রিম সার, রাসায়নিক, কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসলকেই অর্গানিক বলা হয়। জৈব সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় বিষমুক্ত চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তার পরামর্শে ইতিমধ্যে উপজেলার কয়েক’শ কৃষক চাষাবাদ করছেন জৈব পদ্ধতিতে। এমনই একজন কৃষক সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী। আগে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করলেও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি এখন জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এতে সফলও হয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে গ্রীণচাষী খেতাব অর্জন করেছেন তিনি।

তার উৎপাদিত সবজি বা ফসলাদির চাহিদা রয়েছে ওই এলাকায়। আর একজন কৃষক সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের দুদুমিয়া। ইতিমধ্যে তার কয়েক বিঘা জমিতে শুরু করেছেন জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ। সেক্সফেরোমন ট্রাপ ব্যবহার, কোচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছেন তার জমিতে।

কৃষক দুদমিয়া জানান, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর পরামর্শে তিনি রাসায়নিক সার ব্যবহার বাদ দিয়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এতে মাটির স্বাস্থ সুরক্ষায় যেমন জৈব সারের প্রয়োজন তেমনি উৎপাদিত সবজি মানব দেহের জন্যেও নিরাপদ ও সুস্বাস্থ রক্ষা হতে পারে।

তাই রাসায়নিক সার ব্যতিরেকে জৈব সারের ব্যবহার করছেন বলে তিনি জানান।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বাজার থেকে আমরা যেসব খাবার-দাবার ও সবজি কিনে খাই, তার প্রায় সবগুলোর মধ্যেই বিভিন্ন কৃত্রিম সার, রাসায়নিক মিশ্রিত থাকে। এর ক্ষতিকারক প্রভাব আমাদের সবার উপর পড়ছে। কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য, ফরমালিন ইত্যাদির যথেষ্ট ব্যবহারে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, লিভারের ক্ষতি সাধনসহ নানাবিধ রোগব্যাধির প্রকোপ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই অর্গানিক খাবার ও শাক-সবজি আমাদের নিজেদের জন্য তো দরকারই, শিশুদের জন্য এর প্রয়োজন আরও বেশি। এ কারণেই সদর উপজেলাকে বিষ মুক্ত চাষাবাদের মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।

এছাড়াও সদর উপজেলায় ২৮০ টি সিআইজি গ্রুপ ও ৩২০ টি এসএফজি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এই কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদের জৈব চাষে উঠান বৈঠক ও মাঠ দিবসের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদাণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জৈবসার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল এবং সবজির উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। জৈবসার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন খরচ রাসায়নিক সারের চেয়ে শতকরা ৫০-৬০ শতাংশ কম হয়। অর্গানিক খাবার ও শাক-সবজি হয়ত সামান্য ব্যয়বহুল। তবুও ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে আমাদের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বর্জন করতে হবে। আর এতে সবথেকে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। তবেই আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বিষমুক্ত দেশ গড়তে পারবো।