হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাধিক ফসলি জমি কৃষি জমি হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। কৃষি জমি কোনো অবস্থাতেই নষ্ট করা যাবে না। ওই জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ, শিল্পকারখানা, ইটের ভাটা বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সব কৃষি জমি কেবল কৃষকরাই পাওয়ার ও ভোগদখলের অধিকার পাবেন। এসব বিধান রেখেই সরকার কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন-২০১৭ প্রণয়ন করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ আইন প্রণয়ন হলে কৃষি খাসজমি কৃষি ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ভূমিহীন ব্যতীত কৃষি খাস জমি অন্য কাউকে বন্দোবস্ত দেয়া যাবে না। সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারের জন্য অধিগ্রহণ করা যাবে না দুই বা তিন ফসলি জমি। অন্যদিকে সব জমির জন্য ভূমি জোনিং করা হবে। ভূমি জোনিং মানচিত্রে গ্রামের মৌজা, ইউনিয়নভিত্তিক ও পৌরসভার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক প্রস্তুত করা হবে। এ বিষয় ভূমি সচিব আবদুল জলিল জানান, আইন প্রণয়নের কাজ চলমান। কৃষি জমি এখন নানা ধরনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ইকোনমিক জোন হচ্ছে। আমরা চাই, সবার মতামত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য আইন করতে। অন্যথায় মামলা হয়ে যাবে। আইন প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। এখনই কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে বিপর্যয় ঘটে যাবে। কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়া এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে আইনটি চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র আরও জানায়, উল্লেখিত আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- ও সর্বনিম্ন ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা সর্বনিম্ন ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা ২০ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। এ আইনের অপরাধ দমনে জরুরি প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবেন। খসড়া আইনে বলা হয়, কৃষি জমি অর্থ ফসলি জমি। বনভূমি, গোচারণ ভূমি, খড় উৎপাদন, ব্যক্তিগত বনভূমি, ফলদ উদ্ভিদ উৎপাদন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদন, ফল ও ফুল উৎপাদন, শাকসবজি, মশলা, ডাল, তেল, কন্দাল, খাদ্য, আঁশজাতীয় ফসল, ঔষধি, সুগন্ধি, প্রাকৃতিক রং, বাঁশ, বেত, হোগলা, হোগলাপাতা ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য কৃষি জমি হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব জমিতে সরকারি কিংবা বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। শিল্প-কারখানা কিংবা সরকারি স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে ভূমির ঊর্ধ্বমুখী ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে হবে। আরও বলা হয়েছে, কৃষি জমিতে কোনো অবস্থাতেই চিংড়ি মহাল হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না। কৃষি জমিতে ক্ষতিকর কিছুর চাষাবাদ করা যাবে না। বিশেষ করে তামাক চাষ করা চলবে না।
কৃষি জমি ছাড়া অন্যান্য জমির শ্রেণী অনুসারে সুরক্ষার বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, যেসব জমি বনভূমি হিসেবে টিলা, পাহাড় শ্রেণী, জলাভূমি, চা-বাগান, ফলের বাগান, রাবার বাগান ও বিশেষ ধরনের বাগান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। এসব স্থানে কোনো ধরনের আবাসিক কিংবা শিল্প-কারখানা স্থাপন করা যাবে না। করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাল-বিল, হাওর, বাঁওড়, বিলঝিল ও জলাভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। এসব স্থান শুধু মৎস্যউৎপাদনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বালুমহাল, পাথর মহাল, বাগান, প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। যাদের স্বল্প পরিমাণ জমি রয়েছে তারা বাড়ি তৈরির প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এওয়াজ তথা বদল করে নিলে আরও ভালো হবে। এছাড়া নদনদী, বনভূমি, টিলা, পাহাড়, খেলার মাঠ, সড়ক ও জনপথ, রেলপথ ও তৎসংলগ্ন জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। সরকার দেশের সব জমির শ্রেণী নির্ধারণ করে দেবে। অর্থাৎ কোনো এলাকার জমি কোনো কাজে ব্যবহৃত হবে তা নির্ধারণ করে দেবে। সেই ক্ষেত্রে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, আবাসন, নদী, সেচ, নিষ্কাশন, পুকুর, জলমহাল, মৎস্য এলাকা, বনাঞ্চল, সড়ক ও জনপথ এবং রেল পথ, হাট-বাজার, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা, চা, রাবার ও হর্টিকালচার এলাকা, উপকূলীয় অঞ্চল, পর্যটন এলাকা, চরাঞ্চল, পরিবেশগতভাবে বিপন্ন এলাকা এবং অন্যান্য অঞ্চল এ আইনের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দেয়া হবে। সব জমির জন্য ভূমি জোনিং করা হবে। ভূমি জোনিং মানচিত্রে গ্রামের মৌজা, ইউনিয়নভিত্তিক ও পৌরসভার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক প্রস্তুত করা হবে। কোনো এলাকার ভূমির বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ কী এ সংক্রান্ত তথ্য ভূমি জোনিং মানচিত্রে দেয়া থাকবে। ভূমি জোনিংয়ের মানচিত্র তৈরিতে মাঠ পর্যায়ে ভূমির বর্তমান ব্যবহারের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, স্যাটালাইট ইমেজ বিশ্লেষণ, ডিজিটাল ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে জেলা ও উপজেলা ভূমি প্রশাসনের সহায়তা নেয়া হবে। সহায়তা নেয়া হবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের। সব শ্রেণীর ভূমি ব্যবহারে জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা এবং পৌর এলাকার জমি ব্যবহারে পৃথক কমিটি থাকবে। কমিটির অনুমোদন নিয়েই তা ব্যবহার করতে হবে।
ভূমি জোনিং আইনের অধীনে অপরাধের বিচার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা যাবে। জরুরি প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিচার করতে পারবে। জনসাধারণের কোনো অভিযোগ থাকলে সে বিষয় অভিযোগ দায়ের অথবা সরাসরি মামলা করা যাবে। অন্য কোনো আইনে যাহাই থাকুক না কেন, ভূমি জোনিং আইনের বিধান ভঙ্গ করলে অর্থাৎ কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করলে, বাংলাদেশ কোডের ২৪/১৯৭০ বিধান বলে জেলা প্রশাসক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে জমির শ্রেণীর পরিবর্তন করলে শ্রেণী পরিবর্তনকারীকে নিজ দায়িত্বে ওই জমি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে এ আইনের বিধানবলে মামলা করা হবে।