ঢাকা ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাসিরনগর উপজেলা সদরে হামলার সব আসামিই জামিনে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৮৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী ৩০ অক্টোবর পূর্ণ হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরে হামলার ঘটনার এক বছর। ২০১৬ সালের এই দিনে ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়ি-ঘর, মন্দির ভেঙে লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার এক বছর পার হতে চললেও এখনও হামলার বিচারই শুরু হয়নি। পাশাপাশি মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রায় সব আসামিই জামিনে রয়েছে।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর, নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত ১২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’চার জন ছাড়া সবাই জামিনে আছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামে রসরাজ দাস নামে জেলে পরিবারের এক নিরক্ষর যুবক ফেসবুকে পবিত্র কাবাঘর অবমাননা করেছে অভিযোগে তাকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় একদল যুবক। পরের দিন ৩০ অক্টোবর এলাকায় মাইকিং করে নাসিরনগর উপজেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ৩০ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা সদরে আহলে সুন্নাতুল জামাত এবং হেফাজত ইসলামের ব্যানারে পৃথক দু’টি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, এই সমাবেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেন আহলে সুন্নাতুল জামাত এবং হেফাজত ইসলামের নেতারা। পরে সমাবেশ থেকে একদল লোক হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর করে।

এ ঘটনার একবছর পার হলেও এখন পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বিচারের আওতায় আসেনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। নাসিরনগর সদরের গাংকুলপাড়া এলাকার মিনতি চৌধুরী, উষারাণী দাস এবং পূর্ণিমা রানী দাস, নমশুদ্রপাড়ার হরকুমার সরকার, ঘোষপাড়ার বাবুল রায় জানান, গতবছরের ঘটনা মনে করলে এখনও বুক কাঁপে তাদের। সেইদিন চোখের সামনে নিজের ঘর লুটপাট হতে দেখেছেন। এলাকার একটি মন্দিরও হামলার হাত থেকে রক্ষা পায়নি, সব ভেঙে দেওয়া হয়। এতো বড় ঘটনা ঘটেছে সবার চোখের সামনে। অনেকে মোবাইলে ভিডিও করে রেখেছে তারপরও জড়িতদের গত একবছরে আইনের আওতায় আনা হয়নি, বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট রাখেশ চন্দ্র দাস জানান, হামলার সময় যারা ট্রাক ভাড়া করে হামলাকারীদের নিয়ে এসেছিল সেই ট্রাকের মালিক-চালকরা এখনও আইনের বাইরে। একই সঙ্গে যারা হামলার দিন প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছিল, যাদের ভিডিওচিত্র ধারণ করা আছে সেই নাটেরগুরুদের এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি আদেশ চন্দ্র দেব বলেন, ‘ভিডিওচিত্রে যাদের ছবি আছে তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকে জেল থেকে জামিনেও বের হয়ে গেছে। আমরা চাই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আইনের আওতায় আসুক। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নাসিরনগর হামলার ঘটনার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। এক বছরের নতুন করে অন্তত দুইশত লোককে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা ইতোপূর্বে গ্রেফতার হয়নি। তাদেরকে অচিরেই আইনের আওতায় আনা হবে। পাশপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সঠিক তথ্য-প্রমাণসহ যেন আদালতে উপস্থাপন করা যায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ জন্যেই একটু দেরি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাসিরনগরের ঘটনায় বিচারের ক্ষেত্রে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। যেন নতুন করে দেশে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

উল্লেখ্য, নাসিরনগরে হামলার ঘটনার পর মোট ৮টি মামলা হয়। এসব মামলায় অন্তত আড়াই থেকে ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নাসিরনগর উপজেলা সদরে হামলার সব আসামিই জামিনে

আপডেট টাইম : ১১:৫৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী ৩০ অক্টোবর পূর্ণ হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরে হামলার ঘটনার এক বছর। ২০১৬ সালের এই দিনে ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়ি-ঘর, মন্দির ভেঙে লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার এক বছর পার হতে চললেও এখনও হামলার বিচারই শুরু হয়নি। পাশাপাশি মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রায় সব আসামিই জামিনে রয়েছে।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর, নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত ১২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’চার জন ছাড়া সবাই জামিনে আছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামে রসরাজ দাস নামে জেলে পরিবারের এক নিরক্ষর যুবক ফেসবুকে পবিত্র কাবাঘর অবমাননা করেছে অভিযোগে তাকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় একদল যুবক। পরের দিন ৩০ অক্টোবর এলাকায় মাইকিং করে নাসিরনগর উপজেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ৩০ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা সদরে আহলে সুন্নাতুল জামাত এবং হেফাজত ইসলামের ব্যানারে পৃথক দু’টি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, এই সমাবেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেন আহলে সুন্নাতুল জামাত এবং হেফাজত ইসলামের নেতারা। পরে সমাবেশ থেকে একদল লোক হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর করে।

এ ঘটনার একবছর পার হলেও এখন পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বিচারের আওতায় আসেনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। নাসিরনগর সদরের গাংকুলপাড়া এলাকার মিনতি চৌধুরী, উষারাণী দাস এবং পূর্ণিমা রানী দাস, নমশুদ্রপাড়ার হরকুমার সরকার, ঘোষপাড়ার বাবুল রায় জানান, গতবছরের ঘটনা মনে করলে এখনও বুক কাঁপে তাদের। সেইদিন চোখের সামনে নিজের ঘর লুটপাট হতে দেখেছেন। এলাকার একটি মন্দিরও হামলার হাত থেকে রক্ষা পায়নি, সব ভেঙে দেওয়া হয়। এতো বড় ঘটনা ঘটেছে সবার চোখের সামনে। অনেকে মোবাইলে ভিডিও করে রেখেছে তারপরও জড়িতদের গত একবছরে আইনের আওতায় আনা হয়নি, বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট রাখেশ চন্দ্র দাস জানান, হামলার সময় যারা ট্রাক ভাড়া করে হামলাকারীদের নিয়ে এসেছিল সেই ট্রাকের মালিক-চালকরা এখনও আইনের বাইরে। একই সঙ্গে যারা হামলার দিন প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছিল, যাদের ভিডিওচিত্র ধারণ করা আছে সেই নাটেরগুরুদের এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি আদেশ চন্দ্র দেব বলেন, ‘ভিডিওচিত্রে যাদের ছবি আছে তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকে জেল থেকে জামিনেও বের হয়ে গেছে। আমরা চাই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আইনের আওতায় আসুক। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নাসিরনগর হামলার ঘটনার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। এক বছরের নতুন করে অন্তত দুইশত লোককে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা ইতোপূর্বে গ্রেফতার হয়নি। তাদেরকে অচিরেই আইনের আওতায় আনা হবে। পাশপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সঠিক তথ্য-প্রমাণসহ যেন আদালতে উপস্থাপন করা যায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ জন্যেই একটু দেরি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাসিরনগরের ঘটনায় বিচারের ক্ষেত্রে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। যেন নতুন করে দেশে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

উল্লেখ্য, নাসিরনগরে হামলার ঘটনার পর মোট ৮টি মামলা হয়। এসব মামলায় অন্তত আড়াই থেকে ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।