হাওর বার্তা ডেস্কঃ গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার ২০ গ্রামের মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো। গত ৩০ বছর ধরে ওই ২০ গ্রামের মানুষ বাঁশের সাঁকোয় কুমার নদী পার হচ্ছেন। সাধারণ মানুষ, হাসপাতালের রোগী, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এ সাঁকোতেই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। এতে কৃষকের পণ্য পরিবহনসহ সাধারণ মানুষের হাট-বাজার যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। মুমূর্ষ রোগী নিয়ে গ্রামবাসীদের কষ্টের সীমা থাকেনা।
গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার কৃষ্ণাদিয়া ও ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলার কুমারকান্দা বাজারকে বিভক্ত করেছে কুমার নদী। ৩০ বছর আগে এ নদীতে নৌকায় খেয়া পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় নদীতে বাঁশের সাঁকো স্থাপন করে। তারপর থেকে দু‘উপজেলার কৃষ্ণাদিয়া, কুমারকান্দা, কেশারদিয়া, জানবাগ, যদুনন্দী, অলসপুর, বালুচর, কামইদিয়া, ফুলবাড়িয়া, পশারগাতী, কাওয়ালদিয়া, পুরাতন মুকসুদপুর, কোনাকোনা, খাড়দিয়া, পিশনাইল, বেতালসহ ২০ গ্রামের মানুষের চলাচলে একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে এ বাঁশের সাঁকো।
গোপালগঞ্জের কৃষ্ণাদিয়াতে ৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ টি উচ্চ বিদ্যালয় একটি মাদ্রসা ও ১টি বড় বাজার রয়েছে। সালথা উপজেলার গ্রাম থেকে প্রতিদিন শ’ শ’ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা কৃষ্ণাদিয়াতে আসেন। এছাড়া সালথা উপজেলার ওই গ্রামগুলোর মানুষ চিকিসা সেবা নিতে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভর করেন।
সালথা উপজেলার যদুনন্দী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, সালথার অন্তত ১০ টি গ্রামের মানুষ কৃষ্ণাদিয়া হাটে আসেন। এখানে কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য বেচাকেনা করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীরা পড়াশেনা করেত কৃষ্ণাদিয়ার স্কুল ও মাদ্রসায় আসে। চিকিৎসার জন্য রোগীরা কাছে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে যান। এসব শ্রেণি পেশার মানুষকে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাতায়াত করতে প্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া মুমূর্ষ রোগী পারাপারে দুর্ভোগের সীমা থাকেনা।
কৃষ্ণাদিয়া বাগুমৃধা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র সবুজ গাজী, ও মেহেদী গাজী বলে, আমাদের বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দী গ্রামে। আমাদের ওখানে ভালো স্কুল নেই। তাই বাঁশের সাকো পার হয়ে আমাদের মতো অনেকেই কৃষ্ণাদিয়ার প্রাইমারী ও হাই স্কুলে পড়াশোনা করতে আসে। এতে অনেক সময় আমাদের শিক্ষার্থীরা সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। কুমার নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হলে আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাব।
কৃষ্ণাদিয়া গ্রামের কৃষক সুভাষ দাস ও মনা দাস বলেন, মুকসুদপুর উপজেলা সদরে অধিকাংশ সাক-সবজি কৃষ্ণাদিয়া হাট থেকে যায়। এসব সবজি কৃষ্ণাদিয়াসহ সালথা উপজেলার গ্রামে উৎপাদিত হয়। সালথার গ্রাম থেকে কৃষ্ণাদিয়া বাজারে সাঁকো পার হয়ে সবজি আনতে কৃষকের কষ্টের সীমা থাকেনা। এছাড়া সাঁকো দিয়ে এ অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত পন্য পরিবহনে অতিরিক্ত টাকা ও সময় ব্যয় করতে হয়।
কৃষ্ণাদিয়া গ্রামের বাগু মৃধা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চৈতন্য কুমার পাল বলেন, হাটের দিনে এ সাঁকো দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পার হয়ে কৃষ্ণাদিয়া হাটে আসে। এছাড়া প্রতিদিন দু’উপজেলার ২০ গ্রামের শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন। এতে তাদের অনেক ক্ষেত্রে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। কুমার নদীর ওপর ব্রিজ নির্মিত হলে দু’উপজেলার মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচিত হবে।
মুকসুদপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল খালেক বলেন, কুমার নদীর বিভিন্ন স্থানে ব্রিজ নির্মাণের সমীক্ষা শুরু হয়েছে। এ মুহুর্তে কৃষ্ণাদিয়া পয়েন্টে সেতু নির্মাণের কোন পরিকল্পনা নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে কৃষ্ণাদিয়ায় সেতু নির্মিত হবে। আপাতত কৃষ্ণাদিয়ার অদূরে ছিলমারী খেয়াঘাটে কুমার নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জনানা ওই প্রকৌশলী।
সংবাদ শিরোনাম
২০ গ্রামের মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১২:১৭:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
- ৩৬৫ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ