ঢাকা ০৯:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিতলমারীর চাষিরা পাটের স্বর্ণালী দিনের আশায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৩৭৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেশি দিন আগের কথা নয়। এক সময় বাগেরহাটের বেশিরভাগ জমিতে পাট চাষ হতো। নদীতে চোখে পড়ত সারি সারি পাট বোঝাই পাল তোলা নৌকা। এ সব পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হতো বিদেশে। সেই সময় অর্থকারী ফসল হিসেবে পাটের আঁশ ছিল অন্যতম।

বিভিন্ন জটিলতায় দেশের বড় বড় পাটকল বন্ধ হওয়ায় এবং বিদেশে রপ্তানি বন্ধের ফলে পাটের বাজার একেবারে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে পাট চাষে লোকসান গুনতে হয় চাষিদের। ফলে এটির চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তারা। কিন্তু বর্তমানে পাটের বাজার দর ভালো থাকায় এবং পাটকাঠির কদর বেড়ে যাওয়ায় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় কয়েক হাজার চাষি দিন দিন পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

এ বছর চিতলমারী উপজেলায় ব্যাপকভাবে পাটের চাষ করা হয়েছে। পাটের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাই তারা আবারও ফিরে যেতে চান সোনালী আঁশের স্বর্ণালী দিনে। এমনটাই জানিয়েছেন এ অঞ্চলের পাট চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চিতলমারী সদর, সন্তোষপুর ও চরবানিয়ারী ইউনিয়নে মোট ২ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৬৫ একর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। পাট চাষের অনুকূলে আবহাওয়া থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে।

পাট চাষিরা বর্তমানে জমি থেকে পাট কেটে জাগ (পচন) দেওয়া ও আঁশ তোলার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। খাল-বিল ও ডোবা-নালার পানিতে পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। পাটের আঁশ তুলছেন চাষিরা। গ্রামের রাস্তা ও বাড়িতে পাটের আঁশ ও খড়ি শুকানের জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভালো লাভের আশায় অনেক চাষি পাট গুদামজাত করে রাখছেন। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে চাষিদের।

উপজেলার চরডাকাতিয়া গ্রামের পাট চাষি প্রফুল্ল বিশ্বাস, রমেশ বিশ্বাস, পাঙ্গাশিয়া গ্রামের বিপ্লব বিশ্বাস জানান, এ বছর পাটের ফলন ভালো। বর্তমানে প্রতিমণ পাট ১৩০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের তুলনায় পাটকাঠির কদর বেড়েছে। ফলে পাটকাঠি বিক্রি করে বেশ টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষিবিদরা জানান, বর্তমানে ধান, গম ও সবজি চাষের চেয়ে পাট চাষ লাভজনক হওয়ার এলাকার কয়েক হাজার চাষি ঝুঁকেছেন পাট চাষের দিকে। তবে পাটের বাজার দর মণপ্রতি ২০০০ টাকা হলে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আবুল হাসান জানান, এ বছর এ উপজেলায় উল্লেখযোগ্য পাট চাষ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগ বালাই কম থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা এ লক্ষ্যমাত্রাকেও অতিক্রম করেছে। বর্তমানে পাট চাষ অন্যান্য ফসলের থেকে লাভবান হওয়ায় এলাকার চাষিরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আগামীতে এ অঞ্চলে পাটের চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি অভিমত পোষণ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চিতলমারীর চাষিরা পাটের স্বর্ণালী দিনের আশায়

আপডেট টাইম : ০৫:১২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেশি দিন আগের কথা নয়। এক সময় বাগেরহাটের বেশিরভাগ জমিতে পাট চাষ হতো। নদীতে চোখে পড়ত সারি সারি পাট বোঝাই পাল তোলা নৌকা। এ সব পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হতো বিদেশে। সেই সময় অর্থকারী ফসল হিসেবে পাটের আঁশ ছিল অন্যতম।

বিভিন্ন জটিলতায় দেশের বড় বড় পাটকল বন্ধ হওয়ায় এবং বিদেশে রপ্তানি বন্ধের ফলে পাটের বাজার একেবারে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে পাট চাষে লোকসান গুনতে হয় চাষিদের। ফলে এটির চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তারা। কিন্তু বর্তমানে পাটের বাজার দর ভালো থাকায় এবং পাটকাঠির কদর বেড়ে যাওয়ায় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় কয়েক হাজার চাষি দিন দিন পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

এ বছর চিতলমারী উপজেলায় ব্যাপকভাবে পাটের চাষ করা হয়েছে। পাটের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাই তারা আবারও ফিরে যেতে চান সোনালী আঁশের স্বর্ণালী দিনে। এমনটাই জানিয়েছেন এ অঞ্চলের পাট চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চিতলমারী সদর, সন্তোষপুর ও চরবানিয়ারী ইউনিয়নে মোট ২ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৬৫ একর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। পাট চাষের অনুকূলে আবহাওয়া থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে।

পাট চাষিরা বর্তমানে জমি থেকে পাট কেটে জাগ (পচন) দেওয়া ও আঁশ তোলার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। খাল-বিল ও ডোবা-নালার পানিতে পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। পাটের আঁশ তুলছেন চাষিরা। গ্রামের রাস্তা ও বাড়িতে পাটের আঁশ ও খড়ি শুকানের জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভালো লাভের আশায় অনেক চাষি পাট গুদামজাত করে রাখছেন। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে চাষিদের।

উপজেলার চরডাকাতিয়া গ্রামের পাট চাষি প্রফুল্ল বিশ্বাস, রমেশ বিশ্বাস, পাঙ্গাশিয়া গ্রামের বিপ্লব বিশ্বাস জানান, এ বছর পাটের ফলন ভালো। বর্তমানে প্রতিমণ পাট ১৩০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের তুলনায় পাটকাঠির কদর বেড়েছে। ফলে পাটকাঠি বিক্রি করে বেশ টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষিবিদরা জানান, বর্তমানে ধান, গম ও সবজি চাষের চেয়ে পাট চাষ লাভজনক হওয়ার এলাকার কয়েক হাজার চাষি ঝুঁকেছেন পাট চাষের দিকে। তবে পাটের বাজার দর মণপ্রতি ২০০০ টাকা হলে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আবুল হাসান জানান, এ বছর এ উপজেলায় উল্লেখযোগ্য পাট চাষ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগ বালাই কম থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা এ লক্ষ্যমাত্রাকেও অতিক্রম করেছে। বর্তমানে পাট চাষ অন্যান্য ফসলের থেকে লাভবান হওয়ায় এলাকার চাষিরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আগামীতে এ অঞ্চলে পাটের চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি অভিমত পোষণ করেন।