ঢাকা ০৬:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুঃখ ঘুচছে ডিএনডিবাসীর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৩০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবশেষে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধের ভেতরে ‘অল্প বৃষ্টিতেই’ জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবসান ঘটতে যাচ্ছে। রোববার (১৫ অক্টোবর) শুরু হতে যাচ্ছে ডিএনডির জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করবে সেনাবাহিনী। দুই বছরেরও বেশি সময়ে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আগামী বর্ষা মৌসুমে অন্তত জলাবদ্ধতা হবে না এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। এমপি শামীম ওসমানের ধারণা, প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে শেষ হলে ঢাকার অনেক অভিজাত এলাকা থেকে ডিএনডির ভেতরের পরিবেশ ও দৃশ্যপট এগিয়ে থাকবে।

ডিএনডির এ প্রকল্প উদ্বোধনের আগে ১৫ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ ও ১৯ অক্টোবর ফতুল্লা এলাকায় সুধী সমাবেশ হতে যাচ্ছে। এই দুইটি এলাকা নিয়েই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠিত, যার এমপি শামীম ওসমান। ৫৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে ডিএনডি বাঁধ, তার মধ্যে ফতুল্লা এলাকাটিই প্রায় ৬০ শতাংশ। আর সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটিও ডিএনডি বাঁধের ভেতরে। এটা আবার সিটি করপোরেশনের (নাসিক) আওতাধীন এলাকা। মঙ্গলবার সিদ্ধিরগঞ্জে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করতে গিয়ে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ডিএনডির জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে সরকার এরই মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। রোববার এ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতার এ সমস্যা সমাধান হবে। জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা এলেই দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার শিকার হয় ডিএনডি এলাকার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত পানি ও বসতবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের পানি। সবশেষ এবার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়েও জলাবদ্ধতার কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে ডিএনডির ভেতরের মানুষের আনন্দ পানিতে ধুয়ে যায়। কোরবানির পশু রাখারও শুকনো স্থান পায়নি অনেকে।

শামীম ওসমান জানান, ‘ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৮০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হলেও আমাদের ধারণা সেটা এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ শুধু খাল উদ্ধার নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নয়। বরং পাশাপাশি প্রত্যেক এলাকা ও বসতবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইন সংযুক্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা বলতে আমরা বনানী, গুলশান, বারিধারাকে বুঝি। কিন্তু সেনাবাহিনী, পরিকল্পনা ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে যে ভিডিও দেখানো হয়েছে; সেটা দেখে আমি অভিভূত। কারণ এটা বাস্তবায়ন হলে এসব এলাকার চেয়েও বেশি উন্নত হবে ডিএনডি এলাকা। এটা যে কত বড় পাওয়া হবে, সেটা বাস্তবায়ন না হলে কেউ বুঝতে পারবে না। তিনি বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও পানি সম্পদমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। শামীম ওসমান বলেন, ১৫ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ ও ১৯ অক্টোবর ফতুল্লায় যে সমাবেশ হবে সেখানে আমি সব শ্রেণীর মানুষের উপস্থিতি চাচ্ছি। কারণ এ উন্নয়নে কোনো ভেদাভেদ নেই। ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে, সেটাই বড় কথা। এটাই তো রাজনীতি।

শামীম ওসমানের মতে, সেনাবাহিনী এ কাজে কোনো লাভ করবে না। তারা দেশপ্রেমিক। জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। সে কারণেই আমাদের সবার আস্থা এ সেনাবাহিনীর ওপর। তিনি বলেন, ডিএনডি বাঁধের ভেতরে পানি নিষ্কাশনের যেসব খাল আছে তার বেশিরভাগই দখলে চলে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি পাম্প অবধি যেতে পারে না। এতে করেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা বৃষ্টি হলেই বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজটি হলে এসব অবৈধ খাল দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালগুলো পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে বলে মনে করেন এখানকার অধিবাসীরা। এসব কারণেই সেনাবাহিনী কাজটি করায় স্বস্তি পাচ্ছে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করা লাখ লাখ মানুষ।

জানা গেছে, ইরি ধান চাষাবাদের জন্য ১৯৬৫ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। ৩২ দশমিক ৮ কিলোমিটার ডিএনডি বাঁধের ভেতর ৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় অন্তত ২০ লাখ লোকের বসবাস। তখন ডিএনডির ভেতর সেচ প্রকল্প ছিল ৫ হাজার ৬৪ হেক্টর। সূত্র জানায়, ডিএনডি বাঁধের ভেতর কংস নদ এবং নলখালী খালের মতো ৯টি খাল ছিল; যা ডিএনডির ইরিগেশন প্রজেক্টে সেচ খাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এসব খালের ছিল আরও ৯টি শাখা খাল। এছাড়াও ছিল ২১০টি আউটলেট, ১০টি নিষ্কাশন খাল। এসব খালের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ১৮৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ইনটেক খাল, ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেইন ক্যানেল টার্ন আউট খাল রয়েছে। এর মধ্যে চ্যানেল-১ খালের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৯০ কিলোমিটার, চ্যানেল-২ এর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, পাগলা খাল ৩ কিলোমিটার, জালকুড়ি খাল ২ দশমিক ১০ কিলোমিটার, শ্যামপুর খাল ২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার, ফতুল্লা খাল ১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার ও সেকেন্ডারি চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। কংস নদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই। এসব খালের অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আশির দশকের পর থেকে লোকজন ডিএনডি বাঁধের ভেতর জমি কিনে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, ইটের ভাটা, ছোট-বড় শিল্প-কারখানা নির্মাণ করে। কিন্তু জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় খাল দখল ও ভরাট করে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, কল-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ৯ আগস্ট একনেকের সভায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) সেচ প্রকল্প এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫৫৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ডিএনডি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (ফেজ-২)’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ওই প্রকল্প অনুমোদনের পর ডিএনডির অধিবাসীরা যেমন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, তেমনি বিভিন্ন এলাকায়ও বইতে শুরু করে খুশির জোয়ার। সর্বশেষ ২১ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ডিএনডি এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দুঃখ ঘুচছে ডিএনডিবাসীর

আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবশেষে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধের ভেতরে ‘অল্প বৃষ্টিতেই’ জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবসান ঘটতে যাচ্ছে। রোববার (১৫ অক্টোবর) শুরু হতে যাচ্ছে ডিএনডির জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করবে সেনাবাহিনী। দুই বছরেরও বেশি সময়ে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আগামী বর্ষা মৌসুমে অন্তত জলাবদ্ধতা হবে না এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। এমপি শামীম ওসমানের ধারণা, প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে শেষ হলে ঢাকার অনেক অভিজাত এলাকা থেকে ডিএনডির ভেতরের পরিবেশ ও দৃশ্যপট এগিয়ে থাকবে।

ডিএনডির এ প্রকল্প উদ্বোধনের আগে ১৫ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ ও ১৯ অক্টোবর ফতুল্লা এলাকায় সুধী সমাবেশ হতে যাচ্ছে। এই দুইটি এলাকা নিয়েই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠিত, যার এমপি শামীম ওসমান। ৫৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে ডিএনডি বাঁধ, তার মধ্যে ফতুল্লা এলাকাটিই প্রায় ৬০ শতাংশ। আর সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটিও ডিএনডি বাঁধের ভেতরে। এটা আবার সিটি করপোরেশনের (নাসিক) আওতাধীন এলাকা। মঙ্গলবার সিদ্ধিরগঞ্জে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করতে গিয়ে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ডিএনডির জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে সরকার এরই মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। রোববার এ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতার এ সমস্যা সমাধান হবে। জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা এলেই দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার শিকার হয় ডিএনডি এলাকার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত পানি ও বসতবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের পানি। সবশেষ এবার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়েও জলাবদ্ধতার কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে ডিএনডির ভেতরের মানুষের আনন্দ পানিতে ধুয়ে যায়। কোরবানির পশু রাখারও শুকনো স্থান পায়নি অনেকে।

শামীম ওসমান জানান, ‘ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৮০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হলেও আমাদের ধারণা সেটা এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ শুধু খাল উদ্ধার নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নয়। বরং পাশাপাশি প্রত্যেক এলাকা ও বসতবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইন সংযুক্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা বলতে আমরা বনানী, গুলশান, বারিধারাকে বুঝি। কিন্তু সেনাবাহিনী, পরিকল্পনা ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে যে ভিডিও দেখানো হয়েছে; সেটা দেখে আমি অভিভূত। কারণ এটা বাস্তবায়ন হলে এসব এলাকার চেয়েও বেশি উন্নত হবে ডিএনডি এলাকা। এটা যে কত বড় পাওয়া হবে, সেটা বাস্তবায়ন না হলে কেউ বুঝতে পারবে না। তিনি বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও পানি সম্পদমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। শামীম ওসমান বলেন, ১৫ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ ও ১৯ অক্টোবর ফতুল্লায় যে সমাবেশ হবে সেখানে আমি সব শ্রেণীর মানুষের উপস্থিতি চাচ্ছি। কারণ এ উন্নয়নে কোনো ভেদাভেদ নেই। ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে, সেটাই বড় কথা। এটাই তো রাজনীতি।

শামীম ওসমানের মতে, সেনাবাহিনী এ কাজে কোনো লাভ করবে না। তারা দেশপ্রেমিক। জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। সে কারণেই আমাদের সবার আস্থা এ সেনাবাহিনীর ওপর। তিনি বলেন, ডিএনডি বাঁধের ভেতরে পানি নিষ্কাশনের যেসব খাল আছে তার বেশিরভাগই দখলে চলে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি পাম্প অবধি যেতে পারে না। এতে করেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা বৃষ্টি হলেই বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজটি হলে এসব অবৈধ খাল দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালগুলো পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে বলে মনে করেন এখানকার অধিবাসীরা। এসব কারণেই সেনাবাহিনী কাজটি করায় স্বস্তি পাচ্ছে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করা লাখ লাখ মানুষ।

জানা গেছে, ইরি ধান চাষাবাদের জন্য ১৯৬৫ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। ৩২ দশমিক ৮ কিলোমিটার ডিএনডি বাঁধের ভেতর ৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় অন্তত ২০ লাখ লোকের বসবাস। তখন ডিএনডির ভেতর সেচ প্রকল্প ছিল ৫ হাজার ৬৪ হেক্টর। সূত্র জানায়, ডিএনডি বাঁধের ভেতর কংস নদ এবং নলখালী খালের মতো ৯টি খাল ছিল; যা ডিএনডির ইরিগেশন প্রজেক্টে সেচ খাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এসব খালের ছিল আরও ৯টি শাখা খাল। এছাড়াও ছিল ২১০টি আউটলেট, ১০টি নিষ্কাশন খাল। এসব খালের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ১৮৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ইনটেক খাল, ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেইন ক্যানেল টার্ন আউট খাল রয়েছে। এর মধ্যে চ্যানেল-১ খালের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৯০ কিলোমিটার, চ্যানেল-২ এর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, পাগলা খাল ৩ কিলোমিটার, জালকুড়ি খাল ২ দশমিক ১০ কিলোমিটার, শ্যামপুর খাল ২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার, ফতুল্লা খাল ১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার ও সেকেন্ডারি চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। কংস নদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই। এসব খালের অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আশির দশকের পর থেকে লোকজন ডিএনডি বাঁধের ভেতর জমি কিনে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, ইটের ভাটা, ছোট-বড় শিল্প-কারখানা নির্মাণ করে। কিন্তু জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় খাল দখল ও ভরাট করে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, কল-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ৯ আগস্ট একনেকের সভায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) সেচ প্রকল্প এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫৫৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ডিএনডি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (ফেজ-২)’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ওই প্রকল্প অনুমোদনের পর ডিএনডির অধিবাসীরা যেমন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, তেমনি বিভিন্ন এলাকায়ও বইতে শুরু করে খুশির জোয়ার। সর্বশেষ ২১ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ডিএনডি এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।