ঢাকা ০৩:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জমির আইলে তেজপাতা চাষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৪৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামে মাঠে-ময়দানে এবং জমির আইলে ছেয়ে গেছে ইউক্যালিপ্টাস গাছ। দ্রুত বর্ধনশীল এই গাছ মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। এরই বিকল্প হিসেবে জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষের পাশাপাশি জমির আইলে পরিবেশবান্ধব সুগন্ধী তেজপাতা চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জেলার ছিনাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বড় চাষি সাদেকুল হক নুরু সাড়ে ১২ একর জমির আইলে ৭ শতাধিক তেজপাতা লাগিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বছরে আয় করছেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তার দেখাদেখি লোকজন বাসাবাড়িতেও লাগাচ্ছে তেজপাতার চারা। সাদেকুল হক নুরু জানান, ২০১৩ সালে বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে ১০ একর জমির আইলে ৫ শতাধিক তেজপাতার চারা লাগাই। প্রতিটি চারা রোপণ পর্যন্ত ১৫০ টাকা খরচ হয়। লাগানোর সময় পটাশ, ডিআইবি ও ব্রিফার কীটনাশক স্প্রে করার পর আর কোনো খরচ নেই। একবছর পর প্রথম ১০ হাজার টাকায় পাতা বিক্রি করেন। এরপর গাছগুলো বড় হয়ে যায় এবং লতাপাতা বেড়ে যায়। ফলে আয়ও বাড়তে থাকে। বছরে দু’বার তেজপাতা বিক্রি করা যায়। গাছের কুচি পাতা বের হওয়া শেষ হলেই বিক্রি শুরু হয়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা নিজেরাই এসে পাতা কিনে নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, জমির আইলে তেজপাতা চাষের পাশাপাশি জমিতে তিনি ধান, আলু, ভুট্টা ও সবজি চাষ করেছেন। এতে ফলনের কোনো ক্ষতি হয় না। গত বছর তিনি আরও আড়াই একর জমির আইলে নতুন করে তেজপাতার চারা লাগিয়েছেন। গাছ বড় হলে একরে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। একবার গাছ কিনলেই হয়। এরপর আপনা থেকেই তেজপাতা বাড়তে থাকে। শুধু বছরে দু’বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ওই এলাকার রেহেনা ও জোলেখা জানান, ওমারগুলার দেখাদেখি হামরাগুলাও বাড়ির মধ্যে তেজপাতা নাগাছি। বছরে বছরে তেজপাতা বিক্রি করি। অনেক টেকা পাই। তেজপাতা গাছ কোনো ক্ষতি করে না। তেজপাতা বিষয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন জানান, তেজপাতা পাহাড়ি এলাকার গাছ। এটি জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। লম্বায় ১৫ থেকে ১৬ মিটার উঁচু হয়। রান্নায় স্বাদ ও সুগন্ধি আনতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও এর রয়েছে ঔষধী গুণাগুণ। শরীরে ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে আনতে, কোলেস্টরেল মাত্রা কমাতে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের নানা রোগ সারিয়ে তুলতেও এর গুণাগুণ অসাধারণ। ঠাণ্ডাজনিত বা উচ্চভাষজনিত গলা ভাঙা রোগ সারাতে তেজপাতার রসের রয়েছে অসাধারণ ঔষধী গুণ। এটি চিরশ্যামল এবং গাছটি বসতবাড়ির শোভাও বৃদ্ধি করে। দেশে মাথাপিছু মসলার চাহিদা ৩১ লাখ টন। উৎপাদন হয় ১৭ লাখ টন। ঘাটতি প্রায় অর্ধেক। ফলে প্রতি বছর আড়াই হাজার কোটি টাকার মসলা আমদানি করতে হয়। যা জমির আইলে চাষ করে ঘাটতি মেটানো সম্ভব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জমির আইলে তেজপাতা চাষ

আপডেট টাইম : ১১:২৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামে মাঠে-ময়দানে এবং জমির আইলে ছেয়ে গেছে ইউক্যালিপ্টাস গাছ। দ্রুত বর্ধনশীল এই গাছ মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। এরই বিকল্প হিসেবে জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষের পাশাপাশি জমির আইলে পরিবেশবান্ধব সুগন্ধী তেজপাতা চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জেলার ছিনাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বড় চাষি সাদেকুল হক নুরু সাড়ে ১২ একর জমির আইলে ৭ শতাধিক তেজপাতা লাগিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বছরে আয় করছেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তার দেখাদেখি লোকজন বাসাবাড়িতেও লাগাচ্ছে তেজপাতার চারা। সাদেকুল হক নুরু জানান, ২০১৩ সালে বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে ১০ একর জমির আইলে ৫ শতাধিক তেজপাতার চারা লাগাই। প্রতিটি চারা রোপণ পর্যন্ত ১৫০ টাকা খরচ হয়। লাগানোর সময় পটাশ, ডিআইবি ও ব্রিফার কীটনাশক স্প্রে করার পর আর কোনো খরচ নেই। একবছর পর প্রথম ১০ হাজার টাকায় পাতা বিক্রি করেন। এরপর গাছগুলো বড় হয়ে যায় এবং লতাপাতা বেড়ে যায়। ফলে আয়ও বাড়তে থাকে। বছরে দু’বার তেজপাতা বিক্রি করা যায়। গাছের কুচি পাতা বের হওয়া শেষ হলেই বিক্রি শুরু হয়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা নিজেরাই এসে পাতা কিনে নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, জমির আইলে তেজপাতা চাষের পাশাপাশি জমিতে তিনি ধান, আলু, ভুট্টা ও সবজি চাষ করেছেন। এতে ফলনের কোনো ক্ষতি হয় না। গত বছর তিনি আরও আড়াই একর জমির আইলে নতুন করে তেজপাতার চারা লাগিয়েছেন। গাছ বড় হলে একরে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। একবার গাছ কিনলেই হয়। এরপর আপনা থেকেই তেজপাতা বাড়তে থাকে। শুধু বছরে দু’বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ওই এলাকার রেহেনা ও জোলেখা জানান, ওমারগুলার দেখাদেখি হামরাগুলাও বাড়ির মধ্যে তেজপাতা নাগাছি। বছরে বছরে তেজপাতা বিক্রি করি। অনেক টেকা পাই। তেজপাতা গাছ কোনো ক্ষতি করে না। তেজপাতা বিষয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন জানান, তেজপাতা পাহাড়ি এলাকার গাছ। এটি জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। লম্বায় ১৫ থেকে ১৬ মিটার উঁচু হয়। রান্নায় স্বাদ ও সুগন্ধি আনতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও এর রয়েছে ঔষধী গুণাগুণ। শরীরে ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে আনতে, কোলেস্টরেল মাত্রা কমাতে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের নানা রোগ সারিয়ে তুলতেও এর গুণাগুণ অসাধারণ। ঠাণ্ডাজনিত বা উচ্চভাষজনিত গলা ভাঙা রোগ সারাতে তেজপাতার রসের রয়েছে অসাধারণ ঔষধী গুণ। এটি চিরশ্যামল এবং গাছটি বসতবাড়ির শোভাও বৃদ্ধি করে। দেশে মাথাপিছু মসলার চাহিদা ৩১ লাখ টন। উৎপাদন হয় ১৭ লাখ টন। ঘাটতি প্রায় অর্ধেক। ফলে প্রতি বছর আড়াই হাজার কোটি টাকার মসলা আমদানি করতে হয়। যা জমির আইলে চাষ করে ঘাটতি মেটানো সম্ভব।