ঢাকা ০১:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাটমোহরে হাঁসপালনে স্বাবলম্বী একটি পরিবার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে হাঁস পালন করে তার পুরো পরিবার এখন স্বাবলম্বী। কিছু দিন পূর্বেও যখন তাদের পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী ছিল আজ তার পরিবার সচ্ছলতায় আর্থিক দৈন্যতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বাঘলবাড়ি কৈ গ্রামে গিয়ে কথা হয় হাঁসের খামারি আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি জানান, এই খামার করার শুরুতে তিনি সামান্য কিছু হাঁসের বাচ্চা কিনে শুরু করেন। এরপর তিনি দেখতে পান অল্প পুঁজিতে তার ব্যাপক মুনাফা আসছে। তখন তিনি চিন্তা করেন হাঁসের সংখ্যা বাড়ানোর। গত বছর তিনি ৪০০ হাঁস পালন করে প্রতি মাসে খরচ বাদে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছিল তার। ডিম দেয়ার পর পরিণত বয়স্ক হাঁসগুলো বিক্রি করে দেন তিনি। তার দুই চোখে স্বপ্ন ভাসে। মনোনিবেশ করেন হাঁস চাষে। এ বছর তিনি তার খামারে পালন করছেন সাড়ে ৭০০ হাঁস। স্বপ্ন দেখছেন সুদিনের। আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান, পাঁচ শতক বসতভিটা ছাড়া অন্য কোনো জায়গা-জমি নেই তার। কয়েক বছর আগে অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন। পুকুরের লিজের মেয়াদ শেষ হলে ছয় বছর ধরে হাঁস পালন করছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে তাড়াশের মহাশৈল গ্রামের শাহীনের হ্যাচারি থেকে ৩০ টাকা করে ২২ হাজার ৫০০ টাকায় ৭৫০টি ক্যাম্বল জাতের হাঁসের বাচ্চা কেনেন তিনি। স্ত্রী জাহানারা খাতুন ও ছেলে সুলতান সার্বক্ষণিকভাবে সহায়তা করেন তাকে। এ ছাড়া মাসে নয় হাজার টাকা বেতনে সেলিম নামের এক শ্রমিক কাজ করেন তার খামারে। হাঁসগুলোর বয়স এখন পাঁচ মাস। ক্ষতিকর জেনেও হাঁসকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন বিলে জাল ফেলে শামুক ধরেন। এ ছাড়া প্রতিদিন এক মণ গম খাওয়ান হাঁসকে, যার দাম প্রায় এক হাজার ১০০ টাকা। চারজনের শ্রমের মূল্য এক হাজার ২০০ টাকা হিসেবে তার প্রতিদিন খরচ আসছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, হাঁসগুলো পূর্ণ বয়স্ক হলে শতকরা ৮০টি ডিম দিলে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি করে ডিম পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার ২০০ টাকা। তখন তিনি প্রতি মাসে প্রায় সোয়া লাখ টাকার ডিম বিক্রি করতে পারবেন। রাজ্জাকের স্ত্রী জাহানারা খাতুন জানান, ছেলে, বৌমা ও নাতিসহ পাঁচজনের পরিবার। সবাই আমরা হাঁসের খামারে পর্যায়ক্রমে শ্রম দেই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে খামার পরিষ্কার করে নৌকা থেকে শামুক নামিয়ে হাঁসগুলোকে খেতে দেই। পাঁচ মাস ধরে হাঁসের পেছনে টাকা ঢালছি। ব্র্যাক থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শামুক ধরার জন্য বড় একটা নৌকা এবং বাঁধাই জাল কিনেছি। বর্তমানে কয়েকটি হাঁস ডিম দেয়া শুরু করেছে। আশা করছি আগামী মাস খানেকের মধ্যে শতকরা ৮০টি হাস ডিম দেবে। এখন বিলে পানি আছে বাড়ির কাছেই হাঁস রাখছি। শুষ্ক মৌসুমে হাঁস নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। সে সময় বাড়ি ছেড়ে হাঁস নিয়ে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। রাতে নিরাপদে হাঁস রাখার জন্য চাটমোহর-মান্নাননগর সড়কের পাশে ৪ শতক জায়গা লিজ নিয়েছি। এর জন্য বছরে দুই হাজার ৫০০ টাকা জমির মালিককে দিতে হয়। আলোর জন্য করেছি  সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা। বাড়ির সবাই পরিশ্রম করছি সুখের আশায়, সুদিনের আশায়। যদি কিছু জায়গা জমি করতে পারি। চাটমোহরে কর্মরত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন চন্দ্র দেবনাথ জানান, চাটমোহরে ৫৪টি হাঁসের খামার রয়েছে। এ ছাড়া অনেকে বাড়িতে হাঁস পালন করেন। হাঁস আমাদের মাংস ও ডিমের জোগান দেয়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু হাঁস পালন করতে গিয়ে অনেকে বিল থেকে শামুক উত্তোলন করেন, যা মোটেও কাম্য নয়। ক্রমাগত বিল থেকে শামুক উত্তোলন করলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চাটমোহরে হাঁসপালনে স্বাবলম্বী একটি পরিবার

আপডেট টাইম : ০৪:২৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে হাঁস পালন করে তার পুরো পরিবার এখন স্বাবলম্বী। কিছু দিন পূর্বেও যখন তাদের পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী ছিল আজ তার পরিবার সচ্ছলতায় আর্থিক দৈন্যতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বাঘলবাড়ি কৈ গ্রামে গিয়ে কথা হয় হাঁসের খামারি আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি জানান, এই খামার করার শুরুতে তিনি সামান্য কিছু হাঁসের বাচ্চা কিনে শুরু করেন। এরপর তিনি দেখতে পান অল্প পুঁজিতে তার ব্যাপক মুনাফা আসছে। তখন তিনি চিন্তা করেন হাঁসের সংখ্যা বাড়ানোর। গত বছর তিনি ৪০০ হাঁস পালন করে প্রতি মাসে খরচ বাদে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছিল তার। ডিম দেয়ার পর পরিণত বয়স্ক হাঁসগুলো বিক্রি করে দেন তিনি। তার দুই চোখে স্বপ্ন ভাসে। মনোনিবেশ করেন হাঁস চাষে। এ বছর তিনি তার খামারে পালন করছেন সাড়ে ৭০০ হাঁস। স্বপ্ন দেখছেন সুদিনের। আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান, পাঁচ শতক বসতভিটা ছাড়া অন্য কোনো জায়গা-জমি নেই তার। কয়েক বছর আগে অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন। পুকুরের লিজের মেয়াদ শেষ হলে ছয় বছর ধরে হাঁস পালন করছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে তাড়াশের মহাশৈল গ্রামের শাহীনের হ্যাচারি থেকে ৩০ টাকা করে ২২ হাজার ৫০০ টাকায় ৭৫০টি ক্যাম্বল জাতের হাঁসের বাচ্চা কেনেন তিনি। স্ত্রী জাহানারা খাতুন ও ছেলে সুলতান সার্বক্ষণিকভাবে সহায়তা করেন তাকে। এ ছাড়া মাসে নয় হাজার টাকা বেতনে সেলিম নামের এক শ্রমিক কাজ করেন তার খামারে। হাঁসগুলোর বয়স এখন পাঁচ মাস। ক্ষতিকর জেনেও হাঁসকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন বিলে জাল ফেলে শামুক ধরেন। এ ছাড়া প্রতিদিন এক মণ গম খাওয়ান হাঁসকে, যার দাম প্রায় এক হাজার ১০০ টাকা। চারজনের শ্রমের মূল্য এক হাজার ২০০ টাকা হিসেবে তার প্রতিদিন খরচ আসছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, হাঁসগুলো পূর্ণ বয়স্ক হলে শতকরা ৮০টি ডিম দিলে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি করে ডিম পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার ২০০ টাকা। তখন তিনি প্রতি মাসে প্রায় সোয়া লাখ টাকার ডিম বিক্রি করতে পারবেন। রাজ্জাকের স্ত্রী জাহানারা খাতুন জানান, ছেলে, বৌমা ও নাতিসহ পাঁচজনের পরিবার। সবাই আমরা হাঁসের খামারে পর্যায়ক্রমে শ্রম দেই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে খামার পরিষ্কার করে নৌকা থেকে শামুক নামিয়ে হাঁসগুলোকে খেতে দেই। পাঁচ মাস ধরে হাঁসের পেছনে টাকা ঢালছি। ব্র্যাক থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শামুক ধরার জন্য বড় একটা নৌকা এবং বাঁধাই জাল কিনেছি। বর্তমানে কয়েকটি হাঁস ডিম দেয়া শুরু করেছে। আশা করছি আগামী মাস খানেকের মধ্যে শতকরা ৮০টি হাস ডিম দেবে। এখন বিলে পানি আছে বাড়ির কাছেই হাঁস রাখছি। শুষ্ক মৌসুমে হাঁস নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। সে সময় বাড়ি ছেড়ে হাঁস নিয়ে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। রাতে নিরাপদে হাঁস রাখার জন্য চাটমোহর-মান্নাননগর সড়কের পাশে ৪ শতক জায়গা লিজ নিয়েছি। এর জন্য বছরে দুই হাজার ৫০০ টাকা জমির মালিককে দিতে হয়। আলোর জন্য করেছি  সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা। বাড়ির সবাই পরিশ্রম করছি সুখের আশায়, সুদিনের আশায়। যদি কিছু জায়গা জমি করতে পারি। চাটমোহরে কর্মরত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন চন্দ্র দেবনাথ জানান, চাটমোহরে ৫৪টি হাঁসের খামার রয়েছে। এ ছাড়া অনেকে বাড়িতে হাঁস পালন করেন। হাঁস আমাদের মাংস ও ডিমের জোগান দেয়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু হাঁস পালন করতে গিয়ে অনেকে বিল থেকে শামুক উত্তোলন করেন, যা মোটেও কাম্য নয়। ক্রমাগত বিল থেকে শামুক উত্তোলন করলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।