ঢাকা ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রস্তুত নেতারা এগুচ্ছেন কৌশলে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ২১২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চাইছে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। আর আওয়ামী লীগ চাইছে ধরে রাখতে। এমন টার্গেট নিয়েই নেতাকর্মীরা মাঠে। পাশাপাশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও চেষ্টা চালাচ্ছে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সম্প্রতি দলের হাইকমান্ড থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা আসায় প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী যুদ্ধে বিজয়ী হতে নানা কর্মকৌশল আর পরিকল্পনা নির্ধারণ করে মাঠে নেতাকর্মীরা। মৌলভীবাজার-৩ আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপে এমনটি জানালেন তারা। হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.) স্মৃতি বিজড়িত প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা সদরের এই আসনটিকে মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ বলে সব দলের টার্গেট এ আসনটিকে ঘিরেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-৩ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উপদলীয় কোন্দলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেতাকর্মীদের হঠাৎ এমন সক্রিয়তায় ঝিমিয়ে পড়া জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন এখন অনেকটাই সরব। দলীয় নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু করেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় নিজ নিজ বলয়ে নেতাকর্মীকে কৌশলে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।  জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসনটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেন ৬ জন। এদের মধ্যে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে পান ১১৩৩১১টি ভোট, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসীন আলী নৌকা প্রতীকে পান ১৪৪৯১৫টি ভোট, মো. আলাউর রহমান ফুলরী ‘তারা’ প্রতীকে পান ৯৮টি ভোট, মো. মামুনুর রশিদ মই প্রতীকে ভোট পান ৯৯৫টি, মোহাম্মদ শামীম আফজাল ফুটবল প্রতীকে পান ১৯৬১টি ভোট, সৈয়দ আবু জাফর আহমদ কাস্তে প্রতীকে পান ১২৬৬ ভোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে মোট ভোটার ছিলেন ৫৫৪০৭৯ জন। আর মোট ভোট কেন্দ্র ছিল ১৬৬টি। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন সৈয়দ মহসীন আলী। ১০ম  জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এবারও সৈয়দ মহসীন আলী নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে একাধিক নেতা মাঠে সক্রিয়। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় থেকে নতুন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি না হওয়াতে দলের বয়ে চলা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে গ্রুপ এবং উপ-গ্রুপ। সাংগঠনিক ভাবে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে পৃথক পৃথক। এর প্রভাব পড়ছে জেলা, উপজেলার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উপরও। যে যার অনুসারী বা সমর্থক তার প্রার্থিতাই প্রচার করছেন। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সুরাহা হবে এমনটি প্রত্যাশা দলের নিবেদিতপ্রাণ তৃণমূল কর্মীদের। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর সহধর্মিণী সৈয়দা সায়রা মহসীন। রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ফিরুজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, পুলিশের সাবেক এআইজি বজলুল করিম (বিপিএম), জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও  মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কামাল হোসেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমএ রহিম (সিআইপি), জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র ফজলুর রহমান ফজলু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী ও দলের প্রবাসী অনেক নেতাসহ গেল উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এমন অনেকেই। তবে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেই দলের জন্য তাদের অতীত ও বর্তমান নানা কর্মকান্ড তুলে ধরে দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপে জানা গেল নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দেবে নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। তাছাড়া, জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জোটের শরিক অন্যান্য দলও নির্বাচনে কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। তারা জানালেন নৌকা যেই পাবেন আমরা সকলেই তার পক্ষে কাজ করব। আশাকরি সেখানে কারো দ্বিমত থাকবে না। তবে বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। এই প্রতিযোগিতা থাকা ভালো বলে মন্তব্য তাদের। অপরদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা কারণে সাংগঠনিকভাবে সু-সংগঠিত না হলেও জন সমর্থনের দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। নির্বাচনী আগাম প্রচার-প্রচারণায় তাদের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও পরিসংখ্যান বাড়ছে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তিন সদস্যের (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) কমিটিতে ৮ বছর অতিবাহিত করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। সমপ্রতি পূর্ববর্তী কমিটির কার্যক্রম বাতিল করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ ৪৮ সদস্যের নাম উল্লেখ করে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। এতে দলের অনেক নেতাকর্মীর পছন্দ ও অপছন্দ থাকলেও সর্বোপরি সাংগঠনিক কার্যক্রমে দীর্ঘদিন থেকে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। দীর্ঘদিন পর নতুন জেলা কমিটি হওয়াতে এর প্রভাব পড়ে জেলা ও উপজেলাতে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও অনেকটা কমতে শুরু করে। এই কমিটি ঘোষণা আসার পর থেকে নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেকটা সক্রিয় হয়ে উঠেন। ভোটের মাঠে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সাবেক এমপি, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র এম নাসের রহমান, সাবেক মহিলা এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদা রব্বানী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ভিপি মিজান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, সাবেক দুই বারের পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, কমিটি হওয়ার পর তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। জেলা কমিটিতে দৃশ্যমান দু’টি গ্রুপ ছাড়া এখন আর কোনো উপ-গ্রুপ নেই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রাজপথে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করছেন সক্রিয় ভাবে। তারা আশা প্রকাশ করে বলেন- নির্বাচনের আগেই বিদ্যমান দু’টি গ্রুপও এক হয়ে যাবে। আমাদের এমন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তারা বলেন- গণতান্ত্রিক একটি দলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রার্থী থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সব ভেদাভেদ ভুলে নির্বাচনে আমরা ঠিকই ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করব। এখানে কোনো মতানৈক্য থাকবে না। তাছাড়া জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জোটের শরিক দলগুলোও আমাদের পাশে থাকবে। এদিকে ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী নীরবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালালেও এই আসনে তাদের প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যায়নি। তাছাড়া জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এই আসনটিতে তাদের দলীয় কোনো প্রার্থী থাকবে না। বরং জোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন। তবে তারা জোটের কাছে জেলার মধ্যে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী) সংসদীয় আসনটি চাইবেন। এই আলোকেই তারা মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে জেলা সভাপতি সৈয়দ শাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নূরুল হকও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ শাহাব উদ্দিন ও উপ-নির্বাচনে সৈয়দ নুরুল হক মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তবে জেলা জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী জানান, এই দুজনের নাম শোনা গেলেও জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে তারা প্রার্থী থাকবেন না। বরং জাতীয় পার্টি জোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই সমর্থন দিয়ে মাঠে কাজ করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

প্রস্তুত নেতারা এগুচ্ছেন কৌশলে

আপডেট টাইম : ১১:৫২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চাইছে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। আর আওয়ামী লীগ চাইছে ধরে রাখতে। এমন টার্গেট নিয়েই নেতাকর্মীরা মাঠে। পাশাপাশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও চেষ্টা চালাচ্ছে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সম্প্রতি দলের হাইকমান্ড থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা আসায় প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী যুদ্ধে বিজয়ী হতে নানা কর্মকৌশল আর পরিকল্পনা নির্ধারণ করে মাঠে নেতাকর্মীরা। মৌলভীবাজার-৩ আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপে এমনটি জানালেন তারা। হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.) স্মৃতি বিজড়িত প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা সদরের এই আসনটিকে মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ বলে সব দলের টার্গেট এ আসনটিকে ঘিরেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-৩ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উপদলীয় কোন্দলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেতাকর্মীদের হঠাৎ এমন সক্রিয়তায় ঝিমিয়ে পড়া জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন এখন অনেকটাই সরব। দলীয় নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু করেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় নিজ নিজ বলয়ে নেতাকর্মীকে কৌশলে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।  জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসনটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেন ৬ জন। এদের মধ্যে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে পান ১১৩৩১১টি ভোট, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসীন আলী নৌকা প্রতীকে পান ১৪৪৯১৫টি ভোট, মো. আলাউর রহমান ফুলরী ‘তারা’ প্রতীকে পান ৯৮টি ভোট, মো. মামুনুর রশিদ মই প্রতীকে ভোট পান ৯৯৫টি, মোহাম্মদ শামীম আফজাল ফুটবল প্রতীকে পান ১৯৬১টি ভোট, সৈয়দ আবু জাফর আহমদ কাস্তে প্রতীকে পান ১২৬৬ ভোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে মোট ভোটার ছিলেন ৫৫৪০৭৯ জন। আর মোট ভোট কেন্দ্র ছিল ১৬৬টি। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন সৈয়দ মহসীন আলী। ১০ম  জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এবারও সৈয়দ মহসীন আলী নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে একাধিক নেতা মাঠে সক্রিয়। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় থেকে নতুন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি না হওয়াতে দলের বয়ে চলা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে গ্রুপ এবং উপ-গ্রুপ। সাংগঠনিক ভাবে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে পৃথক পৃথক। এর প্রভাব পড়ছে জেলা, উপজেলার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উপরও। যে যার অনুসারী বা সমর্থক তার প্রার্থিতাই প্রচার করছেন। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সুরাহা হবে এমনটি প্রত্যাশা দলের নিবেদিতপ্রাণ তৃণমূল কর্মীদের। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর সহধর্মিণী সৈয়দা সায়রা মহসীন। রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ফিরুজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, পুলিশের সাবেক এআইজি বজলুল করিম (বিপিএম), জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও  মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কামাল হোসেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমএ রহিম (সিআইপি), জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র ফজলুর রহমান ফজলু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী ও দলের প্রবাসী অনেক নেতাসহ গেল উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এমন অনেকেই। তবে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেই দলের জন্য তাদের অতীত ও বর্তমান নানা কর্মকান্ড তুলে ধরে দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপে জানা গেল নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দেবে নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। তাছাড়া, জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জোটের শরিক অন্যান্য দলও নির্বাচনে কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। তারা জানালেন নৌকা যেই পাবেন আমরা সকলেই তার পক্ষে কাজ করব। আশাকরি সেখানে কারো দ্বিমত থাকবে না। তবে বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। এই প্রতিযোগিতা থাকা ভালো বলে মন্তব্য তাদের। অপরদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা কারণে সাংগঠনিকভাবে সু-সংগঠিত না হলেও জন সমর্থনের দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। নির্বাচনী আগাম প্রচার-প্রচারণায় তাদের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও পরিসংখ্যান বাড়ছে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তিন সদস্যের (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) কমিটিতে ৮ বছর অতিবাহিত করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। সমপ্রতি পূর্ববর্তী কমিটির কার্যক্রম বাতিল করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ ৪৮ সদস্যের নাম উল্লেখ করে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। এতে দলের অনেক নেতাকর্মীর পছন্দ ও অপছন্দ থাকলেও সর্বোপরি সাংগঠনিক কার্যক্রমে দীর্ঘদিন থেকে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। দীর্ঘদিন পর নতুন জেলা কমিটি হওয়াতে এর প্রভাব পড়ে জেলা ও উপজেলাতে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও অনেকটা কমতে শুরু করে। এই কমিটি ঘোষণা আসার পর থেকে নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেকটা সক্রিয় হয়ে উঠেন। ভোটের মাঠে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সাবেক এমপি, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র এম নাসের রহমান, সাবেক মহিলা এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদা রব্বানী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ভিপি মিজান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, সাবেক দুই বারের পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, কমিটি হওয়ার পর তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। জেলা কমিটিতে দৃশ্যমান দু’টি গ্রুপ ছাড়া এখন আর কোনো উপ-গ্রুপ নেই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রাজপথে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করছেন সক্রিয় ভাবে। তারা আশা প্রকাশ করে বলেন- নির্বাচনের আগেই বিদ্যমান দু’টি গ্রুপও এক হয়ে যাবে। আমাদের এমন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তারা বলেন- গণতান্ত্রিক একটি দলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রার্থী থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সব ভেদাভেদ ভুলে নির্বাচনে আমরা ঠিকই ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করব। এখানে কোনো মতানৈক্য থাকবে না। তাছাড়া জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জোটের শরিক দলগুলোও আমাদের পাশে থাকবে। এদিকে ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী নীরবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালালেও এই আসনে তাদের প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যায়নি। তাছাড়া জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এই আসনটিতে তাদের দলীয় কোনো প্রার্থী থাকবে না। বরং জোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন। তবে তারা জোটের কাছে জেলার মধ্যে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী) সংসদীয় আসনটি চাইবেন। এই আলোকেই তারা মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে জেলা সভাপতি সৈয়দ শাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নূরুল হকও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ শাহাব উদ্দিন ও উপ-নির্বাচনে সৈয়দ নুরুল হক মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তবে জেলা জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী জানান, এই দুজনের নাম শোনা গেলেও জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে তারা প্রার্থী থাকবেন না। বরং জাতীয় পার্টি জোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই সমর্থন দিয়ে মাঠে কাজ করবে।