ঢাকা ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারকে দেওয়া কড়া অবরোধ ভেস্তে দিলো চীন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৭৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন না করে মিয়ানমারকে বেছে নিয়েছে চীন। তারা মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক একটি কড়া অবরোধ ভেস্তে দিলো চীন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ওই অবরোধ আরোপ করতে পারতো জাতিসংঘ। এখন মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটে মধ্যস্থতা করার কথা বলছে।

আসলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য কৌশলগতভাবে চীন ও ভারত উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক অতুল আনেজা। ‘চায়না রিএনফোর্সেস মেডিয়েশন কল অ্যাজ রিফিউজি ক্রাইসিস স্পাইরালস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি আরো লিখেছেন, (রাখাইনের দক্ষিণে) কাইউকফিউ অঞ্চলে গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। এই প্রকল্পে তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

কারণ, এর মধ্য দিয়ে এশিয়া ও এর বাইরের অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। এ জন্য পাশেই কাইউকফিউ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে ১০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে চীন। এ ছাড়াও তারা বঙ্গোপসাগর থেকে একটি রেললাইন স্থাপন করতে চায়। ওই রেললাইনের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ইউনান প্রদেশকে সংযুক্ত করা হবে। তার মাধ্যমে ওয়াল বেল্ট অ্যান্ড রোড কানেকশনের আওতায় এই ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে।

অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে বন্দর নির্মাণ করছে। এর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অবরুদ্ধ হয়ে পড়া এলাকাগুলোকে বন্দর সুবিধা দিতে চায় ভারত। ওই প্রতিবেদনে অতুল আনেজা লিখেছেন, এখন মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার মঞ্চ তৈরি করছে চীন। ২৮শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ২০০০ তাঁবু, ৩০০০ কম্বলসহ মোট ১৫০ টন ত্রাণ পাঠিয়েছে চীন।

এর মাধ্যমে তারা দেখাচ্ছে বাংলাদেশের কাঁধে চেপে বসা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত দেশত্যাগী রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। গত ৩০শে মে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং মিডিয়াকে বলেছেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছির বাস্তুচ্যুত মানুষদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমস্যার মুখোমুখি। এতে চীন খুব উদ্বিগ্ন।

এসব মানুষকে আশ্রয় দেয়ার যে চেষ্টা বাংলাদেশ সরকার করছে তাতে সহায়তা করার জন্য চীন সরকার জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক কড়া এক অবরোধ থেকে রক্ষা করেছে চীন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ২৮শে সেপ্টেম্বর প্রথম দফা বিতর্ক হয় রোহিঙ্গা ইস্যুতে। সেখানেও মিয়ানমারের পক্ষ নেয় চীন। ওদিকে সংকট যখন তীব্র হয়ে ওঠে তখন মিয়ানমার ও বাংলাদেশে মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব পুনরুল্লেখ করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী চীন।

এ ছাড়া চীন আশা করে, পরিস্থিতি সহজ করতে এবং আলোচনাকে অনুমোদন দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারে। চীনের এমন ভূমিকা নতুন নয়। এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করেছেন চীনের এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত সান গুওসিংয়া। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৃষ্ট কূটনৈতিক উত্তেজনা সমাধানের প্রস্তাব দেন।

ওদিকে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ফুজিয়ানের সিয়ামেন ইউনিভার্সিটির মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফান হংউই বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের স্থিতিশীলতা বাস্তবেই একটি বিষয়। তিনি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, রাখাইনে এখন যে বাজে অবস্থা তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সেখানে প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ ম্লান হয়ে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমারকে দেওয়া কড়া অবরোধ ভেস্তে দিলো চীন

আপডেট টাইম : ০৪:১৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন না করে মিয়ানমারকে বেছে নিয়েছে চীন। তারা মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক একটি কড়া অবরোধ ভেস্তে দিলো চীন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ওই অবরোধ আরোপ করতে পারতো জাতিসংঘ। এখন মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটে মধ্যস্থতা করার কথা বলছে।

আসলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য কৌশলগতভাবে চীন ও ভারত উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক অতুল আনেজা। ‘চায়না রিএনফোর্সেস মেডিয়েশন কল অ্যাজ রিফিউজি ক্রাইসিস স্পাইরালস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি আরো লিখেছেন, (রাখাইনের দক্ষিণে) কাইউকফিউ অঞ্চলে গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। এই প্রকল্পে তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

কারণ, এর মধ্য দিয়ে এশিয়া ও এর বাইরের অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। এ জন্য পাশেই কাইউকফিউ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে ১০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে চীন। এ ছাড়াও তারা বঙ্গোপসাগর থেকে একটি রেললাইন স্থাপন করতে চায়। ওই রেললাইনের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ইউনান প্রদেশকে সংযুক্ত করা হবে। তার মাধ্যমে ওয়াল বেল্ট অ্যান্ড রোড কানেকশনের আওতায় এই ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে।

অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে বন্দর নির্মাণ করছে। এর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অবরুদ্ধ হয়ে পড়া এলাকাগুলোকে বন্দর সুবিধা দিতে চায় ভারত। ওই প্রতিবেদনে অতুল আনেজা লিখেছেন, এখন মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার মঞ্চ তৈরি করছে চীন। ২৮শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ২০০০ তাঁবু, ৩০০০ কম্বলসহ মোট ১৫০ টন ত্রাণ পাঠিয়েছে চীন।

এর মাধ্যমে তারা দেখাচ্ছে বাংলাদেশের কাঁধে চেপে বসা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত দেশত্যাগী রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। গত ৩০শে মে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং মিডিয়াকে বলেছেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছির বাস্তুচ্যুত মানুষদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমস্যার মুখোমুখি। এতে চীন খুব উদ্বিগ্ন।

এসব মানুষকে আশ্রয় দেয়ার যে চেষ্টা বাংলাদেশ সরকার করছে তাতে সহায়তা করার জন্য চীন সরকার জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক কড়া এক অবরোধ থেকে রক্ষা করেছে চীন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ২৮শে সেপ্টেম্বর প্রথম দফা বিতর্ক হয় রোহিঙ্গা ইস্যুতে। সেখানেও মিয়ানমারের পক্ষ নেয় চীন। ওদিকে সংকট যখন তীব্র হয়ে ওঠে তখন মিয়ানমার ও বাংলাদেশে মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব পুনরুল্লেখ করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী চীন।

এ ছাড়া চীন আশা করে, পরিস্থিতি সহজ করতে এবং আলোচনাকে অনুমোদন দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারে। চীনের এমন ভূমিকা নতুন নয়। এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করেছেন চীনের এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত সান গুওসিংয়া। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৃষ্ট কূটনৈতিক উত্তেজনা সমাধানের প্রস্তাব দেন।

ওদিকে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ফুজিয়ানের সিয়ামেন ইউনিভার্সিটির মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফান হংউই বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের স্থিতিশীলতা বাস্তবেই একটি বিষয়। তিনি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, রাখাইনে এখন যে বাজে অবস্থা তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সেখানে প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ ম্লান হয়ে যাবে।