ঢাকা ১০:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টিকা কর্মসূচি রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গাদের কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) থেকে এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্ত পার হয়ে এখনো প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করতেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), ইউনিসেফ এবং বেশ কয়েকটি এনজিওর সহযোগিতায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া কর্মসূচির প্রথম দিনেই ৮৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়া হয়। আগামী সাড়ে তিন সপ্তাহে সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

টিকাদানের দ্বিতীয় ধাপ আগামী নভেম্বরে শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে এক থেকে পাঁচ বছরের প্রায় আড়াই লাখ শিশুকে টিকা দেয়া হবে।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়, কক্সবাজারে শুরু হওয়া কলেরার টিকাদান কর্মসূচি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর আগে গত বছর হাইতিতে এ রকম টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেখানে টিকা দেয়া হয় সর্বোচ্চ প্রায় নয় লাখ হাইতিয়ানকে। সারা বিশ্বে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর ৯৫ হাজার মানুষ মারা যায়। আর এই রোগে আক্রান্ত হয় প্রতিবছর প্রায় ২৯ লাখ মানুষ।

এখন পর্যন্ত কলেরায় আক্রান্ত হয়ে কোনো রোহিঙ্গার মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ডব্লিউএইচও বলছে, কমপক্ষে ১০ হাজার ২৯২ টি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোহিঙ্গাকে তারা চিহ্নিত করেছেন, যাদের মধ্যে কলেরার উপসর্গ রয়েছে। তাই কলেরার প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগে তা প্রতিরোধে এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ভেজা, কাদা ও জনাকীর্ণতার কারণে বাংলাদেশের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের সংকটও এখানে প্রবল। অধিকাংশ রোহিঙ্গাকেই দিনে একবেলা খেয়ে থাকতে হয়। তাদের বৃষ্টিতে ভিজতে হয় প্রায় নিয়মিতই।

কক্সবাজারের অস্থায়ী শিবির থেকে গুরা বানু নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘এখানে খুবই কম শৌচাগার। অসংখ্য মানুষের কারণে যেগুলো আছে, সেগুলোও তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভরে যায় এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। আমরা দিনের এক বা দুবেলা খেয়ে থাকতে পারি, কিন্তু শৌচাগার ব্যবহার না করে তো থাকা সম্ভব না।’ মাহমুদ শাকের নামে আরেক রোহিঙ্গা জানান, তাদের কাছাকাছি কোনো পানির ব্যবস্থা নেই।

ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি ড. নেভারাত্নাসামি প্যারানিথারেন বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা রোগীদের বিশ্লেষণ করেছি। আগামী সপ্তাহে সেটার ফল হাতে এলে আমরা বলতে পারব এখানে কত রোহিঙ্গা কলেরায় আক্রান্ত। বিচার-বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করেই আমরা এখানে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছি। আশা করছি, এই কর্মসূচির কারণে ইয়েমেন কিংবা অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।’

রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শিবিরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র ইয়ান্ট ইসলাইল বলেন, ‘কলেরার মতো বিপর্যয় মোকাবিলায় পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সেটা ব্যাপক হারে কমছে। তাদের বিশুদ্ধ পানি, আশ্রয় ও সাহায্য প্রয়োজন।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টিকা কর্মসূচি রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে

আপডেট টাইম : ০৫:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গাদের কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) থেকে এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্ত পার হয়ে এখনো প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করতেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), ইউনিসেফ এবং বেশ কয়েকটি এনজিওর সহযোগিতায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া কর্মসূচির প্রথম দিনেই ৮৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়া হয়। আগামী সাড়ে তিন সপ্তাহে সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

টিকাদানের দ্বিতীয় ধাপ আগামী নভেম্বরে শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে এক থেকে পাঁচ বছরের প্রায় আড়াই লাখ শিশুকে টিকা দেয়া হবে।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়, কক্সবাজারে শুরু হওয়া কলেরার টিকাদান কর্মসূচি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর আগে গত বছর হাইতিতে এ রকম টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেখানে টিকা দেয়া হয় সর্বোচ্চ প্রায় নয় লাখ হাইতিয়ানকে। সারা বিশ্বে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর ৯৫ হাজার মানুষ মারা যায়। আর এই রোগে আক্রান্ত হয় প্রতিবছর প্রায় ২৯ লাখ মানুষ।

এখন পর্যন্ত কলেরায় আক্রান্ত হয়ে কোনো রোহিঙ্গার মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ডব্লিউএইচও বলছে, কমপক্ষে ১০ হাজার ২৯২ টি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোহিঙ্গাকে তারা চিহ্নিত করেছেন, যাদের মধ্যে কলেরার উপসর্গ রয়েছে। তাই কলেরার প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগে তা প্রতিরোধে এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ভেজা, কাদা ও জনাকীর্ণতার কারণে বাংলাদেশের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের সংকটও এখানে প্রবল। অধিকাংশ রোহিঙ্গাকেই দিনে একবেলা খেয়ে থাকতে হয়। তাদের বৃষ্টিতে ভিজতে হয় প্রায় নিয়মিতই।

কক্সবাজারের অস্থায়ী শিবির থেকে গুরা বানু নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘এখানে খুবই কম শৌচাগার। অসংখ্য মানুষের কারণে যেগুলো আছে, সেগুলোও তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভরে যায় এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। আমরা দিনের এক বা দুবেলা খেয়ে থাকতে পারি, কিন্তু শৌচাগার ব্যবহার না করে তো থাকা সম্ভব না।’ মাহমুদ শাকের নামে আরেক রোহিঙ্গা জানান, তাদের কাছাকাছি কোনো পানির ব্যবস্থা নেই।

ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি ড. নেভারাত্নাসামি প্যারানিথারেন বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা রোগীদের বিশ্লেষণ করেছি। আগামী সপ্তাহে সেটার ফল হাতে এলে আমরা বলতে পারব এখানে কত রোহিঙ্গা কলেরায় আক্রান্ত। বিচার-বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করেই আমরা এখানে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছি। আশা করছি, এই কর্মসূচির কারণে ইয়েমেন কিংবা অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।’

রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শিবিরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র ইয়ান্ট ইসলাইল বলেন, ‘কলেরার মতো বিপর্যয় মোকাবিলায় পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সেটা ব্যাপক হারে কমছে। তাদের বিশুদ্ধ পানি, আশ্রয় ও সাহায্য প্রয়োজন।’