হাওর বার্তা ডেস্কঃ কয়েক দফা বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে পথে বসার অবস্থায় পড়েন অনেক কৃষক। পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের অন্তত ১২টি জেলার কৃষক সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হন। এখন বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় তারা আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, শেরপুর, রাঙ্গুনিয়া, সুনামগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধার কৃষক বন্যার ধকল কাটিয়ে এখন রোপা আমন চাষাবাদ শুরু করেছেন। তবে অনেক স্থানে চারার সংকট দেখা দিয়েছে। সংবাদদাতাদের খবর
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে বন্যা-পরবর্তী সময় ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সিরাজগঞ্জে ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষক রোপা আমন চাষাবাদ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চারা লাগানো হয়েছে। দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে এ রোপা আমন ধানের চারা লাগানো শেষ হবে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ আরশেদ আলী এ তথ্য জানান। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ঘুরে দাঁড়াতে রোপা আমন ধান আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মধ্যে জেলার বেশিরভাগ জমির ধান আবাদের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে।
বগুড়া : বগুড়ায় বন্যার পানি নেমে গেলেও চারা সংকটে আমন চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে কৃষকের জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষক দেরিতে হলেও ধান চাষের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু ধানের চারা না পাওয়ায় কৃষক ধান চাষ করতে পারছেন না। ফলে বিকল্প হিসেবে সে জমিতে এখন সবজি চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা : দুই দফা বন্যায় গাইবান্ধা জেলায় রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রোপা, আমন চারা সংগ্রহে ব্যস্ত কৃষক। ধারদেনা করে আমন ধানের জমি প্রস্তুত করলেও চারার অভাবে তা লাগাতে পারছেন না অনেকেই। হাটবাজার, গ্রামগঞ্জে আমন চারা পাওয়া গেলেও এর দাম চড়া। চড়া দামের কারণে অনেক কৃষক চারা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রথম দফা বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও দ্বিতীয় দফা বন্যায় বীজতলা ও রোপণ করা আমন চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক।
রাঙ্গুনিয়া : চট্টগ্রামের শস্যভা-ার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিল এখন সবুজের চাদরে ঢাকা। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। দুই সপ্তাহ আগেও চিত্রটা ছিল ভিন্ন। চারদিকে ছিল অথই পানি। তবে প্রতিবারের মতো এবারও ঘুরে
শেরপুর ও নকলা : বন্যার পর শেরপুর জেলার দাঁড়িয়েছেন গুমাইবিলের চার হাজার কৃষক। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ও উৎসাহে চতুর্থ দফা বন্যার পর কৃষকের লাগানো আমন চারা এখন পরিপুষ্ট হয়ে সবুজ রঙ ধারণ করেছে।
রানীশংকৈল : বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের কৃষক ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। তারা দিনরাত গাধার খাটুনি খেটে চেষ্টা করছেন ঘুরে দাঁড়ানোর। বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথের তৎপরতায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছেন কৃষককে পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাম্প্রতিক কালের বন্যায় উপজেলাজুড়ে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শে আবারও ধান রোপণ করেছেন কৃষক।
সুনামগঞ্জ : দুর্যোগকবলিত সুনামগঞ্জ জেলায় এবার ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে এতে ফলন হবে অন্যবারের চেয়ে বেশি। ফলে দুর্যোগকবলিত ভাটির জনপদে কৃষক মোটামুটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন এমনটাই আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। জানা যায়, পাহাড়, সমতল ও হাওর এই পৃথক তিনটি ভূপ্রকৃতি বিশিষ্ট সুনামগঞ্জ জেলার সমতল ও পাহাড়ি এলাকায় কৃষক প্রতি বছর রোপা আমন ফসল উৎপাদন করে থাকেন।