ঢাকা ১১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবাক করা উন্নতি ইরানের কৃষিতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৮:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৪৮৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইরান বিশাল  দেশ। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ১৩/১৪ গুণ বড়। তবে বিরাট অংশজুড়ে মরুভূমি। বাংলাদেশের মতো অতটা পলিযুক্ত উর্বর মাটি নেই এখানে। ইরানের দু’পাশে রয়েছে দুটো সাগর- দক্ষিণে পারস্য উপসাগর আর উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর। বেশির ভাগ জায়গায় পাহাড়। রাজধানী  তেহরান তো পুরোটাই পাহাড়ের ওপর। ধুলোমাটি পাওয়াই দুষ্কর। পাথুরে মাটি। ফলে বিশাল দেশ হলেও কৃষিকাজের জন্য ভূমির পরিমাণ সে তুলনায় অনেক কম। যা আছে তাও সব চাষের আওতায়  নেই। যে জমি আছে তাতে কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়  বেশ। এরমধ্যে আপেল, আঙ্গুর, খোরমা, পেস্তা,  বেদানা, নাশপাতি, কমলা, তরমুজসহ নানা রকমের ফল উৎপাদিত হয় প্রচুর পরিমাণে। নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজি সবই ইরান নিজে উৎপাদন করে। প্রধান খাদ্য হচ্ছে রুটি। সে কারণে প্রয়োজনীয় গম নিজেরা উৎপাদনের চেষ্টা করে আসছে। গত বিশ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি গম হয়েছে এবং এবার ইরান গম আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। আমদানি না করে বরং কয়েক লাখ টন গম রপ্তানি করা যাবে এবার।
ইরানের উত্তরাঞ্চলে কিছু ধান উৎপাদিত হয়। উত্তরাঞ্চলকে ফার্সিতে শোমাল বলে। এবার ইরানি সরকার ও কৃষকদের আপ্রাণ চেষ্টায় সেই শোমালে ধানের ফলনও বাম্পার হয়েছে। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি ধান হয়েছে। বাজারে ইরানি চালের দাম বেশ কমেছে।  সবচেয়ে ভালোমানের যে চাল কিছুদিন আগেও বিক্রি হয়েছে বাংলাদেশি টাকার মানে প্রায় ৪০০ টাকায় সেই চালের দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকায়। প্রতিবছর ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে চাল আমদানি করে ইরান। এবার বাম্পার ফলনের কারণে চাল আমদানিও কমে যাবে।
এ দেশের নিজস্ব খাদ্য ও কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে ডিম, দুধ, গোশত (গরু, ছাগল ও দুম্বার গোশত)। বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ব্রয়লার মুরগি, টার্কি ও কোয়েল পাখির গোশত। পাওয়া যায় উট পাখির গোশত; এমনকি উটের গোশতও। উটের  গোশতের দাম গরুর গোশতের মতোই। তবে গরু, ছাগল, দুম্বা ও উটের গোশতের দাম বাংলাদেশের  চেয়ে এখানে অনেক বেশি; অন্তত দ্বিগুণ। অবশ্য,  তেহরানে ডিম ও দুধ বাংলাদেশের চেয়ে সস্তা। প্রচুর পরিমাণে পনির, মাখন, দই ও ঘোল (মাঠা) পাওয়া যায় ইরানে। এর সবই ইরানের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্য। এছাড়া, আরো নানা রকমের ফল, সবজি ও কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হয় চা এবং জাফরান। মাছ পাওয়া যায় মিঠা পানির ও লোনা পানির। মজার কথা হচ্ছে- পারস্য উপসাগরে কিছু ইলিশ মাছও পাওয়া যায়!
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম  খোমেনী দেশের সংসদ সদস্য ও সরকারের মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেছিলেন- আমেরিকা ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ইরানকে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। কারণ ওরা সব সময় অবরোধ/নিষেধাজ্ঞা দিয়েই রাখবে। এর  মোকাবিলায় নিজেদের পণ্য থাকলে ওরা কিছুই করতে পারবে না। সর্বোপরি, পেটে না থাকলে  কেউ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইবে না।
মহান ইমামের সেই কথা অনুসরণে ইরান এখন কৃষিতে বিশাল উন্নতি করেছে। যে পণ্য ইরানের মাটিতে উৎপাদন সম্ভব তার সবই হচ্ছে এখানে। এ কারণেই কাতারের ওপর অবরোধ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির পাশে খাদ্যের ভাণ্ডার নিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে ইরান। নিজের জনগণের চাহিদা পূরণ করেই এসব বাড়তি খাদ্যপণ্য কাতারে রপ্তানি করছে ইরান। প্রতিদিন সেখানে যাচ্ছে খাদ্যপণ্য কিন্তু ইরানের বাজারে ঘাটতি নেই। দেখেশুনে বলা যায়- সত্যিই কৃষিতে ইরানের উন্নতি অবাক করার মতো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অবাক করা উন্নতি ইরানের কৃষিতে

আপডেট টাইম : ১২:৫৮:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইরান বিশাল  দেশ। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ১৩/১৪ গুণ বড়। তবে বিরাট অংশজুড়ে মরুভূমি। বাংলাদেশের মতো অতটা পলিযুক্ত উর্বর মাটি নেই এখানে। ইরানের দু’পাশে রয়েছে দুটো সাগর- দক্ষিণে পারস্য উপসাগর আর উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর। বেশির ভাগ জায়গায় পাহাড়। রাজধানী  তেহরান তো পুরোটাই পাহাড়ের ওপর। ধুলোমাটি পাওয়াই দুষ্কর। পাথুরে মাটি। ফলে বিশাল দেশ হলেও কৃষিকাজের জন্য ভূমির পরিমাণ সে তুলনায় অনেক কম। যা আছে তাও সব চাষের আওতায়  নেই। যে জমি আছে তাতে কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়  বেশ। এরমধ্যে আপেল, আঙ্গুর, খোরমা, পেস্তা,  বেদানা, নাশপাতি, কমলা, তরমুজসহ নানা রকমের ফল উৎপাদিত হয় প্রচুর পরিমাণে। নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজি সবই ইরান নিজে উৎপাদন করে। প্রধান খাদ্য হচ্ছে রুটি। সে কারণে প্রয়োজনীয় গম নিজেরা উৎপাদনের চেষ্টা করে আসছে। গত বিশ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি গম হয়েছে এবং এবার ইরান গম আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। আমদানি না করে বরং কয়েক লাখ টন গম রপ্তানি করা যাবে এবার।
ইরানের উত্তরাঞ্চলে কিছু ধান উৎপাদিত হয়। উত্তরাঞ্চলকে ফার্সিতে শোমাল বলে। এবার ইরানি সরকার ও কৃষকদের আপ্রাণ চেষ্টায় সেই শোমালে ধানের ফলনও বাম্পার হয়েছে। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি ধান হয়েছে। বাজারে ইরানি চালের দাম বেশ কমেছে।  সবচেয়ে ভালোমানের যে চাল কিছুদিন আগেও বিক্রি হয়েছে বাংলাদেশি টাকার মানে প্রায় ৪০০ টাকায় সেই চালের দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকায়। প্রতিবছর ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে চাল আমদানি করে ইরান। এবার বাম্পার ফলনের কারণে চাল আমদানিও কমে যাবে।
এ দেশের নিজস্ব খাদ্য ও কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে ডিম, দুধ, গোশত (গরু, ছাগল ও দুম্বার গোশত)। বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ব্রয়লার মুরগি, টার্কি ও কোয়েল পাখির গোশত। পাওয়া যায় উট পাখির গোশত; এমনকি উটের গোশতও। উটের  গোশতের দাম গরুর গোশতের মতোই। তবে গরু, ছাগল, দুম্বা ও উটের গোশতের দাম বাংলাদেশের  চেয়ে এখানে অনেক বেশি; অন্তত দ্বিগুণ। অবশ্য,  তেহরানে ডিম ও দুধ বাংলাদেশের চেয়ে সস্তা। প্রচুর পরিমাণে পনির, মাখন, দই ও ঘোল (মাঠা) পাওয়া যায় ইরানে। এর সবই ইরানের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্য। এছাড়া, আরো নানা রকমের ফল, সবজি ও কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হয় চা এবং জাফরান। মাছ পাওয়া যায় মিঠা পানির ও লোনা পানির। মজার কথা হচ্ছে- পারস্য উপসাগরে কিছু ইলিশ মাছও পাওয়া যায়!
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম  খোমেনী দেশের সংসদ সদস্য ও সরকারের মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেছিলেন- আমেরিকা ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ইরানকে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। কারণ ওরা সব সময় অবরোধ/নিষেধাজ্ঞা দিয়েই রাখবে। এর  মোকাবিলায় নিজেদের পণ্য থাকলে ওরা কিছুই করতে পারবে না। সর্বোপরি, পেটে না থাকলে  কেউ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইবে না।
মহান ইমামের সেই কথা অনুসরণে ইরান এখন কৃষিতে বিশাল উন্নতি করেছে। যে পণ্য ইরানের মাটিতে উৎপাদন সম্ভব তার সবই হচ্ছে এখানে। এ কারণেই কাতারের ওপর অবরোধ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির পাশে খাদ্যের ভাণ্ডার নিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে ইরান। নিজের জনগণের চাহিদা পূরণ করেই এসব বাড়তি খাদ্যপণ্য কাতারে রপ্তানি করছে ইরান। প্রতিদিন সেখানে যাচ্ছে খাদ্যপণ্য কিন্তু ইরানের বাজারে ঘাটতি নেই। দেখেশুনে বলা যায়- সত্যিই কৃষিতে ইরানের উন্নতি অবাক করার মতো।