ঢাকা ০৯:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাসমান কৃষিতে সম্ভাবনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭
  • ৩০০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পানির ওপর কচুরিপানা ও নানা জলজ উদ্ভিদ দিয়ে বেড তৈরি করে তাতে নানা ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব। লিখেছেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

বর্ষা মৌসুমে দেশের কিছু এলাকার বেশকিছু অংশ জলাবদ্ধ থাকে। এ জলাবদ্ধতা কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় ভরে যায়। ফলে এসব এলাকায় তখন তেমন কৃষিকাজ হয় না। তাই এসব এলাকায় অনেকেই ভাসমান পদ্ধতিতে কৃষি কার্যক্রম শুরু করেন। বিশেষ করে বিভিন্ন বিল, হাওর, নালা, খাল ও মজা পুকুরে এ ভাসমান চাষ শুরু হয়। এখন দেশের অনেক এলাকায়ই চলছে ভাসমান পদ্ধতির এ কৃষিকাজ। কেবল বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা জলাবদ্ধতা নয়, পুকুর, নদী বা খালেও এ ভাসমান পদ্ধতির চাষ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ চাষে খরচ যেমন কম, তেমনি বাড়তি সারের প্রয়োজনও হয় না।

জলজ কচুরিপানা বা অন্য উদ্ভিদ এ চাষে জৈব সারের কাজ করে। এ পদ্ধতিতে গ্রীষ্ম মৌসুমে কলমিশাক, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক, ডাঁটা, ঢেঁড়স, বরবটি, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, শসা, করলা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, পাটশাক, চালকুমড়া, পানিকচু, হলুদ ও মুখি কচু চাষ সম্ভব। আর শীত মৌসুমে পালংশাক, লালশাক, ধনেপাতা, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, ব্রোকলি, মুলা, গাজর, টমেটো, লাউ, শিম, মিষ্টিকুমড়া, আলু, মিষ্টিআলু, বেগুন, সরিষাশাক, বাঙ্গি ও স্ট্রবেরি চাষ করা সম্ভব। এছাড়াও এ পদ্ধতিতে মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন বা হলুদ চাষও সম্ভব।

মূলত পানিতে কচুরিপানা, শেওলা, জলজ আগাছা, দুলালি লতা, ধানের খড়, ফসলের অবশিষ্টাংশ, আখের ছোবড়া বা অন্য জলজ উদ্ভিদ দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে এ পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। ছোট বা বড় আকারে দুই ভাবেই বেড বানানো যায়। বর্ষার শুরুতে যখন কচুরিপানাগুলো দ্রুত বংশ বিস্তার শুরু করে সাধারণত জ্যৈষ্ঠ-শ্রাবণ, কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছা, ধানের খড়, ফসলের অবশিষ্টাংশ, শ্যাওলা প্রভৃতি স্তূপ করে ভাসমান বেড তৈরি করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। জোয়ার-ভাটা এলাকায়, মজা পুকুরে, হাওর এলাকায় সারা বছর ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি আবাদও করা যায়। মৌসুম শেষে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বেড যদি মাটির ওপর বসে যায়, তবে তা ভেঙে জমিতে বিছিয়ে কোনো প্রকার চাষ, মই, সার ছাড়াই সফলভাবে শীতকালীন সবজি ও মশলা উৎপাদন করা যায়। অতিরিক্ত জৈব সার হিসেবে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়, বেশি উৎপাদনক্ষম হয়।

যে কোনো পানির গভীরতায় ভাসমান বেড তৈরি করা যায়। ভাসমান বেডের স্থায়িত্ব যত বেশি হবে তত বেশি দিন বেডে সবজি ও মশলা চাষ করা যাবে। এ পদ্ধতির চাষ সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে জেলা বা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বা খামার বাড়ির কৃষি তথ্য সার্ভিসে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভাসমান কৃষিতে সম্ভাবনা

আপডেট টাইম : ০৪:০২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পানির ওপর কচুরিপানা ও নানা জলজ উদ্ভিদ দিয়ে বেড তৈরি করে তাতে নানা ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব। লিখেছেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

বর্ষা মৌসুমে দেশের কিছু এলাকার বেশকিছু অংশ জলাবদ্ধ থাকে। এ জলাবদ্ধতা কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় ভরে যায়। ফলে এসব এলাকায় তখন তেমন কৃষিকাজ হয় না। তাই এসব এলাকায় অনেকেই ভাসমান পদ্ধতিতে কৃষি কার্যক্রম শুরু করেন। বিশেষ করে বিভিন্ন বিল, হাওর, নালা, খাল ও মজা পুকুরে এ ভাসমান চাষ শুরু হয়। এখন দেশের অনেক এলাকায়ই চলছে ভাসমান পদ্ধতির এ কৃষিকাজ। কেবল বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা জলাবদ্ধতা নয়, পুকুর, নদী বা খালেও এ ভাসমান পদ্ধতির চাষ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ চাষে খরচ যেমন কম, তেমনি বাড়তি সারের প্রয়োজনও হয় না।

জলজ কচুরিপানা বা অন্য উদ্ভিদ এ চাষে জৈব সারের কাজ করে। এ পদ্ধতিতে গ্রীষ্ম মৌসুমে কলমিশাক, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক, ডাঁটা, ঢেঁড়স, বরবটি, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, শসা, করলা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, পাটশাক, চালকুমড়া, পানিকচু, হলুদ ও মুখি কচু চাষ সম্ভব। আর শীত মৌসুমে পালংশাক, লালশাক, ধনেপাতা, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, ব্রোকলি, মুলা, গাজর, টমেটো, লাউ, শিম, মিষ্টিকুমড়া, আলু, মিষ্টিআলু, বেগুন, সরিষাশাক, বাঙ্গি ও স্ট্রবেরি চাষ করা সম্ভব। এছাড়াও এ পদ্ধতিতে মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন বা হলুদ চাষও সম্ভব।

মূলত পানিতে কচুরিপানা, শেওলা, জলজ আগাছা, দুলালি লতা, ধানের খড়, ফসলের অবশিষ্টাংশ, আখের ছোবড়া বা অন্য জলজ উদ্ভিদ দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে এ পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। ছোট বা বড় আকারে দুই ভাবেই বেড বানানো যায়। বর্ষার শুরুতে যখন কচুরিপানাগুলো দ্রুত বংশ বিস্তার শুরু করে সাধারণত জ্যৈষ্ঠ-শ্রাবণ, কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছা, ধানের খড়, ফসলের অবশিষ্টাংশ, শ্যাওলা প্রভৃতি স্তূপ করে ভাসমান বেড তৈরি করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। জোয়ার-ভাটা এলাকায়, মজা পুকুরে, হাওর এলাকায় সারা বছর ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি আবাদও করা যায়। মৌসুম শেষে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বেড যদি মাটির ওপর বসে যায়, তবে তা ভেঙে জমিতে বিছিয়ে কোনো প্রকার চাষ, মই, সার ছাড়াই সফলভাবে শীতকালীন সবজি ও মশলা উৎপাদন করা যায়। অতিরিক্ত জৈব সার হিসেবে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়, বেশি উৎপাদনক্ষম হয়।

যে কোনো পানির গভীরতায় ভাসমান বেড তৈরি করা যায়। ভাসমান বেডের স্থায়িত্ব যত বেশি হবে তত বেশি দিন বেডে সবজি ও মশলা চাষ করা যাবে। এ পদ্ধতির চাষ সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে জেলা বা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বা খামার বাড়ির কৃষি তথ্য সার্ভিসে।