ঢাকা ০৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে: রুশনারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৩২০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ববাসীকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী। বলেছেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের ১৮০ জন এমপি এ বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার জন্য মতামত দিয়েছেন। মিয়ানমারে সেনা ও নির্বাচিত সরকার মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর যে অন্যায় নির্যাতন চালাচ্ছে এর জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে রুশনারা আলী সফররত যুক্তরাজ্যের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এই এমপি বলেন, ‘মিয়ানমার সংখ্যালঘু মুসলিমদের নির্যাতন, হত্যা ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করায় যুক্তরাজ্য সরকার, পার্লামেন্ট এবং ব্রিটিশ জনগণ এর নিন্দা জানিয়েছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাবার দিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্রিটেন বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’

রুশনারা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি শুধু বাংলাদেশের সংকট নয়, এটি বিশ্ববাসীর একটি সংকট।’ এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীর উদ্যোগ কামনা করেন রুশনারা।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পর থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ভয়ংকর অভিযান চালাচ্ছে। সেখানে গণহত্যা চলছে। নির্যাতনের তীব্রতায় টিকতে না পেরে বানের স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে।
মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেও মিয়ানমারকে চাপ অব্যাহত রেখেছে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে। জাতিসংঘের চলমান সাধারণ অধিবেশনে এ বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করে রুশনারা বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, মাতৃ-শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে রুশনারা আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কার্গো উড়োজাহাজ চলাচল আবার চালু হবে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কাজ করছে। এখানকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্রিটিশ কোম্পানি কাজ করছে।’ বর্তমানে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন অল্প সময়ের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ আবার চলাচল শুরু করবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল জানিয়েছে- চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিটিশ সরকার, সংসদ সদস্য এবং সে দেশের জনগণ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে তারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।’

তোফায়েল বলেন, ‘বিপুল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বড় বোঝা। এজন্য দ্রুত তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বড় রপ্তানি বাজার। ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের দেয়া এভ্রিথিংস বাট আর্মস (ইবিএম)-এর আওতায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ডিউটি ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করছে। যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের জন্য এ বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশ যখন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবে, তখনও ব্রিটেন বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদান করবে।’

তোফায়েল আহমেদ ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

বৈঠকে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিজ আলিসন ব্ল্যাক, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের ডিরেক্টর রোজিনা হাসান, ডেপুটি ডিরেক্টর সুরাইয়া জাহানসহ বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে: রুশনারা

আপডেট টাইম : ০৮:৩০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ববাসীকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী। বলেছেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের ১৮০ জন এমপি এ বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার জন্য মতামত দিয়েছেন। মিয়ানমারে সেনা ও নির্বাচিত সরকার মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর যে অন্যায় নির্যাতন চালাচ্ছে এর জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে রুশনারা আলী সফররত যুক্তরাজ্যের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এই এমপি বলেন, ‘মিয়ানমার সংখ্যালঘু মুসলিমদের নির্যাতন, হত্যা ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করায় যুক্তরাজ্য সরকার, পার্লামেন্ট এবং ব্রিটিশ জনগণ এর নিন্দা জানিয়েছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাবার দিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্রিটেন বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’

রুশনারা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি শুধু বাংলাদেশের সংকট নয়, এটি বিশ্ববাসীর একটি সংকট।’ এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীর উদ্যোগ কামনা করেন রুশনারা।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পর থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ভয়ংকর অভিযান চালাচ্ছে। সেখানে গণহত্যা চলছে। নির্যাতনের তীব্রতায় টিকতে না পেরে বানের স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে।
মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেও মিয়ানমারকে চাপ অব্যাহত রেখেছে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে। জাতিসংঘের চলমান সাধারণ অধিবেশনে এ বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করে রুশনারা বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, মাতৃ-শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে রুশনারা আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কার্গো উড়োজাহাজ চলাচল আবার চালু হবে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কাজ করছে। এখানকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্রিটিশ কোম্পানি কাজ করছে।’ বর্তমানে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন অল্প সময়ের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ আবার চলাচল শুরু করবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল জানিয়েছে- চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিটিশ সরকার, সংসদ সদস্য এবং সে দেশের জনগণ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে তারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।’

তোফায়েল বলেন, ‘বিপুল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বড় বোঝা। এজন্য দ্রুত তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বড় রপ্তানি বাজার। ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের দেয়া এভ্রিথিংস বাট আর্মস (ইবিএম)-এর আওতায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ডিউটি ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করছে। যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের জন্য এ বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশ যখন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবে, তখনও ব্রিটেন বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদান করবে।’

তোফায়েল আহমেদ ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

বৈঠকে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিজ আলিসন ব্ল্যাক, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের ডিরেক্টর রোজিনা হাসান, ডেপুটি ডিরেক্টর সুরাইয়া জাহানসহ বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।