রোহিঙ্গারা আতঙ্কে এখনও রাখাইন ছাড়ছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাখাইনে সেনা অভিযান ও রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ করা নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও তা আমলে নিচ্ছে না মিয়ানমার। গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধ ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিন্তু এসবও কার্যকর কোনো প্রভাব ফেলছে না মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিদ্বেষীদের ওপর; খানিকটা শিথিল হলেও বন্ধ হচ্ছে না বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা স্রোত। আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা রেডক্রস বলছে, আতঙ্কে এখনও রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশে যারা আশ্রয় নিয়েছে, তারাও বাসস্থান ও খাদ্য সংকটে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের (আইসিআরসি) প্রধান ফ্যাব্রিজিও কারবোনি বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদীর ওপারে (মিয়ানমার অংশে) রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গা এক মাস ধরেই সেখানে অবস্থান করছে। নাফ পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে মাঝিকে দেয়ার মতো কোনো অর্থ তাদের হাতে নেই। তিনি জানান, এসব লোকজন নদীর কূলে অস্থায়ী বসবাস করছে; রেডক্রস তাদের প্লাস্টিকের শিট, খাবার ও পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে। আইসিআরসি প্রধান কারবোনি জানান, রাখাইনে সব রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে রেডক্রস ত্রাণ পৌঁছে দিতে চায় এ বিষয়টি মাথায় রেখে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে রেডক্রস।

ত্রাণ বিতরণের সুযোগ দিতে সম্মতি মিয়ানমারের : মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় জাতিসংঘকে আবার ত্রাণ তৎপরতার সুযোগ দিতে রাজি হয়েছে বলে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে। দীর্ঘদিনের অপুষ্টির কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকার চিত্র ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে উঠে আসার পর মিয়ানমারের এ ‘সবুজ সংকেত’ এলো। রাখাইনের ওই এলাকায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থা এর আগে ত্রাণ তৎপরতা চালালেও দুই মাস ধরে তা বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার। খবর রয়টার্স ও বিডিনিউজের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মুখপাত্র বেটিনা ল্যুশার শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, তারা এখন পর্যন্ত কেবল ত্রাণ তৎপরতা শুরু করার ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছেন। বিস্তারিত বিষয়ে এখনও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন কেমন তা আমাদের আগে দেখতে হবে। তার আগে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।’ রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে আগে ১ লাখ ১০ হাজার মানুষের মধ্যে রেশন হিসেবে খাবার বিতরণ করত বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গার পাশাপাশি স্থানীয় রাখাইন বৌদ্ধরাও ছিল। ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু করে মিয়ানমার। ইউনিসেফ মুখপাত্র মারিক্সি মেরকাডো বলেন, সেনা অভিযান শুরুর আগেই রাখাইনের বুথিডং ও মংডুতে রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বিপজ্জনক মাত্রায় ছিল। চার হাজার শিশুকে মারাত্মক অপুষ্টির চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল, যা ২৫ আগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর