ঢাকা ০৯:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনালী আঁশে চাষির স্বপ্নভঙ্গ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭
  • ২৯৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পাট উৎপাদন করেন চাষিরা। হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর সরকারী উদ্যোগে সাড়া দিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু কখনো কখনো স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। চলতি মৌসুমে পাটের ফলনে প্রচন্ড খুশী হন চাষিরা। আবাদ ও উৎপাদনে কোন সমস্যা হয়নি। ছিল না পাট পচানোর ঝামেলা। বাজারে পাট উঠেছে। মাঠের হাসিন হয়ে যাচ্ছে বাজারে। যা খরচ হয়েছে তা উঠছে না। বরং অনেকক্ষেত্রে লোকসান গুণতে হচ্ছে। ফলে বহুদিন পর স্বর্ণযুগ ফেরানোর স্বপ্ন পুরণ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে সোনালী আঁশে চাষিদের স্বপ্নভঙ্গ। একসময় পাটের বদলে কচু আবাদ করতেন চাষিরা। সরকারী উদ্যোগে কয়েকবছর হলো চাষিরা পাট আবাদ ও উৎপাদনে ঝুকে পড়েন। কয়েকটি মৌসুম মোটামোটি ভালো হলেও গত মৌসুম থেকে আবার সেই আগের অবস্থা শুরু হয়েছে। চাষিরা মোটেও খুশী হতে পারছেন না। এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশী জমিতে উৎপাদন করেছেন চাষিরা। ফলন হয়েছে আশানুরূপ। শুধুমাত্র পাটের বাজার তদারকির অভাবে ও বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠায় মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে গেছে।
পাটচাষি যশোরের শার্শা উপজেলার মোঃ আলম বললেন, একবিঘা জমিতে চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ সর্বসাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১২হাজার টাকা। একবিঘায় পাট হয় সাধারণত ১০ থেকে ১২মণ। বর্তমান মূল্য প্রতিমণ ১হাজার টাকা থেকে ১হাজার ২শ’ টাকা। তাতে বিঘাপ্রতি গড়ে চাষিদের লোকসানই হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষক সংগ্রাম সমিতি পাটের মূল্য প্রতিমণ সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছে । হাওর বার্তাকে কয়েকদফা রিপোর্ট করে সতর্ক করা হয়েছে যে, উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় চাষিরা। বিষয়টি আমলে নেয়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ গোলাম মারুফের উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশ হয় পাটের ফলন আশানুরুপ। মূল্যের বিষয়টি আমরা দেখি না। তবে পাট অধিদপ্তরকে বলেছি চাষিরা যাতে উপযুক্ত মূল্য পান সেদিকে খেয়াল রাখতে। কিন্তু চাষিদের দুর্ভাগ্য হলো নতুন পাট বাজারে উঠার সময় তারা উপযুক্ত মূল্য পান না। এরপরও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সারাদেশে ৭ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। উৎপাদন হচ্ছে মোট প্রায় ৮০ লাখ বেল। নতুন পাট বাজারে উঠার আগে বাজার দর ছিল প্রতিমণ ১হাজার ৪শ’টাকা থেকে ১হাজার ৬শ’টাকা। সেটি হলেও চাষিরা সামান্য লাভের মুখ দেখতো। কিন্তু এখন লোকসান হচ্ছে। এতে মন ভেঙে যাচ্ছে পাটচাষিদের। পাট ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান বললেন, পাট উঠার সময় এভাবেই দাম পড়ে যায়। বাজারে মনিটরিং থাকলে অবশ্য এই রকম হতো না। আমরা ক্ষুদে ব্যবসায়ী বড় বড় পাইকার আড়তদাররা নতুন পাটের ক্ষেত্রে এটি করে থাকেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদগণ ও চাষিসহ সংশিষ্টদের বক্তব্য, বিরাট সম্ভাবনাময় ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম কৃষির এই খাতটির দিকে সামগ্রিকভাবে নজর দেয়া হচ্ছে না। অতীতের মতো নানা অজুহাতে সহজ সরল নিরীহ চাষিদের একরকম প্রতারণা করা হচ্ছে। একে বাজারে একেক দাম পাটের। দেশের বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠ থেকে পুরাদমে নতুন পাট উঠছে বাজারে। জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চিত করা না গেলে সোনালী আঁশের ভবিষ্যত হয়ে পড়বে অন্ধকার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সোনালী আঁশে চাষির স্বপ্নভঙ্গ

আপডেট টাইম : ০১:০২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পাট উৎপাদন করেন চাষিরা। হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর সরকারী উদ্যোগে সাড়া দিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু কখনো কখনো স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। চলতি মৌসুমে পাটের ফলনে প্রচন্ড খুশী হন চাষিরা। আবাদ ও উৎপাদনে কোন সমস্যা হয়নি। ছিল না পাট পচানোর ঝামেলা। বাজারে পাট উঠেছে। মাঠের হাসিন হয়ে যাচ্ছে বাজারে। যা খরচ হয়েছে তা উঠছে না। বরং অনেকক্ষেত্রে লোকসান গুণতে হচ্ছে। ফলে বহুদিন পর স্বর্ণযুগ ফেরানোর স্বপ্ন পুরণ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে সোনালী আঁশে চাষিদের স্বপ্নভঙ্গ। একসময় পাটের বদলে কচু আবাদ করতেন চাষিরা। সরকারী উদ্যোগে কয়েকবছর হলো চাষিরা পাট আবাদ ও উৎপাদনে ঝুকে পড়েন। কয়েকটি মৌসুম মোটামোটি ভালো হলেও গত মৌসুম থেকে আবার সেই আগের অবস্থা শুরু হয়েছে। চাষিরা মোটেও খুশী হতে পারছেন না। এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশী জমিতে উৎপাদন করেছেন চাষিরা। ফলন হয়েছে আশানুরূপ। শুধুমাত্র পাটের বাজার তদারকির অভাবে ও বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠায় মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে গেছে।
পাটচাষি যশোরের শার্শা উপজেলার মোঃ আলম বললেন, একবিঘা জমিতে চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ সর্বসাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১২হাজার টাকা। একবিঘায় পাট হয় সাধারণত ১০ থেকে ১২মণ। বর্তমান মূল্য প্রতিমণ ১হাজার টাকা থেকে ১হাজার ২শ’ টাকা। তাতে বিঘাপ্রতি গড়ে চাষিদের লোকসানই হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষক সংগ্রাম সমিতি পাটের মূল্য প্রতিমণ সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছে । হাওর বার্তাকে কয়েকদফা রিপোর্ট করে সতর্ক করা হয়েছে যে, উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় চাষিরা। বিষয়টি আমলে নেয়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ গোলাম মারুফের উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশ হয় পাটের ফলন আশানুরুপ। মূল্যের বিষয়টি আমরা দেখি না। তবে পাট অধিদপ্তরকে বলেছি চাষিরা যাতে উপযুক্ত মূল্য পান সেদিকে খেয়াল রাখতে। কিন্তু চাষিদের দুর্ভাগ্য হলো নতুন পাট বাজারে উঠার সময় তারা উপযুক্ত মূল্য পান না। এরপরও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সারাদেশে ৭ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। উৎপাদন হচ্ছে মোট প্রায় ৮০ লাখ বেল। নতুন পাট বাজারে উঠার আগে বাজার দর ছিল প্রতিমণ ১হাজার ৪শ’টাকা থেকে ১হাজার ৬শ’টাকা। সেটি হলেও চাষিরা সামান্য লাভের মুখ দেখতো। কিন্তু এখন লোকসান হচ্ছে। এতে মন ভেঙে যাচ্ছে পাটচাষিদের। পাট ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান বললেন, পাট উঠার সময় এভাবেই দাম পড়ে যায়। বাজারে মনিটরিং থাকলে অবশ্য এই রকম হতো না। আমরা ক্ষুদে ব্যবসায়ী বড় বড় পাইকার আড়তদাররা নতুন পাটের ক্ষেত্রে এটি করে থাকেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদগণ ও চাষিসহ সংশিষ্টদের বক্তব্য, বিরাট সম্ভাবনাময় ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম কৃষির এই খাতটির দিকে সামগ্রিকভাবে নজর দেয়া হচ্ছে না। অতীতের মতো নানা অজুহাতে সহজ সরল নিরীহ চাষিদের একরকম প্রতারণা করা হচ্ছে। একে বাজারে একেক দাম পাটের। দেশের বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠ থেকে পুরাদমে নতুন পাট উঠছে বাজারে। জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চিত করা না গেলে সোনালী আঁশের ভবিষ্যত হয়ে পড়বে অন্ধকার।