ঢাকা ০৫:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্রাই নদীতে বঙ্গবন্ধু ক্লাবের নামে সুতি দিয়ে মাছ শিকার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাটোরের সিংড়ার আত্রাই নদীতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের নামে বাঁধ, সুঁতিজাল দিয়ে মাছ শিকার করছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে আত্রাই নদী জুড়ে ৫টি পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টির ও অভিযোগ রয়েছে । এর ফলে একদিকে যেমন মাছসহ চলনবিলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। অন্যদিকে পানি দ্রুত নামতে না পারায় ইরি ধানের বীজতলাসহ গম, ভূট্রা, সরিষা ও করলার চাষাবাদ নিয়ে দু:চিন্তায় রয়েছে চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষক।

এদিকে সুতি মালিকরা তাদের অবৈধ জাল বাচাতে সিংড়ার মৎস্য অফিসের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জহুরুল হকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর অধিকাংশ সুতি থেকে মাছ ও টাকা যায় ওই অভিযুক্ত মৎস্য কর্মকর্তার বাড়িতে। সিংড়া মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিদিনই কতুয়াবাড়ীর আজাহার আলীর সুতির মাছ যাচ্ছে ওই কর্মকর্তার ব্যাগে।
সিংড়ার আত্রাই নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কতুয়াবাড়ী, চাদপুর ও বলিয়াবাড়ী এলাকায় আত্রাই নদী জুড়ে ৫টি পয়েন্টে বাঁধ ও সুঁতিজাল দিয়ে ছোট-বড় সব ধরণের মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী নিধন করা হচ্ছে। এটিতে জলজ কীটপতঙ্গ পর্যন্ত আটকা পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা জানান, চাদপুর এলাকায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের নামে বাঁধ ও সুঁতিজাল দিয়ে আত্রাই নদীর পানি আটকে নির্বিচারে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী শিকার করছে ক্লাবে সভাপতি এসএম রানা ও সাধারণ সম্পাদক টাইগার সহ স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা।

কতুয়াবাড়ী বাগানবাড়ী এলাকায় নদী দখল করে মাছ শিকার করছেন সোহাগবাড়ী গ্রামের আ’লীগ নেতা আজাহার আলী। কতুয়াবাড়ী-পাটকোল লোহার ব্রিজে বাধ দিয়ে পানি আটকে মাছ শিকার করছে ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান। বলিয়াবাড়ী লোহার ব্রীজের উজানে সুতি দিয়ে মাছ শিকার করছে ইউনিয়ন আ’লীগের সেক্রেটারী আলাউদ্দিন। চাদপুর ভাংগনে বাধ দিয়ে পানি আটকে মাছ শিকার করছে আ’লীগ কর্মী রাজু আহমেদ।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা টাইগার বলেন, তারা মাস খানেক ধরে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ক্লাবের উন্নয়নে এই বাধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে ক্লাব করে বাধ দিয়ে পানি আটক মাছ শিকার করা কি বৈধ ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই পৃথিবীতে কি বৈধ আছে? সবকিছুই তো অবৈধ? তাইসহ ওই ক্লাবের ছেলেরা মাছের টাকাগুলো দিয়ে এলাকায় সমাজসেবা মূলক কাজ করে যাচ্ছেন। আর এই পৃথিবীতে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আ’লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, তার এলাকায় দুটি সুতি চলছে। এতে দলীয় ছেলেরা জড়িত রয়েছে। তাদেরকে নিষেধ করলেও শোনে না। আর এবিষয়টি তিনি মৎস্য কর্মকর্তাকে অবগতও করেছেন।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, আত্রাই নদীতে বাঁধ ও সুতিজাল দিয়ে এভাবে পানি আটকে মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ ছোট পোকামাকড় ও জলজ প্রাণী শিকারে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা এলাকাবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’ তবে এর সাথে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় এটা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী বলেন, তিনি এই বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর রয়েছেন। এপর্যন্ত আত্রাই ও গুড়নদীসহ চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০টি মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করেছেন। মৎস্য বিভাগের বাজেট না থাকায় আর কোন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। আর সুতির সাথে জড়িত সহকারী মৎস্য কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ মাহমুদ বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু বানার বাধ ও সুতিজাল ধ্বংস করা হয়েছে। আর উপজেলা প্রশাসন ও মৎস বিভাগ এবিষয়ে যথেষ্ট তৎপর। তবে কৃষকের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ এমন কোন বাধ বা সুতি থাকলে জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আত্রাই নদীতে বঙ্গবন্ধু ক্লাবের নামে সুতি দিয়ে মাছ শিকার

আপডেট টাইম : ০৪:২৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাটোরের সিংড়ার আত্রাই নদীতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের নামে বাঁধ, সুঁতিজাল দিয়ে মাছ শিকার করছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে আত্রাই নদী জুড়ে ৫টি পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টির ও অভিযোগ রয়েছে । এর ফলে একদিকে যেমন মাছসহ চলনবিলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। অন্যদিকে পানি দ্রুত নামতে না পারায় ইরি ধানের বীজতলাসহ গম, ভূট্রা, সরিষা ও করলার চাষাবাদ নিয়ে দু:চিন্তায় রয়েছে চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষক।

এদিকে সুতি মালিকরা তাদের অবৈধ জাল বাচাতে সিংড়ার মৎস্য অফিসের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জহুরুল হকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর অধিকাংশ সুতি থেকে মাছ ও টাকা যায় ওই অভিযুক্ত মৎস্য কর্মকর্তার বাড়িতে। সিংড়া মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিদিনই কতুয়াবাড়ীর আজাহার আলীর সুতির মাছ যাচ্ছে ওই কর্মকর্তার ব্যাগে।
সিংড়ার আত্রাই নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কতুয়াবাড়ী, চাদপুর ও বলিয়াবাড়ী এলাকায় আত্রাই নদী জুড়ে ৫টি পয়েন্টে বাঁধ ও সুঁতিজাল দিয়ে ছোট-বড় সব ধরণের মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী নিধন করা হচ্ছে। এটিতে জলজ কীটপতঙ্গ পর্যন্ত আটকা পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা জানান, চাদপুর এলাকায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের নামে বাঁধ ও সুঁতিজাল দিয়ে আত্রাই নদীর পানি আটকে নির্বিচারে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী শিকার করছে ক্লাবে সভাপতি এসএম রানা ও সাধারণ সম্পাদক টাইগার সহ স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা।

কতুয়াবাড়ী বাগানবাড়ী এলাকায় নদী দখল করে মাছ শিকার করছেন সোহাগবাড়ী গ্রামের আ’লীগ নেতা আজাহার আলী। কতুয়াবাড়ী-পাটকোল লোহার ব্রিজে বাধ দিয়ে পানি আটকে মাছ শিকার করছে ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান। বলিয়াবাড়ী লোহার ব্রীজের উজানে সুতি দিয়ে মাছ শিকার করছে ইউনিয়ন আ’লীগের সেক্রেটারী আলাউদ্দিন। চাদপুর ভাংগনে বাধ দিয়ে পানি আটকে মাছ শিকার করছে আ’লীগ কর্মী রাজু আহমেদ।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা টাইগার বলেন, তারা মাস খানেক ধরে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ক্লাবের উন্নয়নে এই বাধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে ক্লাব করে বাধ দিয়ে পানি আটক মাছ শিকার করা কি বৈধ ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই পৃথিবীতে কি বৈধ আছে? সবকিছুই তো অবৈধ? তাইসহ ওই ক্লাবের ছেলেরা মাছের টাকাগুলো দিয়ে এলাকায় সমাজসেবা মূলক কাজ করে যাচ্ছেন। আর এই পৃথিবীতে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আ’লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, তার এলাকায় দুটি সুতি চলছে। এতে দলীয় ছেলেরা জড়িত রয়েছে। তাদেরকে নিষেধ করলেও শোনে না। আর এবিষয়টি তিনি মৎস্য কর্মকর্তাকে অবগতও করেছেন।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, আত্রাই নদীতে বাঁধ ও সুতিজাল দিয়ে এভাবে পানি আটকে মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ ছোট পোকামাকড় ও জলজ প্রাণী শিকারে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা এলাকাবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’ তবে এর সাথে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় এটা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী বলেন, তিনি এই বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর রয়েছেন। এপর্যন্ত আত্রাই ও গুড়নদীসহ চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০টি মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করেছেন। মৎস্য বিভাগের বাজেট না থাকায় আর কোন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। আর সুতির সাথে জড়িত সহকারী মৎস্য কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ মাহমুদ বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু বানার বাধ ও সুতিজাল ধ্বংস করা হয়েছে। আর উপজেলা প্রশাসন ও মৎস বিভাগ এবিষয়ে যথেষ্ট তৎপর। তবে কৃষকের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ এমন কোন বাধ বা সুতি থাকলে জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।