ধূমপান যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর-এটা আমরা সবাই জানি। ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা, যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা ধরনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অনেকেই ধূমপান নামক এই ঘাতককে চিরতরে নির্বাসনে দিতে চান কিন্তু নানা কারণে আর বিদায় জানানো হয় না। সম্প্রতি ধূমপানের আসক্তি থেকে নিজেকে রক্ষার ১৭টি উপায় বাতলে দিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মিরর অনলাইন। এগুলো অনুসরণ করলে ধূমপান ছাড়া সম্ভব।
কোন সময়ে ধূমপান ছাড়বেন তা ঠিক করেন।
১. ই-সিগারেট: আর কিছুদিনের মধ্যে বাজারে পাওয়া যাবে ই-সিগারেট। এই সিগারেট ধূমপানের অভ্যাস ছাড়তে সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকের চেয়ে এটি ৯৫% নিরাপদ। এতে অভ্যস্ত হলে আস্তে আস্তে ধূমপানের আসক্তি কমে যাবে।
২. ছেড়ে দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করুন: আপনি কত দিনের মধ্যে ধূমপান ছেড়ে দিতে চান তা নির্ধারণ করুন। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। ওই সময় পর্যন্ত সিগারেট খাওয়া চালিয়ে যান। তবে আগেই ছেড়ে দিবেন না। ছেড়ে দেওয়ার পর বন্ধু ও পরিবারকে জানান।
৩. ভিন্ন ব্র্যান্ড ও হাত ব্যবহার করুন: যদি আপনি একই ব্র্যান্ডের বা একই হাতের দুই আঙুলে করে সিগারেট খান তাহলে সে অভ্যাস ত্যাগ করুন। ব্র্যান্ড পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে হাতও পাল্টে ফেলুন। এতে বিরক্ত হয়ে ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন।
৪. ধূমপান করে না এমন বন্ধুদের সঙ্গে মিশুন: ধূমপান ছাড়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে যেসব বন্ধুরা ধূমপান করে না তাদের সঙ্গে উঠাবসা। প্রয়োজনে ধূমপান পছন্দ করেন না- এমন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তার চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিন।
৫. ধূমপানের সময় পাল্টে ফেলুন: দিনের কোনো সময়ে, কোথায়, কাদের সঙ্গে ধূমপান করেন তার সময়সূচি পরিবর্তন করুন। অর্থাৎ দিনের কোন সময়ে সিগারেট খাওয়ার জন্য আপনার স্পন্দন তৈরি হয় তা খেয়াল করে পাল্টে ফেলুন। খাবার পর বা কাজের ফাকেঁ সিগারেট খাওয়া অভ্যাস থাকলে ওই সময় আপনি অন্য কিছু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
৬. অকুপাঙ্কচার পদ্ধতি অবলম্বন: প্রয়োজনে অকুপাঙ্কচার পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। ধূমপান ছাড়তে এটি কার্যকরী কৌশল। অকুপাঙ্কচর হচ্ছে শরীরে সূঁচ ফুড়ে নিজে নিজেই ব্যথা অনুভব করা। এতে আসক্তির ঘোর কেটে যাবে।
৭. রুটিন পরিবর্তন করুন: সকালে নাশতার পর চায়ের সঙ্গে বা হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা পাল্টে ফেলুন। এটি ধূমপান ছাড়তে আপনাকে সাহায্য করবে।
৮. স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প: অনেকে সিগারেটের বিকল্প হিসেবে চকলেট খাওয়া আরম্ভ করে। তবে এটি কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার অনেকে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সিগারেটের বিকল্প হিসেবে চুইংগাম বা অ্যাপেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে।
৯. বিষক্রিয়া লক্ষ্য করুন: একটি ৫০০ মিলিলিটারের খালি প্লাস্টিক বোতল নিন। তাতে কয়েকটি সিগারেট ফেলুন। তারপর বোতলটি পানি ভর্তি করে ছিপি দিয়ে মুখ বন্ধ করুন। কিছুদিন পর দেখবেন তা বাদামী রঙ ধারণ করেছে এবং এর গন্ধ অত্যন্ত বিশ্রী। এতেই লক্ষ করা যায় সিগারেটের বিষক্রিয়া।
১০. সব সরঞ্জামাদি ছুঁড়ে ফেলুন: ধূমপান ছাড়ার জন্য সিগারেট, লাইটার, এ্যাস্ট্রেসহ সব সরঞ্জামাদি ছুঁড়ে ফেলুন। ধূমপানের আসক্তি মেটায় এরকম কোনো উপাদানের সঙ্গে থাকুন।
ধূমপান ছাড়ার জন্য সিগারেট, লাইটার, এ্যাস্ট্রেসহ সব সরঞ্জামাদি ছুঁড়ে ফেলুন
১১. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন: বাড়িঘর পরিষ্কার রাখুন। মাদুর, গৃহসজ্জার সামগ্রী ও নিজের পোশাক আশাক ধুয়ে ফেলুন। যাতে ধূমপান ছাড়ার পর কোনো কিছুতেই সিগারেটের গন্ধ না পাওয়া যায়। প্রয়োজনে ঘরে সুবাসিত মোমবাতি ব্যবহার করুন। প্রাণবন্ত পরিবেশ উপভোগ করুন।
১২. প্রিয়জনের কথা মনে করুন: আমরা সবাই ধূমপানের কুফল সম্পর্কে অবগত। যখন এর আসক্তি মাথায় চেপে বসে তখন প্রিয়জনদের কথা মনে করুন। মনে করুন প্রিয়জনদের সঙ্গেই আপনি সময় কাটাচ্ছেন। তাদের পাশেই আছেন।
১৩. বাদাম খাওয়া অভ্যাস গড়ে তুলুন: ধূমপান ছাড়তে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
১৪. অনলাইন ঘাঁটাঘাঁটি করুন: মাথায় ধূমপানের আসক্তি চেপে বসার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ঢুঁকে পড়ুন। প্রয়োজনে খেলাধূলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগে বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তায় ,খোশগল্পে মেতে উঠুন।
ধূমপান ছাড়তে ভেষজ চা খান
১৫. বেশি বেশি ফল খান: ধূমপান ছাড়তে বেশি বেশি সতেজ ফল, শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। একইসঙ্গে চর্বিযুক্ত খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে।
১৬. ভেষজ চা খান: নিকোটিন ছেড়ে দিলে প্রাথমিক অবস্থায় মানসিক দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। ধূমপানের পরিবর্তে কফির ক্যাফেইন মানসিক দুশ্চিন্তাও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ভেষজ চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
১৭. খোলা বাতাসে ঘোরাঘুরি করুন: সিগারেট টানে শরীরে সাময়িক ভালো লাগা তৈরি হতে পারে। মুক্ত বাতাসে ঘোরাঘুরি করে সে জায়গাটা পূরণ করা যায়। আপনি যখন খোলা বাতাসে ঘোরাঘুরি করবেন তখন আপনার ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করবে। মস্তিষ্ক চাপ থেকে মুক্তি পাবে। ফলে শরীরে ভালো লাগা তৈরি হবে।