হাওর বার্তা ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রগামী সব ফ্লাইটের যাত্রীদের বিশেষ তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নতুন বিধি জারি করা হয়েছে। নতুন এ নিয়মের আওতায় থাকছেন মার্কিন নাগরিকেরাও।
বিমানে যাত্রীদের সঙ্গে গোপনে বিস্ফোরক বহনের হুমকি ঠেকাতে ২৫ অক্টোবর বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যা কার্যকর হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে।
সব যাত্রীকে বিশেষভাবে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তার সব ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা হবে, পাসপোর্ট, ভিসা পরীক্ষা করা হবে। সঙ্গে থাকা মালামালও তল্লাশি করা হবে কঠোরভাবে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, আফ্রিকার যে বিমানবন্দর থেকেই ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওয়ানা দেবে, সেখানেই এই তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের (টিএসএ) মুখপাত্র লিসা ফার্বস্টাইন বলেন, নিরাপত্তাসংক্রান্ত এ নিয়ম যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, বিদেশি পর্যটক, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট পরিচালনা করে এমন সব এয়ারলাইনসকেই নতুন এ নিয়ম মেনে চলতে হবে।
লিসা ফার্বস্টাইন বলেন, যাত্রীর কাছে থাকা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোকে বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হবে সিকিউরিটি চেক পয়েন্টে। ফলে আগে একজন যাত্রীর বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে যে সময় লাগত, তার চেয়ে বেশি সময় লাগবে এখন। তবে সামগ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
টিএসএ থেকে এয়ারলাইনসগুলোকে জানানো হয়েছে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ১২০ দিন সময় পাবে তারা।
এর আগে গত জুনে এক আদেশে মধ্যপ্রাচ্যের আটটি এবং ইউরোপের দুটি বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটে যাত্রীদের হাতব্যাগে ল্যাপটপসহ বড় আকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ১২০ দিনের জন্য। এরপর গত জুলাইয়ে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সময় ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, প্রয়োজন আরো নতুন নিয়ম কিংবা কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, প্রতিদিন ১০৫ দেশের ২৮০টি বিমানবন্দর থেকে ১৮০টি এয়ারলাইনসের ২১০০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে প্রায় সোয়া ৩ লাখ যাত্রী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এয়ারপোর্টে অবতরণ করে থাকেন। এখন নতুন নিয়মের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে আগ্রহী ব্যবসায়ী, টুরিস্টদের শঙ্কায় ফেলবে। নতুন নিয়মে যাত্রী ব্যবস্থাপনায় সময় লাগবে বেশি। বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর কাজে জটিলতা ও যাত্রীদের ভোগান্তিও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস ও ব্যবসায়ী সংগঠন।
এমিরেটস, ইতিহাদ, কুয়েত, কাতার, সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ কার্যকর করার অংশ হিসেবে জেএফকে, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাস প্রভৃতি এয়ারপোর্টের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার আগেই ফ্লাইটের সব যাত্রীকে বিশেষ একটি ফরম দেবে। সেখানে উল্লেখ করতে হবে যাত্রীদের যাবতীয় তথ্য। যাত্রীরা কী কী মালালাম বহন করছেন, কী কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বা কোন দেশ থেকে ফিরছেন- এসব প্রশ্নের উত্তর সেখানে দিতে হবে। পাশাপাশি যাত্রীদের সংক্ষিপ্ত জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে।
এদিকে মার্কিন পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এয়ারলাইনসগুলো। বিভিন্ন এয়ারলাইনস এখন যাত্রীদের বাড়তি সময় হাতে নিয়ে বিমানবন্দরে আসতে অনুরোধ করছে।
জার্মানির লুফথানসা এয়ারলাইনস যাত্রীদের যাত্রার সময়ের অন্তত ৯০ মিনিট আগে চেক ইন করতে বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেল্টা এয়ারলাইনস নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে আসার জন্যে তাদের যাত্রীদের জানিয়ে দিয়েছে। নতুন এই বিধি অনুসরণের জন্য অতিরিক্ত সময় হাতে রাখারও পরামর্শ দিয়েছে ডেল্টা।
হংকংভিত্তিক ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ বুধবারের এক বিবৃতিতে বলেছে যে, লাগেজ ওজন করাসহ সিকিউরিটি স্ক্রিনিংয়ের আগের রীতি বাতিল হয়ে গেছে। এখন থেকে সবাইকে বিশেষ তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করতে হবে। যাদের কোনো লাগেজ থাকবে না, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হবে।