চট্টগ্রামের ১৫টি পয়েন্টে গত রোববার থেকে খোলা বাজারে সরকারি (ওএমএস ) চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু এসব চাল কেউ পাচ্ছেন না। আবার পেয়েও কেউ খাচ্ছেন না।
না খাওয়ার মূল কারণ চালগুলো সেদ্ধ। চট্টগ্রামের স্থানীয় লোকজন সেদ্ধ চাল খান না। আর বাইরের লোকজন এসব চাল চাইলেও পাচ্ছে না। চাল পেতে হলে প্রথমত স্থানীয়, দ্বিতীয়ত ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত হতে হবে। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আরো অভিযোগ, চাল বিক্রয় কেন্দ্রগুলো কারো কারো জন্য অনেক দূর। ৫ কেজি চাল কিনতে ভাঙা সড়কে ভোগান্তিসহ ১০০ টাকার বেশি খরচ লাগছে। সবমিলিয়ে খোলা বাজারে সরকারের চাল বিক্রির উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, এর আগে ভ্রাম্যমান ট্রাকে চাল বিক্রয়ের কারণে ভোক্তারা বিনা খরচে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল কিনতে পেরেছে। তখন চালের মূল্য বর্তমান মূল্যের অর্ধেক ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি পয়েন্টে খোলা বাজারে সরকারি চাল বিক্রি হচ্ছে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ বাকলিয়ার মাকসুদ এন্টারপ্রাইজ, বাকলিয়া বৌবাজারের আনোয়ার এ্যান্ড ব্রাদার্স, সদরঘাট কালীবাড়ি এলাকার নিউ স্টোর, পাথরঘাটা আশরাফ আলী রোডের হাজী ভোলা সওদাগর, পশ্চিম মাদারবাড়ি দিদার এ্যান্ড ব্রাদার্স, বলুয়ার দীঘিরপাড় এলাকায় আঞ্জুমান সিন্ডিকেট, স্টেশন রোডে হারুন স্টোর, লালখানবাজারে মনোয়ার স্টোর, খলিফাপট্টি এলাকায় শাহ আলম স্টোর, মোহরা নিউ স্টোর এবং চান্দগাঁও এলাকায় শমসের খান এন্টারপ্রাইজ। যেখানে বর্তমানে বর্ধিত মূল্যে ৩০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে ওএমএস চাল।
মূল্য দ্বিগুণ হলেও বর্তমানে দোকান পর্যায়ে চালের সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ টাকা হওয়ায় খোলা বাজারে সরকারি চাল ক্রয়ে ক্রেতারা আকৃষ্ট হওয়ারই কথা। তবে নানা অসঙ্গতির কারণে সে চাল ক্রয়-বিক্রয়েও উঠে আসছে নানা অসঙ্গতি ও প্রশ্ন।
নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়া এলাকার মো. ইউসুফ (৫৪) জানান, সরকার সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও খোলা বাজারে সেদ্ধ চাল বিক্রি করছে। কিন্তু চট্টগ্রামের স্থানীয়রা কেউ সেদ্ধ চাল খান না। তাই এ চাল চট্টগ্রামের কেউ কিনছেন না। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ বাকলিয়ার মাকসুদ এন্টারপ্রাইজে চাল কিনতে গিয়ে সেদ্ধ চাল দেখে আমি ফিরে আসি।
এদিকে নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট বারইপাড়া এলাকার সেকান্দর মিয়ার বস্তির বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ (৫৮) বলেন, গত সোমবার চান্দগাঁও শমসের খান এন্টারপ্রাইজে চালের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাড়ি চট্টগ্রামে নয় বলে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। পরে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা চিরকুট ও ফোন নম্বর নিয়ে গেলে আমাকে চাল দেয়। নেতার সুপারিশ নিতে না পারায় এবং চট্টগ্রামের স্থানীয় না হওয়ায় এমন অনেকে ওমমএস চাল পায়নি বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শমসের খান এন্টারপ্রাইজের মালিক শমসের খান বলেন, দিনে প্রতি ডিলারকে ১ টন করে মোট ১৫ টন চাল দেয়া হচ্ছে। একজন ক্রেতাকে ৫ কেজির বেশি চাল দেয়ার নিয়ম নেই। তাই চট্টগ্রামের স্থানীয় গরীবদের অগ্রাধিকার দিয়ে চাল বিক্রয় করছি। বাইরের যারা আছেন তাদেরও দেয়া হচ্ছে। তবে একটু দেখে শুনে দিচ্ছি।
নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে লালখান বাজার মনোয়ার স্টোরে খোলাবাজারের চাল কিনতে এসেছেন নুরজাহান বেগম(৩৪)। তিনি বলেন, বাজারে চালের মূল্য বেশি হওয়ায় সরকারি চাল কিনতে আসি। কিন্তু ভাঙা সড়কে বাস না চলায় কি ভোগান্তি। টেম্পু আর রিকশা নিয়ে এখানে আসতে আমার ৬০ টাকা খরচ হয়। যেতেও একই পরিমাণ টাকা খরচ হবে। ৫ কেজি চাল কিনতে গিয়ে কেজি প্রতি আরও ২২ টাকা খরচ পড়ছে। ফলে কোন লাভই তো দেখছি না। আগে ট্রাকে করে সরকারি চাল বিক্রি করায় এ ভোগান্তি হয়নি বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে মনোয়ার স্টোরের চাল বিক্রেতা সুমন বলেন, ওএমএসের চাল সাধারণত ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র স্থাপন করে বিক্রি হয়ে আসছিল এত বছর ধরে। কিন্তু এবার ডিলাররা নিজ নিজ স্টোর পয়েন্টে বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে বিক্রি করছেন। ফলে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
তিনি বলেন, ভোক্তারা যেহেতু গরীব, সেহেতু এ চাল নিতে এসে প্রতি কেজি চালের মূল্যের সমান টাকা সড়কে খরচ হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারি চাল কেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাছাড়া সেদ্ধ চাল হওয়ায় চট্টগ্রামের লোকজন এসব চাল খেতে চাচ্ছেন না। ফলে ক্রেতাও তেমন নেই বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাদ্য নিয়ন্ত্রক (পরিবহন ও সংরক্ষণ) জহিরুল ইসলাম জানান, প্রতিটি ডিলারকে প্রতিদিন ১ টন করে চাল দেয়া হচ্ছে। গত রোববার থেকে চট্টগ্রামে খোলাবাজারে চাল বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হলেও প্রতিদিন ১৫ টি পয়েন্টে চাল বিক্রয় হচ্ছে ৭-৮ টনের মতো। সেদ্ধ চাল হওয়ায় চট্টগ্রামের স্থানীয় গরীব লোকেরাও এসব চাল খেতে চাচ্ছে না। আগামি ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে বলে জানান তিনি।