ঢাকা ০১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থামেনি মিয়ানমারে নিষ্ঠুরতা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৭:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৭
  • ৩৩৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলছেই। দেশটির সেনাবাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নানা নিষ্ঠুরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ছেড়ে যাওয়ার জন্য নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাই এখনো জীবন বাজি রেখে অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে পালিয়ে আসছে দলে দলে রোহিঙ্গা। আসার পথে প্রাণ যাচ্ছে অনেকেরই। তার পরও নিরুপায় রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে পালাতেই বাধ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত হৃদয়বিদারক সেসব খবর উঠে আসছে। উঠে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনেও। বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ‘র‌্যাপিড রেসপন্স মিশন’-এর প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, শুধু জাতিগত নিধনই নয়, যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তারা যাতে আর ফিরে যেতে না পারে সে ব্যবস্থাও করে রাখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্তে মাইন পোঁতার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নামগন্ধও রাখতে চাইছে না দেশটিতে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার যে কথা বলছে মিয়ানমার সরকার, তার বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায়?

এটা এখন স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মিয়ানমার মুখে নানা রকম কথা বলছে, সেসব তাদের অন্তরের কথা নয়। এসব করে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমনের চেষ্টা করছে মাত্র। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, মিয়ানমার এসব করে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছে বলেই মনে হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্বিপক্ষীয় আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সহজেই বোধগম্য। তা সত্ত্বেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি সংকট সমাধানের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ যাতে আরো বেগবান হয় সে চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে।

নতুন-পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন যেভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে, তা অবর্ণনীয়। যেকোনো সময় মহামারি লেগে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের সামর্থ্যও সীমিত। তাই এদের ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন আরো বেশি করে এগিয়ে আসে, সে ব্যাপারেও প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে কোনো উগ্র বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেন তাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এমন সন্দেহে এর মধ্যেই কয়েকটি এনজিওর ত্রাণ তত্পরতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার খবর আসছে। অনেককে পুলিশ আটকও করেছে। এ জন্য রোহিঙ্গাদের অবস্থান এলাকা সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন।

অনেকেই ধারণা করছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হবে। মিয়ানমারে এখনো সহিংসতা থামেনি। কোনো রোহিঙ্গাই এখন সে দেশে ফিরে যেতে চাইবে না। গেলে আবারও তাদের হত্যা-নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান ও নিরাপত্তাসহ মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা বিধান করা জরুরি। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই শুধু সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। তার আগে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ব্যবস্থাপনার দিকটি সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

থামেনি মিয়ানমারে নিষ্ঠুরতা

আপডেট টাইম : ১১:২৭:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলছেই। দেশটির সেনাবাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নানা নিষ্ঠুরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ছেড়ে যাওয়ার জন্য নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাই এখনো জীবন বাজি রেখে অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে পালিয়ে আসছে দলে দলে রোহিঙ্গা। আসার পথে প্রাণ যাচ্ছে অনেকেরই। তার পরও নিরুপায় রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে পালাতেই বাধ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত হৃদয়বিদারক সেসব খবর উঠে আসছে। উঠে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনেও। বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ‘র‌্যাপিড রেসপন্স মিশন’-এর প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, শুধু জাতিগত নিধনই নয়, যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তারা যাতে আর ফিরে যেতে না পারে সে ব্যবস্থাও করে রাখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্তে মাইন পোঁতার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নামগন্ধও রাখতে চাইছে না দেশটিতে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার যে কথা বলছে মিয়ানমার সরকার, তার বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায়?

এটা এখন স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মিয়ানমার মুখে নানা রকম কথা বলছে, সেসব তাদের অন্তরের কথা নয়। এসব করে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমনের চেষ্টা করছে মাত্র। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, মিয়ানমার এসব করে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছে বলেই মনে হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্বিপক্ষীয় আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সহজেই বোধগম্য। তা সত্ত্বেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি সংকট সমাধানের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ যাতে আরো বেগবান হয় সে চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে।

নতুন-পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন যেভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে, তা অবর্ণনীয়। যেকোনো সময় মহামারি লেগে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের সামর্থ্যও সীমিত। তাই এদের ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন আরো বেশি করে এগিয়ে আসে, সে ব্যাপারেও প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে কোনো উগ্র বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেন তাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এমন সন্দেহে এর মধ্যেই কয়েকটি এনজিওর ত্রাণ তত্পরতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার খবর আসছে। অনেককে পুলিশ আটকও করেছে। এ জন্য রোহিঙ্গাদের অবস্থান এলাকা সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন।

অনেকেই ধারণা করছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হবে। মিয়ানমারে এখনো সহিংসতা থামেনি। কোনো রোহিঙ্গাই এখন সে দেশে ফিরে যেতে চাইবে না। গেলে আবারও তাদের হত্যা-নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান ও নিরাপত্তাসহ মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা বিধান করা জরুরি। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই শুধু সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। তার আগে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ব্যবস্থাপনার দিকটি সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে।