হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে চুক্তি করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ব্যর্থ হয়েছে বলে ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ ওয়া জেয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ চায় যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু আমরা (মিয়ানমার) ধাপে ধাপে এগোচ্ছি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে সম্মত হয়েছি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে কোন চুক্তি হয়নি।’
এদিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণারয়ের সচিব ইউ টিন্ট মিন্ট বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় তাদের পুনবার্সন করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি’
মিয়ারমার সীমান্তবর্তী অপরাধ বিভাগের কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অং তে মিয়ান্ট বলেন, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে কোন কথা হয়নি। যা হয়েছে, তা হলো সহিংসতার পর মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে তাদের চিহ্নিত করে কিভাবে ফেরত আনা যায়। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বৈঠকে নিরাপত্তা ও সীমান্তে সহযোগিতা বিষয়ে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়াও বৈঠকে লিঁয়াজো অফিস খোলা, সন্ত্রাসী দমনে সহযোগিতা, মাদক পাচার রোধ, তথ্যের আদান-প্রদান, নিয়মিত বৈঠক করা এবং সীমান্তে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
যদিও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার সকালে মিয়ারমারের নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা হয়।
বৈঠকে সু চি জানান, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তার সরকার কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পাঁচটি প্রস্তাব এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বৈঠকে মিয়ানমার বাংলাদেশের কাছে একটা তালিকা দিয়েছে যে তালিকায় যারা রাখাইনে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তাদের নাম রয়েছে এবং তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ফেরত দিতে বলেছে।
সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মহাপরিচালক বিজিবি মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, মহাপরিচালক কোস্টগার্ড রিয়ার এডমিরাল এ এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সফিউর রহমান, মন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাসসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে মিয়ানমার সফরে যায় ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল। গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া এলে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তাদের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঢাকা সফরের আগ্রহের কথা জানানো হয়। পরে গত ২ অক্টোবর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর দপ্তরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে ঢাকায় এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই মিয়ানমারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নির্ধারিত হয়।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি পুলিশ চৌকিতে হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-নিপীড়ন শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর থেকে সেখান থেকে রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শুরু করে। গত দুই মাসে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জাতিসংঘ জানান। যদিও জাতিসংঘের এ হিসাবের সাথে রাখাইন রাজ্য সরকারের হিসাবের বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট অফিস।