পিরোজপুরের নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের বরইবুনিয়া গ্রামের বলেশ্বর নদের ওপর নির্মিত ৪০০ ফুট দৈর্ঘের বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। বরইবুনিয়া, চর বরইবুনিয়া, চর মাটিভাঙ্গা, চর ডাকাতিয়া ও বাগেরহাটের চিতলমারীর মানুষ প্রতিদিনের যোগাযোগে সাঁকোটিই ব্যবহার করেন। এটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সাধারণ মানুষকে প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে। গ্রামবাসী তাদের কষ্ট লাগবে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে একটি ব্রিজের আশায় রয়েছে। কিন্তু তাদের সে আশা অধরাই থেকে গেছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর গ্রামবাসী তাদের উদ্যোগে বাঁশের সাকোটি নির্মাণ করে চলাচলের ব্যবস্থা করে। কিন্তু এলাকায় বেশি লোক হওয়ায় সাঁকোটি মাঝেমধ্যে ভেঙে যায়। এতে সাধারণ মানুষ ভাঙা সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায় সমস্যায় পড়ে। এলাকাবাসী বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো সুফল পায়নি।
এ ব্যাপারে বরইবুনিয়া এলাকার মোস্তফা কামাল হায়দার বলেন, সত্তরের দশকে নদীটির নাব্যতা হারালে তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এ বি এম রেজাউল করিম এলাকাবাসীর সহায়তায় সাঁকোটি তৈরি করেন। পরে বিভিন্ন সময় সাঁকোতে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু কোনো প্রতিকার মিলছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ২০০ বাঁশ দিয়ে তৈরি সাঁকোটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বাঁশে পচন ধরে এবং চলাচলকারীদের প্রায় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে হয় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের। স্থানীয়রা জানায়, প্রায়ই সাঁকোটি ভেঙে সপ্তাহখানেক পর্যন্ত পারাপার বন্ধ থাকে।
এ ব্যাপারে মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহর আলী শেখ বলেন, সাঁকোটির জন্য সরকারি কোনো অনুদান বা সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বরইবুনিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাঁকো পার হয়েই যেতে হয়। তারা প্রায় সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হয়।
বরইবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ জামিম ইসলাম বলে, ‘প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। দীর্ঘ ৯ বছর আমি এ সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাচ্ছি। ছোটবেলায় আমি সাঁতার জানতাম না। তখন মা প্রতিদিন এ সাঁকোটি পার করিয়ে দিতেন। একদিন আমার মা পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন।’
মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী রহিমা আক্তার বর্ণা বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এ ভোগান্তি দেখে আসছি। এখন স্নাতক শ্রেণিতে পড়ি। কিন্তু ভোগান্তির শেষ হলো না। সরকারের কাছে আমি চাই এ স্থানে একটা ব্রিজ করে দেওয়া হোক। যাতে আগামী দিনের শিশুরা নির্বিঘ্নে স্কুলে যেতে পারে।’
নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ স্বপন শেখ বলেন, ‘প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হয়। আমি জনগুরুত্বপূর্ণ সাঁকোটির স্থলে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার দাবি জানিয়েও কোনো ফল পাইনি।’