ঢাকা ০১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনাকে ১৭ বার হত্যার চেষ্টা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২২:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অগাস্ট ২০১৫
  • ৪৭৩ বার

দিনটি ছিল শনিবার। ২১ আগস্ট ২০০৪। আবারও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলেন শেখ হাসিনা। শুধু এদিনই নয়, কখনও বিরোধীদলীয় নেতা কখনও বা সরকারের প্রধান থাকা অবস্থায় তাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে ১৭ বার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শেখ হাসিনা সশস্ত্র হামলার শিকার হন বেশ কয়েকবার। সরাসরি গুলি ও গ্রেনেড হামলার এ সব ঘটনায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে বার বার ফিরে এসেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা ৭১-এ ষড়যন্ত্র করেছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। ৭৫-এর ষড়যন্ত্র করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে। আজকেও তারা সক্রিয় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায়।’

তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকে ঢাকা, পাবনার ঈশ্বরদী, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ১৭ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে।’

মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ সব মামলার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা করা হয়। ওই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শক্তিশালী গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় মারা গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৩ জন। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন প্রায় চার শতাধিক নেতাকর্মী।

একই বছরের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে হত্যার উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা।

এর আগে ২০০৩ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শেখ হাসিনা যাচ্ছিলেন এক জনসভায় ভাষণ দিতে। কিন্তু কলারোয়া পৌঁছানোর ঠিক আগ মুহূর্তে গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করা হয়।

২০০১ সালের মে মাসে খুলনায় রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কর্মসূচি ছিল শেখ হাসিনার। সেখানেও পুঁতে রাখা হয়েছিল একটি শক্তিশালী বোমা, যা আগেই উদ্ধার করেছিল গোয়েন্দারা।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় জনসভার মাঠে বোমা পুঁতে রাখা হয়। ৭৬ কেজি ওজনের এই বোমা উদ্ধার হওয়ায় রক্ষা পান তিনি। এই বোমা গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে। বোমাটি বিস্ফোরিত হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত জনসভাস্থল।

১৯৯৬ সালের মার্চে এক অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে কার্জন হল থেকে গুলি করা হয়।

১৯৯৫ সালে পান্থপথের এক জনসভায় তাকে লক্ষ্য করে চালানো হয় বোমা হামলা।

১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ট্রেনমার্চে ঈশ্বরদী যান শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি চালানো হয়। সেবারও অক্ষত থেকে যান তিনি।

১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা আবারও হামলার শিকার হন। সংসদ উপ-নির্বাচনে গ্রিন রোডে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে গেলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

১৯৮৯ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি লক্ষ্য করে ফ্রিডম পার্টির অস্ত্রধারীরা গুলি চালায় এবং গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভায় যাওয়ার পথে গাড়িবহরে পুলিশ গুলি চালালে মারা যান প্রায় ১৪ জন। এ যাত্রায়ও প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, ওই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি ময়দানে তৎকালীন ৮ দলীয় ঐক্যজোটের একটি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ওই দিন সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা থেকে বিমানযোগে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ হাসিনা। এর পর দুপুর ১টার দিকে শেখ হাসিনা কয়েক হাজার মানুষের মিছিল নিয়ে গাড়িবহর নগরীর কোতয়ালী থানার কাছে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনের সড়ক অতিক্রমকালে পুলিশ নির্বিচারে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতাড়ি গুলি, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। সঙ্গে চলে বেপরোয়া লাঠিচার্জ। সমাবেশে যোগদানের আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে আইনজীবী ভবনে চট্টগ্রাম পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের মতবিনিময়ের কথা ছিল। দলের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আইনজীবী ভবনে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দেশে ফেরার পর ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর শেখ হাসিনা প্রথম হামলার শিকার হন। স্বৈরাচারবিরোধী অবরোধ চলাকালে সচিবালয়ের সামনে তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।

এদিকে একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যমতে, ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ১০ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য টার্গেট করা হয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কাহ্হার আখন্দ বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট মধ্যরাতে ৭-৮ জন দুষ্কৃতকারী বেবিট্যাক্সিযোগে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে গুলিবর্ষণ, গ্রেনেড ও বোমা হামলা করে। এ সময় ডিউটিরত হাবিলদার মো. জহিরুল হক, কনস্টেবল জাকির হোসেন পাল্টা গুলি করেন। পরে দুষ্কৃতকারীরা ‘কর্নেল ফারুক জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে পালিয়ে যায়। এভাবে একাধিকবার শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়।’

তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে ১৯৮৯ সালে হত্যার অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলা নম্বর-৪৩। তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খালেক উজ্জামান ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

শেখ হাসিনাকে ১৭ বার হত্যার চেষ্টা

আপডেট টাইম : ১২:২২:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অগাস্ট ২০১৫

দিনটি ছিল শনিবার। ২১ আগস্ট ২০০৪। আবারও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলেন শেখ হাসিনা। শুধু এদিনই নয়, কখনও বিরোধীদলীয় নেতা কখনও বা সরকারের প্রধান থাকা অবস্থায় তাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে ১৭ বার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শেখ হাসিনা সশস্ত্র হামলার শিকার হন বেশ কয়েকবার। সরাসরি গুলি ও গ্রেনেড হামলার এ সব ঘটনায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে বার বার ফিরে এসেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা ৭১-এ ষড়যন্ত্র করেছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। ৭৫-এর ষড়যন্ত্র করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে। আজকেও তারা সক্রিয় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায়।’

তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকে ঢাকা, পাবনার ঈশ্বরদী, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ১৭ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে।’

মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ সব মামলার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা করা হয়। ওই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শক্তিশালী গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় মারা গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৩ জন। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন প্রায় চার শতাধিক নেতাকর্মী।

একই বছরের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে হত্যার উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা।

এর আগে ২০০৩ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শেখ হাসিনা যাচ্ছিলেন এক জনসভায় ভাষণ দিতে। কিন্তু কলারোয়া পৌঁছানোর ঠিক আগ মুহূর্তে গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করা হয়।

২০০১ সালের মে মাসে খুলনায় রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কর্মসূচি ছিল শেখ হাসিনার। সেখানেও পুঁতে রাখা হয়েছিল একটি শক্তিশালী বোমা, যা আগেই উদ্ধার করেছিল গোয়েন্দারা।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় জনসভার মাঠে বোমা পুঁতে রাখা হয়। ৭৬ কেজি ওজনের এই বোমা উদ্ধার হওয়ায় রক্ষা পান তিনি। এই বোমা গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে। বোমাটি বিস্ফোরিত হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত জনসভাস্থল।

১৯৯৬ সালের মার্চে এক অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে কার্জন হল থেকে গুলি করা হয়।

১৯৯৫ সালে পান্থপথের এক জনসভায় তাকে লক্ষ্য করে চালানো হয় বোমা হামলা।

১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ট্রেনমার্চে ঈশ্বরদী যান শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি চালানো হয়। সেবারও অক্ষত থেকে যান তিনি।

১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা আবারও হামলার শিকার হন। সংসদ উপ-নির্বাচনে গ্রিন রোডে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে গেলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

১৯৮৯ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি লক্ষ্য করে ফ্রিডম পার্টির অস্ত্রধারীরা গুলি চালায় এবং গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভায় যাওয়ার পথে গাড়িবহরে পুলিশ গুলি চালালে মারা যান প্রায় ১৪ জন। এ যাত্রায়ও প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, ওই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি ময়দানে তৎকালীন ৮ দলীয় ঐক্যজোটের একটি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ওই দিন সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা থেকে বিমানযোগে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ হাসিনা। এর পর দুপুর ১টার দিকে শেখ হাসিনা কয়েক হাজার মানুষের মিছিল নিয়ে গাড়িবহর নগরীর কোতয়ালী থানার কাছে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনের সড়ক অতিক্রমকালে পুলিশ নির্বিচারে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতাড়ি গুলি, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। সঙ্গে চলে বেপরোয়া লাঠিচার্জ। সমাবেশে যোগদানের আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে আইনজীবী ভবনে চট্টগ্রাম পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের মতবিনিময়ের কথা ছিল। দলের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আইনজীবী ভবনে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দেশে ফেরার পর ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর শেখ হাসিনা প্রথম হামলার শিকার হন। স্বৈরাচারবিরোধী অবরোধ চলাকালে সচিবালয়ের সামনে তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।

এদিকে একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যমতে, ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ১০ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য টার্গেট করা হয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কাহ্হার আখন্দ বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট মধ্যরাতে ৭-৮ জন দুষ্কৃতকারী বেবিট্যাক্সিযোগে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে গুলিবর্ষণ, গ্রেনেড ও বোমা হামলা করে। এ সময় ডিউটিরত হাবিলদার মো. জহিরুল হক, কনস্টেবল জাকির হোসেন পাল্টা গুলি করেন। পরে দুষ্কৃতকারীরা ‘কর্নেল ফারুক জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে পালিয়ে যায়। এভাবে একাধিকবার শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়।’

তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে ১৯৮৯ সালে হত্যার অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলা নম্বর-৪৩। তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খালেক উজ্জামান ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি।