ঢাকা ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মান্ডা খাল যেন ময়লার ভাগাড়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫১:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৫৫১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মান্ডা খাল রাজধানী ঢাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য অন্যতম অবলম্বন। নগরীর মানিক নগর, সেগুন বাগিচা, বিজয় নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, টিটিপাড়া, মুগদা, ঝিলপাড়, বালুরমাঠ ও মান্ডা এলাকার একমাত্র পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম এই মান্ডা খাল। অথচ এসব এলাকার গৃহস্থালির ময়লা -আবর্জনাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলে খালটি ভরাট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে ঢাকা শহরের বড় খালগুলোর অন্যতম এ খালটি এখন আর দৃশ্যমান নেই।

অপরদিকে খালটির কোনো কোনো অংশে পানি প্রবাহ থাকলেও নেই কর্তৃপক্ষের নজরদারি। স্থানীয়দের ফেলা ময়লায় দিন দিন ঠাঁসা হচ্ছে খালটি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মান্ডা খালটির কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা। এছাড়া  খালের দুই পাশ দখল করেই গড়ে উঠেছে শত শত দোকানপাট। এর মধ্যে চা, পান, মুদি, খাবার হোটেল, সবজি, রিকশা গ্যারেজ, ফল, মোবাইল, মুরগি, মাংস, ফার্নিচার, টেইলারসহ বিভিন্ন ধরনের টং দোকান। আবার এসব দোকান থেকে আবর্জনা সরাসরি খালে ফেলছে এখানকার অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে খালের আশপাশের বাসা-বাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনও রয়েছে এই খালের মধ্যে। আশপাশের বাসা-বাড়িতে যাওয়ার জন্য খালের ওপর গড়ে উঠেছে শত শত বাঁশের সাঁকো ও পোল কালভার্ট।  এসব  কালভার্টের পিলার সাদৃশ্য বাঁশের সঙ্গে পলিথিন ও জমাট আবর্জনা আটকে তৈরি হচ্ছে ময়লার ভাগাড়।

আরেকটি দুঃখজনক বিষয়, পানি প্রবাহ সচল রাখতে মান্ডা খালের তত্ত্বাবধানে থাকা ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে শুধু উপদেশমূলক সাইনবোর্ড টাঙানো ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। আর এতে দিন দিন খালটির দশা হচ্ছে খুবই করুণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন হাওর বার্তাকে বলেন,  ‘অবৈধ স্থাপনাগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী মহলদের স্বদিচ্ছায়ই হচ্ছে। কোথাও কোথাও দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে করা হচ্ছে খালের ওপর দোকানপাট ও রিক্শার গ্যারেজ। অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কার্যক্রম শেষ হলে আবার স্বরূপে ফিরে আসে এই সব স্থাপনা।এতে আমরা সাধারণ মানুষ নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘খালটির কিছু কিছু অংশ ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হয়ে গেছে। আমরা সেসব অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করেছি। তাছাড়া খাল উদ্ধারে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন হাওর বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ রাজধানীর খাল বেদখল।  এ খালগুলো উদ্ধার করা হলে জলাবদ্ধতা কমবে। আমরা এরই মধ্যে ঢাকা ওয়াসা, জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছি। একটি খাল উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছি। কেউ খাল দখল করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ঢাকা মহানগরীতে বিদ্যমান খালের সংখ্যা ৪৩টি। সব খালের মালিকানা ঢাকা জেলা প্রশাসনের। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করে ২৬টি।  ঢাকা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আটটি খাল।এ ছাড়া রাস্তা, বক্স কালভার্ট, বিকল্পভাবে পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে আরো ৯টি খাল। তবে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঠেলাঠেলি চলে ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে। যদিও দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।

এ ব্যাপারে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাইদুজ্জামান বলেন,  ‘রাজধানীর খালগুলোতে দখলদারদের বিস্তারিত তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। এখন বড় আকারে উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মান্ডা খাল যেন ময়লার ভাগাড়

আপডেট টাইম : ০৭:৫১:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মান্ডা খাল রাজধানী ঢাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য অন্যতম অবলম্বন। নগরীর মানিক নগর, সেগুন বাগিচা, বিজয় নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, টিটিপাড়া, মুগদা, ঝিলপাড়, বালুরমাঠ ও মান্ডা এলাকার একমাত্র পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম এই মান্ডা খাল। অথচ এসব এলাকার গৃহস্থালির ময়লা -আবর্জনাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলে খালটি ভরাট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে ঢাকা শহরের বড় খালগুলোর অন্যতম এ খালটি এখন আর দৃশ্যমান নেই।

অপরদিকে খালটির কোনো কোনো অংশে পানি প্রবাহ থাকলেও নেই কর্তৃপক্ষের নজরদারি। স্থানীয়দের ফেলা ময়লায় দিন দিন ঠাঁসা হচ্ছে খালটি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মান্ডা খালটির কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা। এছাড়া  খালের দুই পাশ দখল করেই গড়ে উঠেছে শত শত দোকানপাট। এর মধ্যে চা, পান, মুদি, খাবার হোটেল, সবজি, রিকশা গ্যারেজ, ফল, মোবাইল, মুরগি, মাংস, ফার্নিচার, টেইলারসহ বিভিন্ন ধরনের টং দোকান। আবার এসব দোকান থেকে আবর্জনা সরাসরি খালে ফেলছে এখানকার অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে খালের আশপাশের বাসা-বাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনও রয়েছে এই খালের মধ্যে। আশপাশের বাসা-বাড়িতে যাওয়ার জন্য খালের ওপর গড়ে উঠেছে শত শত বাঁশের সাঁকো ও পোল কালভার্ট।  এসব  কালভার্টের পিলার সাদৃশ্য বাঁশের সঙ্গে পলিথিন ও জমাট আবর্জনা আটকে তৈরি হচ্ছে ময়লার ভাগাড়।

আরেকটি দুঃখজনক বিষয়, পানি প্রবাহ সচল রাখতে মান্ডা খালের তত্ত্বাবধানে থাকা ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে শুধু উপদেশমূলক সাইনবোর্ড টাঙানো ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। আর এতে দিন দিন খালটির দশা হচ্ছে খুবই করুণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন হাওর বার্তাকে বলেন,  ‘অবৈধ স্থাপনাগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী মহলদের স্বদিচ্ছায়ই হচ্ছে। কোথাও কোথাও দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে করা হচ্ছে খালের ওপর দোকানপাট ও রিক্শার গ্যারেজ। অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কার্যক্রম শেষ হলে আবার স্বরূপে ফিরে আসে এই সব স্থাপনা।এতে আমরা সাধারণ মানুষ নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘খালটির কিছু কিছু অংশ ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হয়ে গেছে। আমরা সেসব অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করেছি। তাছাড়া খাল উদ্ধারে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন হাওর বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ রাজধানীর খাল বেদখল।  এ খালগুলো উদ্ধার করা হলে জলাবদ্ধতা কমবে। আমরা এরই মধ্যে ঢাকা ওয়াসা, জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছি। একটি খাল উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছি। কেউ খাল দখল করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ঢাকা মহানগরীতে বিদ্যমান খালের সংখ্যা ৪৩টি। সব খালের মালিকানা ঢাকা জেলা প্রশাসনের। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করে ২৬টি।  ঢাকা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আটটি খাল।এ ছাড়া রাস্তা, বক্স কালভার্ট, বিকল্পভাবে পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে আরো ৯টি খাল। তবে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঠেলাঠেলি চলে ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে। যদিও দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।

এ ব্যাপারে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাইদুজ্জামান বলেন,  ‘রাজধানীর খালগুলোতে দখলদারদের বিস্তারিত তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। এখন বড় আকারে উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।