ইসলামের এই নীতিমালার লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
২. ইতিহাসের কোরআনিক ধারণা
৩. উৎপাদন উপকরণের ধারণা
৪. সর্বজনীন ভ্রাতৃত্বের ধারণা
৫. সহাবস্থানের স্থায়ী নীতিমালা।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতিটি ব্যাপক আলোচনার দাবি রাখলেও স্থানাভাবের কারণে এখানে তা সম্ভব নয়।
অতএব, দুনিয়ার যেখানে যে সম্পদ আছে তার স্রষ্টা যেমন আল্লাহ, তেমনি তার চূড়ান্ত মালিকও তিনি।
ইসলাম কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কিংবা সমাজের ক্ষতিকর কাজে সম্পদ ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ রাখেনি। সম্পদ উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলাম যে নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে তা নিম্নরূপ—
১. সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, যেন কারো কোনো স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হয়
২. জাকাত প্রদান করা
৩. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
৪. সুদ ও সুদি লেনদেন বন্ধ করা
৫. ব্যবসায়ে সব ধরনের এবং প্রকৃতির প্রতারণা পরিহার করা
৬. অপ্রয়োজনীয় সম্পদের মজুদ গড়ে না তোলা
৭. হারাম বস্তু উৎপাদন, বাজারজাত করণসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মতৎপরতা থেকে বিরত থাকা
৮. মুনাফাখোরি ব্যবসা বা লেনদেন থেকে বিরত থাকা
৯. সমাজে বৈধ সম্পদের অব্যাহত সঞ্চালন নিশ্চিত করা, যাতে সহজেই ভোক্তার কাছে সম্পদ পৌঁছানো নিশ্চিত হয়।
১০. এ ছাড়া ইসলাম সম্পদ বিকেন্দ্রীকরণের একটি বিশেষ পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। মৃত ব্যক্তির সম্পদ আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া। তবে তার কোনো আত্মীয় না থাকলে সে সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া।
আমরা জানি, আমাদের সমাজসহ পৃথিবীর সব সমাজেই বৈধ-অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণ ও ব্যয়ের প্রবণতা আছে। কিন্তু ইসলাম তার অনুসারীদের অবৈধ পন্থায় সম্পদ উৎপাদন, উপার্জন যেমন অনুমোদন দেয় না, তেমনি অবৈধ উপায়ে সম্পদ ভোগ-বণ্টনের অনুমতি দেয় না। ইসলাম উপার্জনের ক্ষেত্রে সামাজিক স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতেই বৈধতা ও অবৈধতার পার্থক্য সৃষ্টি করে দিয়েছে। এমনকি বৈধ উপায়ে যেসব ধন-সম্পদ উপার্জন করা হবে তা পুঞ্জীভূত করে রাখা যাবে না। কেননা এতে সম্পদের আবর্তন বন্ধ হয়ে যায় এবং ধন-সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।
সম্পদ সঞ্চয়কারী নিজেই মারাত্মক নৈতিক রোগে আক্রান্ত হয় তা নয়, বরং সে সমাজের বিরুদ্ধে সব ধরনের জঘন্যতম অপরাধ করে এবং অবস্থানও নেয়। এই নীতিমালার আলোকে ইসলাম দৈনন্দিন জীবনের জন্য যেসব বস্তু ও কাজ অবৈধ করে দিয়েছে, সেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক উল্লেখ করছি—
১. উৎকোচ আদান-প্রদান করা
২. ব্যক্তি-সমষ্টি-নির্বিশেষে সবার সম্পদ আত্মসাৎ করা
৩. চৌর্য কর্ম
৪. এতিম-অসহায়দের সম্পদ আত্মসাৎ
৫. মদ উৎপাদন, মাদকদ্রব্য এবং এসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড
৬. জুয়া এবং এমন সব উপায়-উপকরণ, যেগুলোর মাধ্যমে নিছক ঘটনাচক্রে ও ভাগ্যক্রমে একদল লোকের সম্পদ অন্যদলের কাছে স্থানান্তর
৭. ভাগ্য গণনা ও জ্যোতিষীর ব্যবসা
৮. মূর্তি গড়া, মূর্তি বিক্রয়, মূর্তির উপাসনা এবং এতদসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড ইত্যাদি।
ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে যেসব এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে তার উদ্দেশ্য ছোট্ট পরিসরে উল্লেখ করছি—
১. ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গলের জন্য আদল প্রতিষ্ঠা করা
২. অর্থনৈতিক বিষয়ে দয়া প্রতিষ্ঠা করা
৩. সমাজে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা
৪. সমাজ থেকে অশোভনীয় কার্যাবলি দূরীভূত করা
৫. অযাচিত বোঝা ও শৃঙ্খল থেকে মানুষকে মুক্ত করা
৬. হালাল উপায়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা
৭. সম্পদের সর্বাধিক বিতরণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা
৮. সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করা
৯. সমাজে সহযোগিতার প্রবণতা উৎসাহিত করা
১০. সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভে আনুকূল্য প্রদান করা ইত্যাদি।
আসুন, আমরা সবাই ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে ইসলামী জীবনাদর্শ রূপায়ণে তৎপর হই।