ঢাকা ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝালকাঠিতে ব্রি-৪৭ ধানের জন্য কৃষকের হাহাকার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০১৭
  • ৩৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝালকাঠিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্রি-৪৭ প্রজাতি ধানের কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ উঠেছে। উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে বন্যা সহিষ্ণুতায় এ ধানের চাহিদা কৃষকদের মাঝে ব্যাপক হারে থাকায় কৃষকরা বিএডিসি বীজ বিপনন কেন্দ্র ও ডিলারদের দ্বারস্থ হয়ে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরছে।

এ বিষয়ে কৃষিবীদ মাহজুবা তাসনিম ঐশী জানান, ব্রি ধান ৪৭ লবণাক্ত এলাকায় বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী একটি ধান। বোরো মৌসুমের শুরুর দিকে অর্থাৎ চারা অবস্থায় জমিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এ অবস্থায় ব্রি ধান ৪৭ আবাদ করলে অন্যান্য বোরো ধানের চেয়ে অধিক ফলন পাওয়া যায়। এটি একটি লবণ সহিষ্ণু জাত, গাছের উচ্চতা ১০৫ সেন্টিমিটার, ডিগপাতা চওড়া লম্বা ও খাঁড়, চাল মাঝারি মোটা ও পেটে সাদা দাগ আছে, চারা অবস্থায় উচ্চ মাত্রায় লবণ সহনীয়, বয়স্ক অবস্থায় নিন্ম থেকে মধ্যম মাত্রায় লবণ সহনীয়। এ ধানের জীবনকাল ৪ মাস ২২ দিন। লবণাক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি এ ধান ৬.০ টন ফলন দিতে সক্ষম। ১-১৫ অগ্রহায়ন (১৫-৩০ নভেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপণ করতে হয়।

বিএডিসি ঝালকাঠির সহকারী পরিচালক শারমিন জাহান জানান, গত ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জেলায় মোট ৬ টন ব্রি-৪৭ জাতের ধানের ভিত্তি বীজ এসেছে। এখানের বিক্রয় কেন্দ্রে এসেছে ২ টন। বাকি ৪ টন ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলার ১৮ জন ডিলারের মাঝে বিক্রির জন্য বণ্টন করা হয়েছে। আমরা যে ২ টন পেয়েছি তা শুক্র ও শনিবারেই বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এখন কৃষকরা এ বীজ নিতে আসলেও আমরা দিতে পারি না।

বীজ বিক্রয় কেন্দ্রে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন রিপন নামের এক কর্মচারী। তিনি জানান, প্রতিটি ব্যাগে ১০ কেজি করে ব্রি-৪৭ ভিত্তি বীজ রয়েছে, যা ৫৮০ টাকা দরে প্রতি ব্যাগ বিক্রি হয়েছে। দেখা গেছে শুধু বিএডিসি’র প্যাডে নাম, পরিমাণ ও দর লিখে রেখেছেন। তাতে জ্যোতিষ ৬ ব্যাগ, উত্তম ৪ ব্যাগ, বাবুল ৫ ব্যাগ, পান্না মিয়া ৬ ব্যাগ, শামসুল আলম ৪ ব্যাগ, বেলাল গাজি ৫ ব্যাগ, ফারুক হোসেন ৪ ব্যাগ, আমজাদ হোসেন ৪ ব্যাগ নিয়েছেন বলে লেখা রয়েছে। তবে কৃষক কোথার এমন কোন ডকুমেন্ট কোথাও লেখা নেই।

শহরের বাসন্ডা এলাকার কৃষক খোকন শরীফ জানান, ৪দিন ধরে বিএডিসির বীজ বিপনন কেন্দ্রে ঘুরেছি। শেষ পর্যায়ে সেখান থেকে সাফ কথা জানিয়ে দিয়েছে বীজ শেষ হয়ে গেছে। তাই কর্মকর্তার কাছে এসেছি। আমরা মূল চাষী। বিঘায় বিঘায় জমি চাষাবাদ করি। আমরাই যদি বীজ না পাই, তাহলে কোন কৃষক সঠিকভাবে বীজ পেয়েছে ? বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি অভিযোগ করে জানান, বীজ এসছে ২৬ তারিখ বৃহস্পতিবারে। বিক্রি শেষ হয়েছে শুক্র ও শনিবারে। সরকারী বন্ধের মধ্যে কৃষকরা কিভাবে জানলো বীজ এসেছে। যারা নিয়েছে তারা আদৌ কৃষক কিনা তারও সঠিক কোন তথ্য নেই বিএডিসিতে। গোপনে বেশি মূল্যে তারা ডিলারদের কাছে বিক্রি করেছে। যা ডিলাররা বর্তমানে ৫৮০ টাকার বীজ ৮শ / ১হাজার টাকা করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হান্নান খান জানান, ব্রি-৪৭ জাতের ধানের ভিত্তি বীজ এসেছে শুনে গত ১ নভেম্বর বুধবারে যাই চাষীদের জন্য বীজ ক্রয় করতে। গিয়ে আলাপ করেই শুনতে পাই বীজ আসার ২/১ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী পরিচালক শারমিন জাহান বলেন, বীজ আসার পরে কৃষকদের মাঝেই শুক্র ও শনিবারে বিক্রি হয়ে গেছে। বীজ বিক্রির সবসময়ে আমাদের অফিস খোলা থাকে। আমাদের বিপণন কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দকৃত ২ টন বীজ চাষীদের কাছেই বিক্রি করা হয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফোনে জানিয়েছেন গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের এক ডিলার নাকি ১ হাজার টাকায় ১০ কেজি ব্রি-৪৭ ধানের বীজ বিক্রি করছেন। খোজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঝালকাঠিতে ব্রি-৪৭ ধানের জন্য কৃষকের হাহাকার

আপডেট টাইম : ০৭:৩১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝালকাঠিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্রি-৪৭ প্রজাতি ধানের কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ উঠেছে। উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে বন্যা সহিষ্ণুতায় এ ধানের চাহিদা কৃষকদের মাঝে ব্যাপক হারে থাকায় কৃষকরা বিএডিসি বীজ বিপনন কেন্দ্র ও ডিলারদের দ্বারস্থ হয়ে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরছে।

এ বিষয়ে কৃষিবীদ মাহজুবা তাসনিম ঐশী জানান, ব্রি ধান ৪৭ লবণাক্ত এলাকায় বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী একটি ধান। বোরো মৌসুমের শুরুর দিকে অর্থাৎ চারা অবস্থায় জমিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এ অবস্থায় ব্রি ধান ৪৭ আবাদ করলে অন্যান্য বোরো ধানের চেয়ে অধিক ফলন পাওয়া যায়। এটি একটি লবণ সহিষ্ণু জাত, গাছের উচ্চতা ১০৫ সেন্টিমিটার, ডিগপাতা চওড়া লম্বা ও খাঁড়, চাল মাঝারি মোটা ও পেটে সাদা দাগ আছে, চারা অবস্থায় উচ্চ মাত্রায় লবণ সহনীয়, বয়স্ক অবস্থায় নিন্ম থেকে মধ্যম মাত্রায় লবণ সহনীয়। এ ধানের জীবনকাল ৪ মাস ২২ দিন। লবণাক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি এ ধান ৬.০ টন ফলন দিতে সক্ষম। ১-১৫ অগ্রহায়ন (১৫-৩০ নভেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপণ করতে হয়।

বিএডিসি ঝালকাঠির সহকারী পরিচালক শারমিন জাহান জানান, গত ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জেলায় মোট ৬ টন ব্রি-৪৭ জাতের ধানের ভিত্তি বীজ এসেছে। এখানের বিক্রয় কেন্দ্রে এসেছে ২ টন। বাকি ৪ টন ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলার ১৮ জন ডিলারের মাঝে বিক্রির জন্য বণ্টন করা হয়েছে। আমরা যে ২ টন পেয়েছি তা শুক্র ও শনিবারেই বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এখন কৃষকরা এ বীজ নিতে আসলেও আমরা দিতে পারি না।

বীজ বিক্রয় কেন্দ্রে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন রিপন নামের এক কর্মচারী। তিনি জানান, প্রতিটি ব্যাগে ১০ কেজি করে ব্রি-৪৭ ভিত্তি বীজ রয়েছে, যা ৫৮০ টাকা দরে প্রতি ব্যাগ বিক্রি হয়েছে। দেখা গেছে শুধু বিএডিসি’র প্যাডে নাম, পরিমাণ ও দর লিখে রেখেছেন। তাতে জ্যোতিষ ৬ ব্যাগ, উত্তম ৪ ব্যাগ, বাবুল ৫ ব্যাগ, পান্না মিয়া ৬ ব্যাগ, শামসুল আলম ৪ ব্যাগ, বেলাল গাজি ৫ ব্যাগ, ফারুক হোসেন ৪ ব্যাগ, আমজাদ হোসেন ৪ ব্যাগ নিয়েছেন বলে লেখা রয়েছে। তবে কৃষক কোথার এমন কোন ডকুমেন্ট কোথাও লেখা নেই।

শহরের বাসন্ডা এলাকার কৃষক খোকন শরীফ জানান, ৪দিন ধরে বিএডিসির বীজ বিপনন কেন্দ্রে ঘুরেছি। শেষ পর্যায়ে সেখান থেকে সাফ কথা জানিয়ে দিয়েছে বীজ শেষ হয়ে গেছে। তাই কর্মকর্তার কাছে এসেছি। আমরা মূল চাষী। বিঘায় বিঘায় জমি চাষাবাদ করি। আমরাই যদি বীজ না পাই, তাহলে কোন কৃষক সঠিকভাবে বীজ পেয়েছে ? বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি অভিযোগ করে জানান, বীজ এসছে ২৬ তারিখ বৃহস্পতিবারে। বিক্রি শেষ হয়েছে শুক্র ও শনিবারে। সরকারী বন্ধের মধ্যে কৃষকরা কিভাবে জানলো বীজ এসেছে। যারা নিয়েছে তারা আদৌ কৃষক কিনা তারও সঠিক কোন তথ্য নেই বিএডিসিতে। গোপনে বেশি মূল্যে তারা ডিলারদের কাছে বিক্রি করেছে। যা ডিলাররা বর্তমানে ৫৮০ টাকার বীজ ৮শ / ১হাজার টাকা করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হান্নান খান জানান, ব্রি-৪৭ জাতের ধানের ভিত্তি বীজ এসেছে শুনে গত ১ নভেম্বর বুধবারে যাই চাষীদের জন্য বীজ ক্রয় করতে। গিয়ে আলাপ করেই শুনতে পাই বীজ আসার ২/১ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী পরিচালক শারমিন জাহান বলেন, বীজ আসার পরে কৃষকদের মাঝেই শুক্র ও শনিবারে বিক্রি হয়ে গেছে। বীজ বিক্রির সবসময়ে আমাদের অফিস খোলা থাকে। আমাদের বিপণন কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দকৃত ২ টন বীজ চাষীদের কাছেই বিক্রি করা হয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফোনে জানিয়েছেন গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের এক ডিলার নাকি ১ হাজার টাকায় ১০ কেজি ব্রি-৪৭ ধানের বীজ বিক্রি করছেন। খোজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।