হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচনী পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই তিন মাস পর দেশে ফিরে মাঠে নেমেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত সরকারি বাধা না পাওয়ায় কর্মীদের যে ঢল নেমেছে এবং ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাত্রিযাপন শেষে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ দিতে গেলে সমর্থকদের যে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখেছেন পথে পথে তাতে তিনিই নন বিএনপি নেতৃত্বেরও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
ফেনীতে যাওয়ার পথে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর আক্রমণ নিয়ে সরকারি দল ও বিএনপির মধ্যে যতোই পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হোক না কেন বিএনপি নেতৃত্ব মনে করে এই ঘটনা তাতেত অনুকূলেই গেছে। দেশবাসী বিশ্বাস করেছে, ফেনীর সরকারদলীয় গডফাদারদের ইঙ্গিতেই এ ঘটনা ঘটেছে। এতে একদিকে মানুষের সহানুভূতি যেমন তারা অর্জন করেছেন তেমনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলকে বিএনপি আবারো বলতে পারবে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে বাধাগ্রস্ত হবে। এতে করে তাদের সহায়ক সরকারের দাবি আরো জোরালো হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য তিন মাস যুক্তরাজ্যে থাকলেও সেখানেই নির্বাচনী পরিকল্পনা আরো বিস্তৃত করেছেন। আন্তর্জাতিক মহলের কারণেই সরকার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিমানবন্দরে লোকসমাগমে বাধা দেয়নি। দেশে ফিরে দলের সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও জাতীয় নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে ভবিষ্যত কর্মকৌশল নির্ধারণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সহায়ক সরকার নিয়ে বড় ধরণের চাপ রাখলেও বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতাদের মামলার বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় তা ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তবে আপাতত সরকারের সঙ্গে কোন মুখোমুখি অবস্থানে যেতে নারাজ বিএনপি। বিএনপি মনে করে শেখ হাসিনার অধীনেও নির্বাচনী পরিবেশ যদি গ্রহণযোগ্য হয়, বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতারা যদি অংশগ্রহণ করতে পারেন, অবাধ প্রচারণা চালাতে পারেন তাহলে গণরায় তাদের পক্ষে আসবে। যে জনমত সরকারের বিরুদ্ধে বইছে সেটিকে পক্ষে নিয়ে দৃশ্যমান করায় এখন বিএনপির লক্ষ্য। বিএনপি নেতৃত্ব মনে করে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠকের পর সরকারের বিনা বাধায় পুলিশী সহায়তায় খালেদা জিয়ার সর্বশেষ সফর তাদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে। তাই ফিরে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, হটকারী আন্দোলন বা সংঘাতের পথ নিতে নারাজ বিএনপি, অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারকে আলোচনার টেবিলে বসাতে বাধ্য করতে চায়। সেই লক্ষ্যে ফেনী হামলার ঘটনাকে জতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে তুলে ধরে এটাই বলবে, সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা প্রচারণা চালাতে পারবে না। এক্ষেত্রে সরকার আলোচনায় বসলে অর্ন্তবর্তী সরকারে তাদের প্রতিনিধিত্ব, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার ও নির্বাচনী লেবেং প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে। ইতিমধ্যে যে ক’জন জনপ্রিয় প্রার্থী মামলার রায়ে দণ্ডিত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার আশঙ্কায় পড়েছেন তাদের নিয়েও বিএনপি তেমন ভাবছে না।
বিএনপি চাইছে, শেখ হাসিনার অধীনে হলেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তাদের অংশগ্রহণ, বিএনপির বিশ্বাস নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেই ভোটের হাওয়া তাদের অনুকূলে বইতে থাকবে।