ঢাকা ১১:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুইবেলা খাবার জোটে না ৮০ ভাগ পথশিশুর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৮:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ২৫৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খাবারের অনিশ্চয়তায় থাকে ৮০ ভাগ পথশিশু। প্রতিদিন অন্তত দুইবেলা খাবারের জন্য তাদের ভোর পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এসব পথশিশুর মৌলিক অধিকারগুলো নিয়ে বেঁচে থাকার কথা থাকলেও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে না। বেঁচে থাকার জন্য অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন দরকার; কিন্তু এই ন্যূনতম অধিকারটুকুও তারা পায় না। অধিকাংশ পথশিশুর জীবনের গল্প প্রায় একই রকম। এদের একজন আমিনুল। ভোর পাঁচটায় ফুল এনে মালা গাঁথে, তারপর সেই মালা বেচতে বের হয়। এ কাজ চলে তার রাত দশটা পর্যন্ত।

আমিনুলের পেছনের গল্পটা অন্যসব পথশিশুর মতোই—যার ‘মা মারা গেছে, বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছে, সত্ মায়ের অত্যাচার, অতপর ট্রেনের ছাদে চড়ে রাজধানী আগমন…’। ঈদের ছুটিতে কথা হয় তার সঙ্গে। শেষ বিকালের আলোয় ছুটোছুটির এক পর্যায়ে ফুল বিক্রির বায়না নিয়ে বসে পড়ে সে। তার সঙ্গে গল্প জমে ওঠে।

আমিনুল তখন বলে, ‘আপনে ফুল না নিলে রাতে খাবার ট্যাকা হইবো না, একটা ফুল নিয়া ট্যাকা দেন আফা, খিচুরী খামু। সে আরো বলে, মাইনষ্যের ছাড়া (এটো) খাবার খাইতে আর ভালো লাগে না…!’ আমিনুলের মতো চকলেট বিক্রেতা সাকিল ও তানিয়ার সারাদিনের খাবার জোগাতে তাদের ফুল কিংবা চকলেট বিক্রির কাজ করতে হয়। নইলে উপোস। নিজেদের খাবার জোগাড় করতে শতকরা ৮০ ভাগ পথশিশুকে কোনো না কোনো কাজ করতে হয়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) ২০১৬ সালে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ‘পথশিশুদের অমানবিক জীবন ও বিভিন্ন সমস্যা’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে খাবার জোগাড়ের জন্য ৮০ ভাগ পথশিশু বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। ৮৪ ভাগ পথ শিশুর কোনো শীতবস্ত্র নেই। অসুস্থ হলে তাদের প্রায় ৫৪ শতাংশের দেখাশোনার জন্য কেউ থাকে না। অর্থের অভাবে পথশিশুদের ৭৫ শতাংশ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। পথশিশুদের প্রায় ৪০ শতাংশ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না। আর ৩৫ শতাংশ শিশু খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ ধূমপান করে এবং রাতে ঘুমানোর জন্য ৪১ শতাংশ শিশুর কোনো বিছানা নেই।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি যুগোপযোগী নীতিমালা না থাকায় এই পথশিশুদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পথশিশুদের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও তার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিশু। পথশিশুদের উন্নয়নে মনযোগী না হলে, সরকার ঘোষিত ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন কঠিন হবে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুস শহিদ বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে পথশিশুদের মূল ধারায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুই বছর আগেই ঘোষণা দিয়েছেন ‘কোন শিশুকে পথে দেখতে চাই না’ তার আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। কিন্তু সুনির্দিষ্ট বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নেই। যদি সময়ভিত্তিক এবং বেসরকারি সংস্থাকে কাজ ভাগ করে দিয়ে সরকারি তত্ত্বাবধানে প্রকল্প হাতে নেয়া যায় তাহলে পথশিশুদের সমস্যা সমাধান সম্ভব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দুইবেলা খাবার জোটে না ৮০ ভাগ পথশিশুর

আপডেট টাইম : ০৩:০৮:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খাবারের অনিশ্চয়তায় থাকে ৮০ ভাগ পথশিশু। প্রতিদিন অন্তত দুইবেলা খাবারের জন্য তাদের ভোর পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এসব পথশিশুর মৌলিক অধিকারগুলো নিয়ে বেঁচে থাকার কথা থাকলেও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে না। বেঁচে থাকার জন্য অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন দরকার; কিন্তু এই ন্যূনতম অধিকারটুকুও তারা পায় না। অধিকাংশ পথশিশুর জীবনের গল্প প্রায় একই রকম। এদের একজন আমিনুল। ভোর পাঁচটায় ফুল এনে মালা গাঁথে, তারপর সেই মালা বেচতে বের হয়। এ কাজ চলে তার রাত দশটা পর্যন্ত।

আমিনুলের পেছনের গল্পটা অন্যসব পথশিশুর মতোই—যার ‘মা মারা গেছে, বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছে, সত্ মায়ের অত্যাচার, অতপর ট্রেনের ছাদে চড়ে রাজধানী আগমন…’। ঈদের ছুটিতে কথা হয় তার সঙ্গে। শেষ বিকালের আলোয় ছুটোছুটির এক পর্যায়ে ফুল বিক্রির বায়না নিয়ে বসে পড়ে সে। তার সঙ্গে গল্প জমে ওঠে।

আমিনুল তখন বলে, ‘আপনে ফুল না নিলে রাতে খাবার ট্যাকা হইবো না, একটা ফুল নিয়া ট্যাকা দেন আফা, খিচুরী খামু। সে আরো বলে, মাইনষ্যের ছাড়া (এটো) খাবার খাইতে আর ভালো লাগে না…!’ আমিনুলের মতো চকলেট বিক্রেতা সাকিল ও তানিয়ার সারাদিনের খাবার জোগাতে তাদের ফুল কিংবা চকলেট বিক্রির কাজ করতে হয়। নইলে উপোস। নিজেদের খাবার জোগাড় করতে শতকরা ৮০ ভাগ পথশিশুকে কোনো না কোনো কাজ করতে হয়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) ২০১৬ সালে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ‘পথশিশুদের অমানবিক জীবন ও বিভিন্ন সমস্যা’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে খাবার জোগাড়ের জন্য ৮০ ভাগ পথশিশু বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। ৮৪ ভাগ পথ শিশুর কোনো শীতবস্ত্র নেই। অসুস্থ হলে তাদের প্রায় ৫৪ শতাংশের দেখাশোনার জন্য কেউ থাকে না। অর্থের অভাবে পথশিশুদের ৭৫ শতাংশ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। পথশিশুদের প্রায় ৪০ শতাংশ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না। আর ৩৫ শতাংশ শিশু খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ ধূমপান করে এবং রাতে ঘুমানোর জন্য ৪১ শতাংশ শিশুর কোনো বিছানা নেই।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি যুগোপযোগী নীতিমালা না থাকায় এই পথশিশুদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পথশিশুদের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও তার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিশু। পথশিশুদের উন্নয়নে মনযোগী না হলে, সরকার ঘোষিত ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন কঠিন হবে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুস শহিদ বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে পথশিশুদের মূল ধারায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুই বছর আগেই ঘোষণা দিয়েছেন ‘কোন শিশুকে পথে দেখতে চাই না’ তার আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। কিন্তু সুনির্দিষ্ট বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নেই। যদি সময়ভিত্তিক এবং বেসরকারি সংস্থাকে কাজ ভাগ করে দিয়ে সরকারি তত্ত্বাবধানে প্রকল্প হাতে নেয়া যায় তাহলে পথশিশুদের সমস্যা সমাধান সম্ভব।