ঢাকা ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা সঙ্কট : কী বার্তা নিয়ে আসছেন সুষমা স্বরাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২৫:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭
  • ৩৪১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি মাসের শেষের দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ভারতের এই মন্ত্রীর সফরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়। সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরে সেই সঙ্কট অনেকটাই মিটে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে সুষমা স্বরাজ ঢাকা সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শদাতা কমিশনের (জেসিসি) চতুর্থ বৈঠক হতে চলেছে ঢাকায়। ওই বৈঠকে অংশ নিতে আগামী ২৩ ও ২৪ অক্টোবর ঢাকা সফর করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শদাতা কমিশনের তৃতীয় বৈঠক দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারত সফর করেন, সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় জেসিসি’র বৈঠক নিয়মিত করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সুষমা স্বরাজ অসুস্থ থাকায় এতদিন বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের সমস্ত বিষয় এবং দিক নিয়ে আলোচনা হবে জেসিসি’র চতুর্থ বৈঠকে।

 

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার উদ্দেশ্যেই নিয়মিত জেসিসি’র বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সিটমহল বিনিময়ের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই উষ্ণ। ভৌগলিক দিক দিয়েও ভারতের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশি বাংলাদেশ। তাছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর অন্যতম সদস্য এই দুই দেশ। তবে ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার ঢল নামলে তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে মিয়ানমার সফরে গিয়ে রাখাইনের সহিংসতার ব্যাপারে শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চিকে কোনো প্রশ্ন না করে তার পাশে থাকার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

 

মোদির সফরকে ঘিরে অনেকেই সঙ্কট সমাধানের আশা করলেও মোদি তাদের নিরাশ করেন। গত এক মাসেই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের তাণ্ডবকে পাঠ্যপুস্তকে উল্লিখিত গণহত্যার উদাহরণের সঙ্গে তুলনা করেছে জাতিসংঘ। ইতোমধ্যেই শরণার্থী শিবিরে মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে ভারতও। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে আছে এবং একসঙ্গে থেকেই তারা এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত বলিষ্ঠ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিশ্চুপ ভারতকে ঘিরে বাংলাদেশ সরকারের ভেতরে ও বাইরে চাপা ক্ষোভের মধ্যেই পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক গত শুক্রবার দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে ভারত যেভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ওপর জোরালো অবস্থান নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সরকার খুশি।

 

তিনি আরও বলেন, অনেক দেশই কিন্তু অনেক কথা বলেছে। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ-সাহায্য ভারতই প্রথম পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যে জাতীয় বা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে, ভারতের এ মূল্যায়নের সঙ্গেও বাংলাদেশ একমত। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ঠিক কোন কোন বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ একমত, সে ব্যাপারে শহীদুল বলেন, ‘দুই দেশই এ ব্যাপারে একমত হয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের কাঁধে এক বিরাট বোঝা, এক বিরাট সঙ্কট, যা আমাদের পুরো অঞ্চলকেই অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। উন্নয়নের পথ থেকে ছিটকে দিতে পারে এ এলাকার সব দেশকেই।

 

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে যে বিবৃতি দিয়েছে, যাতে তারা বলেছে এই মানুষগুলোকে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে হবে, তাতে আমরা খুবই উৎসাহিত বোধ করছি। আর মনে রাখতে হবে, ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রেও ভারতই কিন্তু এক নম্বরে; শুধু আকাশপথেই নয়, জাহাজেও তারা বিপুল পরিমাণ ত্রাণ পাঠিয়েছে। কাজেই এক কথায় বলতে গেলে আমরা খুব খুশি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রোহিঙ্গা সঙ্কট : কী বার্তা নিয়ে আসছেন সুষমা স্বরাজ

আপডেট টাইম : ০৯:২৫:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি মাসের শেষের দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ভারতের এই মন্ত্রীর সফরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়। সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরে সেই সঙ্কট অনেকটাই মিটে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে সুষমা স্বরাজ ঢাকা সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শদাতা কমিশনের (জেসিসি) চতুর্থ বৈঠক হতে চলেছে ঢাকায়। ওই বৈঠকে অংশ নিতে আগামী ২৩ ও ২৪ অক্টোবর ঢাকা সফর করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শদাতা কমিশনের তৃতীয় বৈঠক দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারত সফর করেন, সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় জেসিসি’র বৈঠক নিয়মিত করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সুষমা স্বরাজ অসুস্থ থাকায় এতদিন বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের সমস্ত বিষয় এবং দিক নিয়ে আলোচনা হবে জেসিসি’র চতুর্থ বৈঠকে।

 

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার উদ্দেশ্যেই নিয়মিত জেসিসি’র বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সিটমহল বিনিময়ের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই উষ্ণ। ভৌগলিক দিক দিয়েও ভারতের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশি বাংলাদেশ। তাছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর অন্যতম সদস্য এই দুই দেশ। তবে ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার ঢল নামলে তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে মিয়ানমার সফরে গিয়ে রাখাইনের সহিংসতার ব্যাপারে শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চিকে কোনো প্রশ্ন না করে তার পাশে থাকার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

 

মোদির সফরকে ঘিরে অনেকেই সঙ্কট সমাধানের আশা করলেও মোদি তাদের নিরাশ করেন। গত এক মাসেই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের তাণ্ডবকে পাঠ্যপুস্তকে উল্লিখিত গণহত্যার উদাহরণের সঙ্গে তুলনা করেছে জাতিসংঘ। ইতোমধ্যেই শরণার্থী শিবিরে মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে ভারতও। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে আছে এবং একসঙ্গে থেকেই তারা এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত বলিষ্ঠ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিশ্চুপ ভারতকে ঘিরে বাংলাদেশ সরকারের ভেতরে ও বাইরে চাপা ক্ষোভের মধ্যেই পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক গত শুক্রবার দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে ভারত যেভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ওপর জোরালো অবস্থান নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সরকার খুশি।

 

তিনি আরও বলেন, অনেক দেশই কিন্তু অনেক কথা বলেছে। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ-সাহায্য ভারতই প্রথম পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যে জাতীয় বা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে, ভারতের এ মূল্যায়নের সঙ্গেও বাংলাদেশ একমত। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ঠিক কোন কোন বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ একমত, সে ব্যাপারে শহীদুল বলেন, ‘দুই দেশই এ ব্যাপারে একমত হয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের কাঁধে এক বিরাট বোঝা, এক বিরাট সঙ্কট, যা আমাদের পুরো অঞ্চলকেই অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। উন্নয়নের পথ থেকে ছিটকে দিতে পারে এ এলাকার সব দেশকেই।

 

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে যে বিবৃতি দিয়েছে, যাতে তারা বলেছে এই মানুষগুলোকে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে হবে, তাতে আমরা খুবই উৎসাহিত বোধ করছি। আর মনে রাখতে হবে, ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রেও ভারতই কিন্তু এক নম্বরে; শুধু আকাশপথেই নয়, জাহাজেও তারা বিপুল পরিমাণ ত্রাণ পাঠিয়েছে। কাজেই এক কথায় বলতে গেলে আমরা খুব খুশি।